একপ্রাপ্ত থেকে আরেক প্রান্তে দীর্ঘ পরিযানের পথ। এর ফলেই অনেক শকুন অসুস্থ হয়ে হারায় উড়ার শক্তি। মাটিতে পড়া এই বিশাল আকৃতির পাখিটাকে দেখে ভয় পেয়ে যায় অনেকেই। ঠিক তখনই ভয়ে ভীত মানুষেরা বা অতি উৎসাহী এলাকাবাসীর আঘাতে এসব শকুনদের অসুস্থ হওয়াসহ প্রাণ হারানোর ঘটনাও ঘটে ব্যাপক।
পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের দেশগুলো থেকে নিরাপত্তা ও খাদ্যের লোভে যেসব পরিযায়ী পাখিরা পরিযান করে থাকে তাদের মধ্যে অন্যতম ‘হিমালয়ী গৃধিনী’ (Himalayan Griffon Vulture)। প্রতি বছর শীতকালে এই শকুনগুলো মাইগ্রেট বা পরিযায়ন করে বাংলাদেশের সমতল ভূমিগুলোতে চলে আসে।
কিন্তু দীর্ঘ ভ্রমণক্লান্তিতে তারা আমাদের দেশে এসে অনেক সময় উড়তে পাড়ে না। মাটিতে পড়ে যায়। তখন গ্রামাঞ্চলের মানুষেরা অনেক সময় অতি উৎসুক হয়ে অথবা ভয়ে সেই হিমালয় গৃধিনী শকুনদের মেরে ফেলে।
শকুন গবেষণা প্রকল্পের মুখ্য গবেষক সীমান্ত দীপু বলেন, আমরা কয়েক বছর আগে সিলেট অঞ্চলেও পেয়েছিলাম এমন অসুস্থ হিমালয়ী গৃধিনী শকুনদের। আমরা এগারোটা অসুস্থ শকুনদের সুস্থ করে প্রকৃতিতে ছেড়েছি। আমাদের ক্যাপভিট সেন্টারে গড়ে বিশ থেকে ত্রিশটা শকুন খাওয়াই-দাওয়াই, ট্রিটমেন্ট দিই, পরিচর্যা করে প্রকৃতিতে ছেড়ে দেই।
তিনি আরও বলেন, গত পাঁচ-ছয় বছরে আমরা প্রায় শতাধিক শুকুন সুস্থ করে ছেড়েছি। আগে যখন আমরা হিমালয়ী গৃধিনী শকুনদের নিয়ে কাজ করতাম না তখন কি পরিমাণ শকুন মারা পড়তো। প্রতি বছর শীত মৌসুমে গড়ে প্রায় ৫০টা শকুন বাংলাদেশের মাটিতে পড়ে।
তাদের খাবারের অভাব সম্পর্কে এ গবেষক বলেন, এরা সুদূর হিমালয়ের এরিয়া থেকে আসে। এরা অনেক অনেক দূর জার্নি করে এসে খাবার পায় না। খাবারের অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ইংরেজিতে একে বলে ‘সর্টেজ অফ ফুড’ অর্থাৎ খাদ্যের সংকট। অনেক দূর জার্নি করার ফলে তাদের খাবারের প্রয়োজন পড়ে; এই জিনিসটা সঙ্গে সঙ্গে ওরা পায় না। তখন খুব দুর্বল হয়ে যায় এবং উড়তে পারে না। গ্রামের উৎসুক মানুষ এমন অবস্থায় শকুনদের বেঁধে রাখে, আহত করে বা পিটিয়ে মেরে ফেলে। কারো কারো পালক ওঠে যায়, কারো কারো পাখা ভাঙে, কারো কারো আবার পা ভাঙে। তখন আমারা এসব অসুস্থ শকুনদের উদ্ধার করে নিয়ে আসি।
শকুন গবেষণা প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, হিমালয়ী গৃধিনী পরিচর্যার জন্য দিনাজপুরের সিংড়াতে একটি রেসকিউ সেন্টার তৈরি করেছে বনবিভাগ ও আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন)।
এ জাতের পাখি দেশের যেকোন জায়গায় আটকা পড়লে দ্রুত স্থানীয় বন বিভাগ বা আইইউসিএন দলকে জানান। এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতা কামনা করছি এবং সবার সহযোগিতায় পেলে এবছরও হিমালয়ী গৃধিনী শকুনগুলোকে প্রকৃতিতে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে বলে জানান শকুন গবেষণা প্রকল্পের মুখ্য গবেষক সীমান্ত দীপু।