ট্রিপ টু শ্রীলঙ্কা-২: সিগিরিয়া

, ফিচার

আশরাফুজ্জামান উজ্জ্বল | 2023-09-01 04:33:13

দিনের দ্বিতীয় প্রহরে আমরা সিগিরিয়া পাহাড়ের পাদদেশে পৌঁছুলাম। এই সকালেই মাথার ওপর কাঠফাটা রোদ। ভ্যাপসা গরমে শরীর ঘেমে একাকার। বনের ফাঁকে রাস্তা। পাহাড়ের দিকে এগুনো শুরু করতেই গাইড সুদেশ থামতে বললেন। দুপাশের খাল দেখিয়ে বললেন, এই খাল হ্রদের সঙ্গে সংযুক্ত। আমরা যে পাহাড়ে চড়তে যাচ্ছি, তার পাদদেশের বাগানে এই খাল থেকে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা আছে। এই খাল অন্যতম সেরা নগর পরিকল্পনার নমুনা।

সিগিরিয়া রকের পথে বাংলাদেশ ট্রাভেল রাইটার্স এসোসিয়েশন দল। ছবি: জাকারিয়া মন্ডল

সিগিরিয়া রক কম্পাউন্ডে প্রবেশমূল্য ৩০ মার্কিন ডলার। তবে শ্রীলঙ্কানদের জন্য মাত্র ৫০ শ্রীলঙ্কান রুপি। আর সার্কভুক্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশিদের দিতে হয় চার হাজার রুপি। আমরা অবশ্য শ্রীলঙ্কান সরকারের আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বিনা পয়সায় ঢোকার সুযোগ পাই। শ্রীলঙ্কায় ঘুরতে আসা বাংলাদেশি সলো ট্রাভেলার ওয়ার্দা সাইয়েদার সঙ্গে সিগিরিয়ায় ঢোকার মুখে দেখা হয়ে যায়।

লায়ন রকে সিংহের থাবা। ছবি: আবির আবদুল্লাহ

একটু পরই সুদেশের কথার সত্যতা পাই। পাহাড়ের পাদদেশে পরিখা বেষ্টিত সুন্দর বাগান। ১৯৮২ সালে দুর্গ পাহাড়টিকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। প্রতিদিন দেড় থেকে দুহাজার পর‌্যটক এ পাহাড় দেখতে আসে। এ পাহাড়ের সিঁড়িগুলো অনেকটাই খাড়া। ১২০০ পাহাড়ি সিঁড়ি বেয়ে তবেই ওঠা যাবে পাহাড়ি দুর্গের ২০০ মিটার উঁচু চূড়ায়। তাই চূড়ায় উঠতে হলে শারীরিকভাবে সক্ষম হতে হবে। সময় লাগবে পৌনে এক থেকে এক ঘণ্টা।

পাহাড়টির মাঝামাঝিতে একটি চত্বর। সেখানে চূড়ায় ওঠার সিংহ দরোজা। সিংহের থাবা দুটি এখনও স্পষ্ট। তবে দুঃখজনক হলো, পাহাড়ের চূড়ায় সিংহের মাথাটি আর বুঝা যায় না। পাহাড়ের গায়ে ঝুলে থাকা সিঁড়ি বেয়ে চূড়ায় ওঠার ব্যবস্থা। উপর থেকে চারিদিকে যতো দূর চোখ যায়, শুধু সবুজ আর সবুজ।

ড্রোন শটে সিগিরিয়া রকের টপ ভিউ। ছবি: আজিম খান রনি

কিংবদন্তির কাহিনীতে, রাজা কাশ্যপ সিগিরিয়াকে শ্রীলঙ্কার রাজধানী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। তার পিতা রাজা ধাতুসেনাকে হত্যার পর তিনি পাথরের ওপর একটি বাগান এবং একটি অপ্রতিরোধ্য প্রাসাদ তৈরি করেছিলেন। রাজা কাশ্যপের মৃত্যুর পর রাজধানী ও রাজপ্রাসাদ পরিত্যক্ত হয় এবং চতুর্দশ শতাব্দী পর্যন্ত এটি একটি বৌদ্ধমঠ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

সিগিরিয়া রকের চূড়ায় এক ট্যুরিস্ট। ছবি: আবির আবদুল্লাহ

রাজা কাশ্যপ একটি আয়নাপ্রাচীর তৈরি করেছিলেন, যা এতটাই পলিশ করা হয়েছিল যে, তিনি হাঁটার সময় এতে তার প্রতিফলন দেখতে পেতেন। সেই আয়না প্রাচীরের উপরে যে গুহাটা রয়েছে, সেখানে অনেক নারীর ছবি আঁকা। নিচের আয়না প্রাচীরে ওসব নারীর ছবি প্রতিফলিত হতো। রাজা সে অনুযায়ী সঙ্গী বেছে নিতেন। গুহার দেয়ালে আঁকা গ্রাফিতিতে সিংহলি ভাষা ও লিপির বিকাশ ঐতিহাসিকদের কাছে অত্যন্ত আগ্রহের বিষয়।

বলা হয়ে থাকে, সিগিরিয়া একটি প্রাচীন পাথরের দুর্গ। এই মেগালিথিক শিলাটি একটি বিলুপ্ত আগ্নেয়গিরির রেখে যাওয়া শক্ত ম্যাগমা প্লেট দ্বারা গঠিত।

সিগিরিয়া রকে ওঠার পথে একটু জিরিয়ে নিচ্ছেন লেখক। ছবি: জাকারিয়া মন্ডল

সিগিরিয়া বা লায়ন বক কলম্বো থেকে তিন ঘণ্টার পথ। বিশাল স্মৃতিস্তম্ভটি খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দির।

সিগিরিয়া শ্রীলঙ্কার শুষ্ক অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। এখানে বছরের অধিকাংশ সময়ই গরম থাকে। তাই পর্যটকদের সব সময় পানি সঙ্গে রাখা উচিত। আর বিকেলের দিকে যেতে পারলে সবচেয়ে ভালো।

সিগিরিয়া রকে ওঠার সিঁড়ির একাংশ। ছবি: আবির আবদুল্লাহ

সিগিরিয়ার আশেপাশে পামগাছের সারিবদ্ধ রাস্তা, জঙ্গলে ছাওয়া সমতলভূমি, লাল পাথরের চূড়া, চকচকে নীল হ্রদ ও বুনোর হাতির পাল অন্যতম আকর্ষণ। এখান থেকে ডাম্বুলা শহর খুব বেশী দূরে নয়। রাতযাপনের জন্য রয়েছে বিভিন্ন দামের ও মানের হোটেল। পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর হোটেল হেরিটেজ কান্ডালামাও সিগিরিয়ার কাছে।

আশরাফুজ্জামান উজ্জ্বল: সভাপতি, বাংলাদেশ ট্রাভেল রাইটার্স এসোসিয়েশন

এ সম্পর্কিত আরও খবর