পৃথিবীব্যাপী ‘মহাবিপন্ন পরিযায়ী’ পাখি চামচঠোঁটো-বাটান

, ফিচার

বিভোর, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট | 2023-08-30 17:09:17

কালো রঙে চামচের মতো ঠোটঁকেন্দ্রীক পাখি ‘চামচঠোঁটো-বাটান’। এই পাখিটি সারা পৃথিবীজুড়ে আজ মহাবিপন্ন। বাসস্থান, খাদ্য এবং প্রজনন সংকটের কারণে বিপন্ন হয়ে পড়েছে তাদের অস্তিত্ব। এদের ইংরেজি নাম Spoone-billed Sandpiper এবং বৈজ্ঞানিক নাম Calidris pygmaea।

আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) এই পাখিটিকে পৃথিবীব্যাপী ‘মহাবিপন্ন’ বলে লাল-তালিকাভুক্ত করেছে। চামচের মতো ঠোঁট বলে পাখিটির নাম চামচকেন্দ্রীক। ইংরেজ এবং বাংলা দুটো নামেই ‘চামচ’ শব্দটা জুড়ে দেয়া আছে। শীত পরিযায়ী এ পাখিটির উচ্চতা ১৬ সেন্টিমিটার। আকারে চড়ুইয়ের মতো।

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক বলেন, “চামচঠোঁটো-বাটান পাখিগুলো আমাদের দেশে শীত পরিযায়ী। তবে এরা পৃথিবীব্যাপী মহাবিপন্ন তালিকাভুক্ত পাখি। শীত শেষে চামচঠোঁটো-বাটানগুলো চলে যায় উত্তরপূর্ব রাশিয়ার ‘কামচাটকা’ বলে একটা জায়গা আছে সেখানে। সবাই সাইবেরিয়া হিসেবেই চিনে; কিন্তু আসলে সাইবেরিয়ার সেই জায়গাটি হলো তুন্দ্রা। অর্থাৎ যেখানে বরফ চলে যাওয়ার পরেও কোন গাছপালা হয় না। তবে ছোটছোট ঝোপঝাড় বা গুল্ম জন্মে থাকে।’

চামচঠোঁটো-বাটানের কৃত্রিম প্রজনন সম্পর্কে ইনাম আল হক বলেন, ‘গ্রীষ্মে এরা ডিম পাড়ে। আমরা তো তাদের প্রজাতিগুলোকে সংরক্ষণ করার উদ্দেশ্যে তাদের ডিমগুলো কয়েকবার চুরি করে এনেছিল। আন্তর্জাতিকভাবে একটা উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল ডিম সংগ্রহের মাধ্যমে তাদের প্রজাতিগুলো সংরক্ষণে। তারা চারটে ডিম পাড়ে; চারটের মধ্যে থেকে দুটো সরিয়ে নিলে আরো দুটো পাড়ে। দুটো করে করে সবার কাছ থেকে ডিমগুলো সরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছিল। তারপর ইনকিউবেটারে সেই ডিমগুলো রেখে ফুটিয়ে বাচ্চা বড় করে আবার প্রকৃতিতে ছেড়ে কিছু সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা নেয়া হয়েছিল। প্রায় ৪০টার মতো ‘চামচঠোঁটো-বাটান’ এর বাচ্চাকে বড় করে তারপর প্রকৃতিতে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল।’

তিনি আরো বলেন, ‘সাইবেরিয়ার ওই জায়গায় সহজে যাওয়া যায় না। অনেক দুর্গম এলাকা। এখানে কোনো প্রকার বসতি নেই; কোনো যানবাহনও চলাচল করে না। শুধু রাশিয়ার মিলিটারী ট্যাঙ্কগুলোতে চড়েই যেতে হয়। আর ওইখান থেকে চামচঠোঁটো-বাটানের ডিম চুরি করে আনা হয়েছিল। কোটি কোটি টাকার প্রকল্প ছিল এটি; গত দশ বছর ধরে এই কাজটি করা হয়েছে। এর ফলেই কিন্তু এদের সংখ্যা বর্তমানে কিছুটা বেশি দেখা যাচ্ছে।’

সারাপৃথিবীতে মাত্র ৩০০ থেকে ৪০০ ‘চামচঠোঁটো-বাটান’ পাখি টিকে আছে। ওরা কাঁদাপানির থেকে একেবারে ছোট ছোট কাকড়া খুঁজে নিয়ে খায়। এই কাঁকড়াগুলো অনেক পিঁপড়ার মতো। এই একটি খাবার ছাড়া বাকি খাবারের কথা আমাদের জানাও নেই। এই পাখিটির উপর পৃথিবীব্যাপী আমাদের গবেষণা চলছে বলে জানান পাখি গবেষক ইনাম আল হক।

বাংলাদেশে জরিপ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এখন আমরা প্রতি বছর মায়ানমারে গিয়ে এই পাখিটির উপর জরিপ করে থাকি। এ ছাড়াও আমরা প্রতি মাসে বাংলাদেশের সোনাদিয়া উপকূলে এই পাখিটির উপর পাখিশুমারি অনুষ্ঠিত হয়। আমরা এই জরিপের তথ্যগুলো সংরক্ষণ করে রাখি পাখির গবেষণা কাজের লক্ষ্যে। তবে প্রতি মাসে তো ওরা থাকে না। তারপরও একটি-দুটো যদি থাকে। কারণ গ্রীষ্মে ওদের দু-একটা যায় না; আমাদের দেশে থেকে যায়। কিন্তু থাইল্যান্ডে দেখা গেছে- যে ওরা পরিজায়ন করে না।’

যে পাখিটি পৃথিবী থেকে হঠাৎ করে কমে যায়, তার উপরই আমাদের গবেষণাগুলো চলছে থাকে পৃথিবীব্যাপী। কয়েক বছর আগে আমরা আমাদের দেশে শীত মৌসুমে এই পরিযায়ী ‘চামচঠোঁটো-বাটান’ এর সংখ্যা সর্ব্বোচ্চ সংখ্যা পেয়েছিলাম ৪৫টি। দু বছর আগে সর্বশেষ ২০-২২টি উপর আর পাইনি বলে জানান পাখি বিজ্ঞানী ইনাম আল হক।

এ সম্পর্কিত আরও খবর