দুপুরের রোদ তীব্রতা ছড়াচ্ছে দিগন্ত বিস্তৃত ধানক্ষেতে। বাঁশের ঘুটির উপর থেকে একটি পাখি হঠাৎ উড়ে এসে পোকা ধরে পুনরায় নির্দিষ্ট বসার জায়গাটিতে ফিরে যাচ্ছে। অপরটি দূরে উড়ে উড়ে যাচ্ছে আসছে।
একই স্থানে পোকার সংখ্যা বেশি হওয়ায় খাবার সংগ্রহের এ কার্যক্রম কয়েকবারের। থেমে নেই; তা চলছে বিরামহীন। এই শিকারের দৃশ্য বড়ই দৃষ্টিনন্দন। এর ফলে প্রমাণিত হয়েছে পাখিটির ফুর্তিবাজ, আমুদে এবং খেলুড়েসুলভ মনোভাবটি।
এ পাখিটির নাম ‘পাতি-আবাবিল’। ইংরেজি নাম Barn Swallow এবং বৈজ্ঞানিক নাম Hirundo rustica। তবে ‘চাতক পাখি’ নামেও এর পরিচিতি রয়েছে।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক বলেন, এরা আমাদের বিরল আবাসিক পাখি। সারাদেশেই আছে; তবে এ প্রজাতিটিকে কম দেখা যায়।
পাখিটির শারীরিক বর্ণনা সম্পর্কে তিনি বলেন, পাখিটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮ সেন্টিমিটার এবং লেজ ৭ দশমিক ৬ সেন্টিমিটার। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির তামাটে কাপালসহ পিঠ উজ্জ্বল ইস্পাত-নীল। উড়ার সময় লেজতল-ঢাকনির সাদা সাদা তিলা স্পষ্ট চোখে পড়ে। ছেলে এবং মেয়ে পাখির চেহারা অভিন্ন।
খাদ্য তালিকা সম্পর্কে তিনি বলেন, পাতি-আবাবিল মূলত ছোট আকারের পোকা-শিকারি পাখি। উড়ে বেড়ানো ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পোকা, বিটল পোকা প্রভৃতি তার টার্গেট। সাধারণত প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষিজমিতে বিচরণ করে। এরা দলবন্ধ পাখি এবং ঝাঁকবেঁধে থাকতে পছন্দ করে। উড়ন্ত পোকার খোঁজে শস্যক্ষেত কিংবা পানির উপর অবিরাম উড়ে বেড়ায়। সকালের দিকে দলবেঁধে বৈদ্যুতিক তারের উপর বসে থাকে।
উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপ, আফ্রিকা এবং পুরো এশিয়াজুড়ে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে বলে জানান প্রখ্যাত পাখি গবেষক ইনাম আল হক।