সম্প্রতি প্রাণ হারিয়েছে ১৩টি মহাবিপন্ন বাংলা শকুন (White-ramped Vulture)। তবে এদের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি। বিষক্রিয়াজনিত কারণে এদের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলে সংশ্লিষ্ট প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ দাবি করেছে।
প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) সকালে সদর উপজেলার একাটুনা ইউনিয়নের কালারবাজারের কাছে বড়কাপন গ্রামের বুড়িকোনা বিল থেকে বনবিভাগের কর্মকর্তারা ১০টি মৃত শকুন উদ্ধার করেন। পরে সেদিন দুপুরে সেখান থেকে আরও ৩টি মৃত শকুন উদ্ধার করা হয়।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) এর সর্বশেষ ২০১৪ সালে জরিপ অনুযায়ী, দেশে ২৬০টি শকুন ছিল। এর মধ্যে সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে ছিল ৮০টি। এই ১৩টি শকুনের মৃত্যুর পর সংখ্যাটি আরও কমে গেল।
মৌলভীবাজার জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুস ছামাদ বলেন, ‘মৃত ১০টি শকুন আইইউসিএন কর্মকর্তারা বস্তায় করে আমাদের কাছে নিয়ে আসেন। এগুলো ১০-১২ দিন আগে মরেছে বলে ধারণা করছি। সব পচে-গলে গেছে। শকুনগুলোর মৃত্যুর কারণ জানতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সিলেট ল্যাবরেটরিতে পাঠিয়েছি। ধারণা করছি, মৃত গরু, ছাগল, কুকুর বা শিয়ালের মাংশ খেয়ে শকুনগুলো মারা যেতে পারে। অনেক সময় গরুর চিকিৎসায় নিষিদ্ধ ডাইক্লোফেনাক জাতীয় ইনজেকশন ব্যবহার করা হয় এবং কুকুর-শিয়াল নিধনে গ্রামগঞ্জে বিষ জাতীয় পদার্থ ব্যবহৃত হয়। এই প্রাণীগুলোর কোনোটি মারা যাওয়ার পর তার মাংস শকুন ভক্ষণ করলে তারাও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারে।’
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) শ্যামল কুমার মিত্র বলেন, ‘মহাবিপন্ন বাংলা শকুন এক সঙ্গে এতগুলো মারা যাওয়ার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে ব্যাপক খোঁজাখুজির পর আরো তিনটি শকুন মৃত অবস্থায় পেয়ে উদ্ধার করেছি। এর আগে ১০টি মৃত শকুন আইইউসিএনের কর্মীরা সিলেটে নিয়ে গেছেন। অর্থাৎ মোট ১৩টি শকুন বা তার বেশি মারা গেছে।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, বিষক্রিয়ায় শকুনগুলো মারা গেছে। এই শকুনগুলোর মৃত্যুর ব্যাপারে স্থানীয় কেউই তথ্য দিয়ে আমাদের সহায়তা করেনি। তবে এই শিশু আমাদের জানিয়েছে এই এলাকায় শিয়াল একাধিক ছাগল খেলে ফেলায় মৃতছাগলের পরিত্যক্ত মংশে বিষ মিশিয়ে দেয়া হয় শিয়ালদের মারার জন্য। সেই বিষ থেকে শকুনগুলো মারা যেতে পারে বলেও আমাদের ধারণা। তবে সিলেট ল্যাব থেকে রিপোর্ট পেলে শকুনগুলোর মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।
এ ব্যাপারে আমাদের পক্ষ থেকে মৌলভীবাজার মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
পাখি গবেষকেরা বলছেন, পশু চিকিৎসায় বিশেষ করে গরুর চিকিৎসায় ব্যবহার হওয়া দুটি ওষুধ ডাইক্লোফেনাক ও কেটোপ্রোফেন জাতীয় ওষুধের বহুল ব্যবহারের ফলেই মূলত শকুন প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে দক্ষিণ এশিয়া থেকে। এই দুইটি ওষুধ খাওয়া প্রাণীর মাংস খাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে কিডনি বিকল হয়ে মারা যায় শকুন।
পাখি বিশেষজ্ঞ, পাখিপ্রেমী এবং পরিবেশকর্মীদের জোর দাবীর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সরকার ২০১০ সালে পশু চিকিৎসায় ডাইক্লোফেনাক এবং ২০১৭ সালে দেশের দুইটি এলাকায় কেটোপ্রোফেনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।