করোনা আস্ফালনে ফের বাধ্যতামূলক মাস্ক!

, ফিচার

ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 01:55:05

করোনার আস্ফালনে আবার সন্ত্রস্ত সারা বিশ্ব। দেশে দেশে ফের বাধ্যতামূলক হচ্ছে মাস্ক। কঠোর করা হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব পালনের বিষয়গুলোও।

নিউইয়র্কে মাস্কের ব্যবহার নিশ্চিত করতে আইনগত প্রক্রিয়া শুরুর কথা জানিয়েছে মার্কিন জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট। ভারতের রাজধানী দিল্লিতে ঘরের বাইরে পা দিলেই মাস্ক পরা আবার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। উল্লেখ্য, মাস্ক না পরলে ৫০০ টাকা জরিমানা করার বিধি তুলে নেওয়ার তিন সপ্তাহ পরই আবার জারি করা হল সেই নিয়ম। দিল্লি বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (ডিডিএমএ) কোভিড -১৯ আক্রান্তের সংখ্যা রোধে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চীন, কোরিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব ও দূরপ্রাচ্যের দশগুলোতে করোনার উল্লম্ফনের পটভূমিতে বাড়ানো হয়েছে বিধি-নিয়মের কঠোরতা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিল্লিতে করোনার আকস্মিক আস্ফালনের কারণ ওমিক্রন রূপ এবং এর ৯টি উপরূপ। বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) দিল্লির স্বাস্থ্য দফতরের সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের সূত্র আরও জানিয়েছে যে, আক্রান্তদের নমুনা পরীক্ষা করার পর এই নমুনাগুলিতে ওমিক্রনের বিএ.২.১২.১ রূপ-সহ আরও আটটি উপরূপের খোঁজ মিলেছে। নমুনাগুলোর জিন সজ্জার গঠন দেখার পরই এই তথ্য উঠে এসেছে বলেও জাবা গেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) ফেব্রুয়ারিতে জানিয়েছিল যে ওমিক্রনের বিএ-২ উপরূপ বিএ-১ উপ-রূপের চেয়ে বেশি সংক্রামক। যদিও এই বিষয়টি আশঙ্কার সৃষ্টি করবে না বলেও জানিয়েছিল হু। কিন্তু বাস্তবে সংক্রমণের বাড়বাড়ন্তে আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে সবার মধ্যেই।

ভারত জুড়ে করোনার সংক্রমণে স্ফীতি দেখা গেলেও সবথেকে বেশি উদ্বেগ বাড়াচ্ছে দিল্লি। গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে করোনা আক্রান্ত ২,৩৮০ জনের মধ্যে দিল্লিতেই আক্রান্ত ১,০৯৩ জন। এক দিনে দিল্লিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ। তবে নতুন করে তৈরি হওয়া এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতেও স্কুল বন্ধ করতে নারাজ দিল্লির কর্তৃপক্ষ। তারা আপাতত স্কুলগুলো খুলে রাখারই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে স্কুল খুলে রাখতে বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় শিক্ষা দফতর একটি সাধারণ কার্যপ্রণালী তৈরি করেছে, যাতে মাস্কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

এদিকে, চীনের সাংহাইয়ে করোনা পরিস্থিতি সংকটজনক হয়ে উঠেছে। দুবছর আগে উহানের থেকেও খারাপ পরিস্থিতির শিকার সাংহাই। রোজই লাফিয়ে বেড়ে চলছে সংক্রমন। শিশুদের মধ্যেও ধরা পড়েছে করোনা সংক্রমণ। সংক্রমিত শিশুদের মা, বাবা পরিবারের থেকে আলাদা আইসোলেশনে রাখার সিদ্ধান্তে ক্ষোভ বেড়েছে অভিভাবকদের মধ্যে। এর পাশাপাশি সাধারণের মধ্যে সংক্রমণ বাড়তে থাকার কারণে আইসোলেশন সেন্টারের অভাব দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে এবার শহরবাসীদের ঘর চেয়েছে প্রশাসন। আর এতে প্রবল ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। সাংহাই শহরের একাধিক আবাসিক কেন্দ্রগুলোতে আইসোলেশন তৈরির নির্দেশিকা ঘিরে বেড়েছে ক্ষোভ। আক্রান্তদের আইসোলেশনে রাখার জন্য ঘর ছাড়তে হবে বাসিন্দাদের। এই নির্দেশের পরই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে স্থানীয় মানুষ। একে করোনার দাপটে নাজেহাল তারপর সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি বিপালে ফেলেছে সাধারণ মানুষকে।

চীনে গত জানুয়ারি মাসে কোভিড বিধি ভঙ্গের জন্য ৫৯ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং ২৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ফেব্রুয়ারিতে সেই সংখ্যা ছিল অনেকটাই কম। কিন্তু মার্চে, ওয়েইবোতে ৬০০ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে সেই সঙ্গে ১৫০ জনকে আটক করা হয়েছে। চীনের ইয়ানতাই শহরের এক পড়ুয়া মিডিয়াকে বলেন, কয়েক মাস ধরে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের কোভিড -১৯ প্রতিরোধ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনা সহ প্রচার চালানোর ফলে তাকে পুলিশি হেনস্থার মুখে পড়টে হয়েছে। তাকে ইতিমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করা হয়েছে।

করোনাকালের সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে নিপতিত চীন ক্রমবর্ধমান সংক্রমণকে রুখতে মরিয়া হয়ে সাংহাইয়ের মতো শহরে জারি করেছে কড়া লকডাউন। ফলে সম্পূর্ণ গৃহবন্দি গোটা শহর। কোনও অনুমতি নেই বাইরে বেরনোর। যার ফলে খাবার, পানি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে ধুঁকছে জনজীবন। পরিস্থিতি এমনই ভয়াবহ, বাধ্য হয়ে বহু বাড়ির জানলায় দাঁড়িয়ে আর্ত চিৎকার করতে দেখা গিয়েছে অনেককে। সেই সঙ্গে সাংহাইয়ে লকডাউনের কারণে প্রবল আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি চীন।

উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে করোনার গতি পুনরায় ধেয়ে আসার পদধ্বনিতে সঙ্গরোধ, লকডাউনে স্থবির পৃথিবীর আবহ তৈরি হচ্ছে আবার। আসছে মুখোশের আড়ালে আচ্ছন্ন বিচ্ছিন্ন জীবনের সদ্য-বিগত চালচিত্র।

এ সম্পর্কিত আরও খবর