লেজ দুলিয়ে হাঁটে পরিযায়ী হলদে-মাথা খঞ্জনা

, ফিচার

বিভোর বিশ্বাস, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট | 2023-08-31 20:40:39

জলাভূমির নির্জন দুপুর। কোনো সাড়া শব্দ নেই তেমন একটা। মাঝে মাঝে দু-একটি পাখির ডাক দূর থেকে ভেসে আসছে। এর সাথে হঠাৎ যোগ হলো একটি হলুদ-কালো রঙের এক পাখির দ্রুত আগমন। সে হঠাৎ এসে পরিবেশটাকে আরো অপূর্ব করে তুললো! উড়তে জানলেও জলাভূমির আশপাশে কাটায় বেশিভাগ সময়। ভূমি  প্রিয় পাখি নামেও তার পরিচিত রয়েছে।

সে এসেই কীটপতঙ্গ খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে গেল। মাটিতে দু-তিনটি ঠোকর দিয়েই আবার অন্যদিক চলে গেল। ঝড়াপাতাগুলো ঠোঁট দিয়ে উল্টেপাল্টে পার করতে দেখা গেল তার অনুসন্ধানী প্রহর।

এ হলুদময় পাখিটির নাম হলদে-মাথা খঞ্জনা। কেউ কেউ এ পাখিটিকে- ‘সিট্রিন খঞ্জন’ হিসেবেও উল্লেখ করে থাকেন। এরা দেখতে ভীষণ সুন্দর। স্লিম গড়ন। শীতে পরিযায়ী হয়ে আসে। প্রাকৃতিক আবাসস্থল জলাশয়ের কাছাকাছি স্যাঁতস্যাঁতে ভূমি। শিকারের উপযুক্ত স্থান জলাশয় এলাকা হলেও জলে নেমে শিকার ধরে না। তবে কখনো কখনো পায়ের পাতা ভিজিয়ে কীটপতঙ্গ খেতে দেখা যায়।

মাথা বাকিয়ে জলাভূমির পানি শরীর থেকে ঝাড়তে ব্যস্ত সে। ছবি: আবু বকর সিদ্দিক

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক বলেন, এ পরিযায়ী পাখির বাংলা নাম হলদে-মাথা খঞ্জন। ইংরেজি নাম ‘সিট্রিন ওয়াগটেইল’ (Citrine Wagtail) এবং বৈজ্ঞানিক নাম Motacilla citreola। এরা ‘সিট্রিনি খঞ্জন’ নামেও পরিচিত। দেশে প্রায় আট প্রজাতির খঞ্জন দেখা যায়। এরা পানির ধারে হেঁটে খাবার খুঁজে বেড়ায় এবং মিষ্টভাবে গান করে।

পাখিটির স্বভাব সম্পর্কে তিনি বলেন, এরা স্বভাবে চঞ্চল। সব সময় লেজ দুলিয়ে হাঁটে। এরা গ্রীষ্ম মৌসুমে তুন্দ্রার স্যাঁতস্যাঁতে তৃণভূমিতে এবং হিমবাহ ও পর্বতের জলাশয়ে এবং শীত মৌসুমে হাওর, বিলসহ অন্যান্য জলাশয়ে এক বা জোড়ায় বিচরণ করে। এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে পোকা, কীটপতঙ্গ, লার্ভা ও ছোট শামুক জাতীয় প্রাণী।

‘হলদে-মাথা খঞ্জনা’ এর প্রজনন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মে-আগস্ট মাসে প্রজনন মৌসুমে এরা তিব্বতে ঘাসের গোছা কিংবা ঝোপের পাদদেশ অথবা পাথরের আড়ালে আঁটসাঁট বাটির মতো বাসা তৈরি করে। ঘাস, শিকড়, শেওলা, পশম প্রভৃতি বাসা তৈরিতে ব্যবহার করে। প্রজনন সময় এপ্রিল থেকে জুন। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। মাঝে মাঝে এশিয়ার বিভিন্ন দেশেও ডিম-বাচ্চা তোলে। ডিম পাড়ে ৪-৫টি। ফোটে ১৩-১৫ দিনে।

দূর থেকে দেখলে এ পরিযায়ী পাখিটিকে ক্ষুদ্র মনে হয়। ছবি: আবু বকর সিদ্দিক

পাখির দৈহিক গঠন সম্পর্কে তিনি বলেন, পাখিটির দৈর্ঘ্য ১৯ সেন্টিমিটার এবং ওজন ১৮ গ্রাম। মাথা উজ্জ্বল হলুদ। ঘাড় কালো। পিঠ শ্বেত স্লেট-ধূসর। ডানার পালক জলপাই ধূসর, সঙ্গে সাদা টান। লেজ কালো। গলা ও দেহতল উজ্জ্বল হলুদ হলেও কালো ছোপ লক্ষ্য করা যায়। চোখ গাঢ় বাদামি। ঠোঁট হলদে ধূসর। পা কালো বাদামি। অন্যদিকে, স্ত্রী পাখির মাথার মধ্যখানে কালো টান, দুই পাশ হলদে। থুতনি ও গলা হলদেটে। পিঠ ধূসর। ডানায় কালো-সাদা টান।

এ পাখিটির বৈশ্বিক বিস্তৃতি দক্ষিণ এশিয়া, মধ্য এশিয়া ও পশ্চিম ইউরোপ পর্যন্ত। প্রজননকালে পুরুষ পাখিটির মাথা ও দেহতল উজ্জ্বল হলুদ এবং ঘাড়-পিঠ ঘন কালো হয়ে উঠে বলে জানান পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক।

এ সম্পর্কিত আরও খবর