সুন্দরী’কে দেখার পর

, ফিচার

বিভোর বিশ্বাস, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট | 2023-08-31 18:36:14

জীবন দারুণ বৈচিত্র্যময়। সম্ভাবনার বীজ তাতে নিহিত হয়ে থাকে। অবশ্য, কোনো কোনো জীবন আবার নানাভাবে দুর্বিসহ! সেসব ‘ঋণাত্মক’ দিকে আমাদের অভিযাত্রা নাইবা হলো।

সেসব প্রাণপূর্ণ জীবনে একটা চাওয়া থাকে। গোপন চাওয়া। সেই চাওয়াটা শুধুই মনই জানে। অনুভূতির বিবেচনায় রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন- ‘তুমি যে কত মনোহর, মনই তাহা জানে।’ এইটুকুতেই বুঝা যায় মন কতটা গুরুত্ববহ। কতটা প্রাণপূর্ণ।

প্রিয় পাঠক, অনুমান করুন তো - সেসব মননির্ভর প্রেক্ষাপটে তবে গোপন চাওয়াটি কী হতে পারে? কারো কাছে বিস্ময়! কারো কাছে সরলতাময়। আবার কারো কাছে দীর্ঘজটিল। একদম সোজাসাপ্টাভাবে বলতে গেলে বলতে হয়- প্রেম সবার জীবনেরই কোনো না কোনোভাবে আসে। আর প্রেম মানেই হৃদয়ে চিরসুন্দরের আবাহন। যা নিয়তই ভালোলাগে।


প্রেমের সাথে ‘সুন্দর’ বা ‘সুন্দরী’র একটা দারুণ মিল আছে। পুংলিঙ্গের পথিকেরা প্রেমের পথে হেঁটে সুন্দরীর খোঁজ করেন। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্ত্রীলিঙ্গের প্রতিনিধিরাও সুন্দর পুরুষের দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হন বারবার। যা-ই হোক, এতো গৌড়চন্দ্রিকার এটাই উদ্দেশ্য। তা হলো- সুন্দর বা সুন্দরীর পক্ষে দ্বিধাহীন অবস্থান।

পাখিরাজ্যে ‘সুন্দরী পাখি’ বলে একটি বিশেষ পাখি আছে। এই পাখির অপর নামগুলো রয়েছে। দেহে তার অপূর্ব সৌন্দর্যগড়নে রাঙা। দেহের দিকে তাকালেই দারুণ সৌন্দর্যের আভায় হৃদয় জুড়ায়। জলাভূমির এদিক-ওদিক সে চষে বেড়ায়। এরা জলাভূমির পাখি। এরা আমাদের দেশীয় জলচর পাখি। স্বভাবে বুনো হলেও পোষ মানে। মুক্ত অবস্থায় পাখিগুলো দলবদ্ধভাবে বিচরণ করে। জলের ছোঁয়ায় এ পাখির রূপের ঝলক আরো বেড়ে যায়।

এই সুন্দরীকে দেখার পর – অন্যদিকে, মানে অন্যপাখিদের দিকে চোখ আর তাকিয়ে থাকে না। এটোটাই তার দেহরূপী সৌন্দর্যক্ষমতা! এরা আবহমান বাংলার এক জলচর পাখি। এই পাখি খুবই দুঃসাহসী, লড়াকু ও মারকুটে স্বভাবের। তবে এদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, একবার পোষ মানলে আর উড়ে যায় না। এরা জল এবং ডাঙ্গা দুই জায়গায়ই থাকে।


সাধারণত ১০টি থেকে ৫০টি বা কখনো আরো বেশি সংখ্যক পাখির দলে দেখা যায়। তবে প্রজনন মৌসুমে জোড়ায় জোড়ায় অথবা ছোট দলে বিচরণ করে। এসব দলে বেশ কয়েকটি প্রজননক্ষম পুরুষ ও স্ত্রী সদস্য থাকে। এসব দলে অপ্রাপ্তবয়স্ক সুন্দরী পাখিও থাকে।

বর্ষাকালই এদের প্রজনন ঋতু। ‘জোড়’ না মিললে বা ভালো সঙ্গী না পেলে এরা ডিম পাড়ে না। স্ত্রী পাখির মন জয় করে তবেই পুরুষ পাখিকে মিলনে যেতে হয়। আর স্ত্রী পাখির মন জয় করার জন্য পুরুষ পাখিটিকে শারীরিক কসরত দেখাতে হয়।

এ পাখিটি আকার মুরগির মতো। বেগুনি, নীল, সবুজ রঙের একটি পাখি। এর ইংরেজি নাম Purple Swamphen এবং বৈজ্ঞানিক নাম Porphprio porphyrio. অঞ্চলভেদে এই পাখির অন্যান্য নাম - কালেম, কালিম, কাম পাখি, কামিয়া পাখি ইত্যাদি।

এদের দৈর্ঘ্য ৪৫ সেমি। ডানা ২৬ সেমি। ঠোঁট ৪.৫ সেমি। পা ১৯ সেমি। লেজ ১০ সেমি। এদের ওজন ৬৫০ গ্রাম। জলজ সাপ, গিরগিটি, ছোট পাখি, পাখির ছানা, ডিম, মৃত দেহাবশেষ ইত্যাদি এদের খাবার। খাবার খাওয়ার সময় এরা লেজের নিচে সাদা অংশ প্রদর্শন করে এবং চাক চাক শব্দ করে ডাকে।

ভোরে ও সন্ধ্যায় সুন্দরী পাখির ডাকাডাকি ও গতিবিধি বেড়ে যায়। অন্যসব জলচর পাখির সাথে মিলে এরাও খাবার খুঁজে বেড়ায়। সুন্দরীরা উড়তে পছন্দ করে না। তবে উড়ে অনেক দূর পর্যন্ত যেতে সক্ষম। মাঝারি আকারের দৃষ্টিনন্দন এই জলজ পাখিরা খুব ভাল সাঁতার জানে। এতো ভালো যে, এক ডুবে উধাও! সুন্দরীকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না!

এ সম্পর্কিত আরও খবর