সড়ক জুড়ে জারুলের হাতছানি

, ফিচার

আছিয়া খাতুন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় | 2023-08-31 22:52:14

নবীণ বৃক্ষরাজি পুষ্পভারে আচ্ছাদিত রাস্তার দুইধার। গাঢ় বেগুনি রঙের বন্যা বয়ে যাচ্ছে সর্বত্র। গ্রীষ্মের প্রখর উত্তাপের মাঝেও চারদিকে প্রশান্তি ছড়িয়ে দিচ্ছে মায়াবী কুহক। হালকা নিলুয়া বাতাসে সবুজ পাতার ফাঁক গলিয়ে মাথা তুলেছে বেগুনি পাপড়ি। যার দৃষ্টিনন্দন বর্ণচ্ছটা রঙে মায়াবী চোখে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। বলছিলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জারুল স্ট্রিটের কথা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোড থেকে পশ্চিমপাড়া যাওয়ার রাস্তাকে অনেকেই বলেন জারুল স্ট্রিট। এই রাস্তার দুইধারে রয়েছে সারি সারি জারুল গাছ। গ্রীষ্মের শুরুতেই এসব গাছে মোহময়তা নিয়ে মুগ্ধতা ছড়িয়ে দিচ্ছে জারুল ফুল। যার বেগুনি রঙের আভা পথিকের চোখে এনে দিচ্ছে শিল্পর দ্যোতনা। বিশ্ববিদ্যালয়কে সাজিয়ে তুলেছে নতুন সাজে।

ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম খালেদা জিয়া হলের দক্ষিণ দিকের রাস্তার ধারে সবুজ পাতার ক্যানভাসে বেগুনি জারুল ফুটিয়ে তুলেছে হাস্যোজ্জ্বল প্রকৃতি। রং আর রূপের বাহার ছড়ানো অপরূপ বর্ণিল সাজের এই ফুল সাজিয়েছে সৌন্দর্যের ডালি। কাজী নজরুল ইসলাম মিলতায়তনের সামনে, বিজ্ঞান ভবনের সামনে, টিএসসিসির পাশে, চারুকলা অনুষদের রেললাইনের পাশের রাস্তা, বোটানিক্যাল গার্ডেন, বাসস্ট্যান্ড, বিভিন্ন আবাসিক হলের সামনে, বধ্যভূমিসহ ক্যাম্পাস সজ্জিত হয়েছে জারুলের ঝুমকোতে। ফুলে ফুলে সৃষ্টি করেছে অপরূপ নান্দনিকতার। যোগ করেছে নতুন সৌন্দর্যের মাত্রা।

জারুলকে বলা হয় বাংলার চেরি। গ্রীষ্মে অপূর্ব হয়ে ফোটে এই ফুল। চোখ ভরে যায় তার রূপ দেখে। প্রয়াত সঙ্গীত শিল্পী এন্ড্রু কিশোর তার গানে বলেছেন ‘ওগো বিদেশিনী, তোমার চেরি ফুল দাও, আমার শিউলি নাও, এসো দুজনে প্রেমে হই ঋণী।’ সেই গান শুনে হয়তো কোন এক কাল্পনিক বিদেশিনীকে শিউলি ফুল দেওয়ার জন্য কত খুঁজেছে, কিন্তু পায়নি। যেমনটি পায়নি চেরি ফুলের দেখাও। সে আকাঙক্ষা পূরণ করতে পারে বাংলার চেরি জারুল ফুল। জারুল নিয়ে রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ লিখেছেন, ‘ভিজে হয়ে আসে মেঘ এক দুপুর চিল একা নদীটির পাশে। জারুল গাছের ডালে বসে চেয়ে থাকে উপরের দিকে।’

উদ্ভীদ বিজ্ঞানীরা বলছেন, জারুলের আদি নিবাস শ্রীলঙ্কায় হলেও এটি ভারতীয় উপমহাদেশের নিজস্ব বৃক্ষ। বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও চীন, মালয়েশিয়া প্রভৃতি অঞ্চলে জারুলগাছের দেখা মেলে। জারুল ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম (Lagerstroemia speciosa) লেজারস্ট্রমিয়া স্পেসিওসা এবং ইংরেজি নাম (Giant Crape-myrtle) জায়ান্ত ক্রেপ মার্টেল। জারুলগাছ সাধারণত ১০ থেকে ১৫ মিটার উঁচু হয়ে থাকে। গ্রীষ্মের শুরুতেই এর ফুল ফোটে এবং শরৎ পর্যন্ত দেখা যায়। ফুল শেষে গাছে বীজ হয়। বীজ দেখতে গোলাকার। জারুল বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে। বাংলাদেশে সাধারণত নীলাভ ও গোলাপি এই দুই রঙের জারুল ফুল দেখা যায়। জারুলগাছের বীজ, ছাল ও পাতা ডায়াবেটিস রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এ ছাড়া জ্বর, অনিদ্রা, কাশি ও অজীর্ণতার চিকিৎসায়ও জারুল যথার্থ উপকারী।

জারুল ফুলের এমন মনকাড়া সৌন্দর্যে মুগ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। কেউ মুগ্ধ হয়ে স্থিরচিত্র ধারণ করে তা শেয়ার করছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ঝড়ো বাতাসে ক্ষণে ক্ষণেই ঝরে পড়ছে জারুল ফুল। আর সেগুলো রাস্তার উপর সৃষ্টি করেছে বেগুনি গালিচার। দেখলে মনে হয় কোনো অতিথিকে বরণের জন্য সাজানো হয়েছে। ক্যাম্পাসে এখন কৃষ্ণচূড়ার লাল রঙের সঙ্গে একক রাজত্ব করছে বেগুনি জারুল।

জারুলের বেগুনি রঙে বিমোহিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী হাচনাইন মোস্তফা। তিনি বলেন, আমাদের ক্যাম্পাসে সব ঋতুতেই কোনো না কোনো ফুল ফোটে। এসব ফুলের রঙ, গন্ধ আলাদা। তবে গ্রীষ্মের ফুলের মধ্যে জারুল অন্যতম। এর নজরকাড়া বেগুনি রঙ বিমোহিত করে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর