পাখিরা কেন ‘পরিযান’ করে -এর সঠিক কারণ এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে বিজ্ঞানীরা কিছু তত্ত্ব উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছেন। অনেক গবেষক বিভিন্ন ধরনের উপাত্ত আবিষ্কার করেছেন। যে কারণই থাকুক না কেন শীত আসলে পাখিরা আসবেই -এটাই নিয়ম। প্রধানত শীতের হাত থেকে বাঁচতেই পাখিরা পরিযান করে। পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের দেশগুলো অর্থাৎ সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, রাশিয়াসহ অন্যান্য অঞ্চলে শীত যখন জেঁকে বসে তখনই পাখিরা পরিযান করে উষ্ণ এলাকার দিকে চলে আসে।
আবার উষ্ণ এলাকায় গরম পড়ার আগেই তারা ফিরে যায় উত্তরের দিকে। শীত আসতে না আসতেই সুদূর তিব্বত, মালয়, সাইবেরিয়া, লাইবেরিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা ও অষ্ট্রেলিয়া থেকে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে আমাদের এই চির সবুজের দেশে এরা আসে।
এরা আসলে ‘পরিযায়ী পাখি’ (মাইগ্রেটরি বার্ড)। মানুষের বেঁধে দেয়া সীমানা ডিঙিয়ে পাখিরা ছড়িয়ে পড়ে। গোটা পৃথিবী যেন তাদের এক দেশ, এক ঘর এখানে কোন বন্ধন নেই। পাখিরা আসে মনের সুখে। এক দেশ থেকে অন্য দেশে যেতে তাদের তো আর অনুমতি লাগে না।
প্রকৃতি তখন তাদের আগমনের প্রত্যাশায় প্রহর গুণতে থাকে। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখিদের দেখে কে না মুগ্ধ হয়। কত বাহারি রঙের পাখি! বাংলার নদ-নদী বিল-ঝিল হাওর-বাওর পাখিদের যে খুব চেনা-জানা, কতই না ভালবাসার অনুভূতি প্রকাশ করে কলকাকলিতে। হাওর-বাওর, বিল-ঝিল, জলাশয়ে যেন উৎসব লেগে যায়। চার ধারের নিস্তব্ধতাকে ভেঙে দিয়ে মধুর কাকলিতে পাখিরা মুখর করে তুলে। পাখিরা ভেসে বেড়ায় পানির উপরে আর দোল খেতে থাকে ঢেউয়ের তালে তালে। কী অপরূপ দৃশ্য!
প্রতিবছর ঠিক একই সময়ে গৃহ থেকে যাত্রা শুরু করে আবার ভ্রমণ শেষে একই স্থানে একই দিনে ফিরে আসে। ব্যাপারটি বিজ্ঞানীদের ভাবিয়েছে যুগের পর যুগ। কীভাবে ঘটে প্রক্রিয়াটি। বছরের ঠিক কোন সময়ে দেশান্তরে যেতে হবে, আবার ঠিক কখন ফিরতে হবে। তা তারা বুঝে কীভাবে? আকাশের বুকে পাথটাই বা চিনে রাখে কেমন করে! বিস্ময়ের অন্ত নেই।
আকাশ পথে তাদের গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৬০ মাইল। তখন এই চর্বি খাদ্য হিসেবে কাজ করে। তারা এক নাগাড়ে ৯০ থেকে ১২০ ঘন্টা পর্যন্ত ওড়ে। বিজ্ঞানীরা রাডার যন্ত্রে দেখেছেন পাখিরা দেশান্তর হয় আকাশের ৫ হাজার ফুট থেকে ১০ হাজার এমনকি ১৫ হাজার ফুট উঁচু দিয়ে।
শীতে আমাদের দেশে যে সমস্ত পরিযায়ী পাখিরা আসে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: লেঞ্জা হাঁস, টিকি হাঁস, পিয়াং হাঁস, সিঁথি হাঁস, খুস্তে হাঁস, রাজ সরালি হাঁস, নাকটা, চখাচখি, বালি হাঁস, মেটে হাঁস, বাঙ্গি হাঁস, গিরিয়া হাঁস প্রভৃতিসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি রয়েছে। এরা উড়ে এসে আশ্রয় গ্রহণ করে টাঙ্গুয়ার হাওর, হাকালুকির হাওর, বাইক্কা বিল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় জলাশয়, ছোট-বড় নদীর মোহনায় ইত্যাদি স্থানে।