আমাদের বৃহত্তর সিলেট চা শিল্পাঞ্চলময়। বিস্তর এলাকাজুড়ে চা বাগানগুলো ভিন্ন ধরণের এক প্রাকৃতিক শোভা বৃদ্ধি করে রয়েছে। যেখানে চোখ কেবলই জুড়ায়। আমরা চা বাগান দেখে বারবার মুগ্ধ হই।
প্রায় প্রতিটি চা বাগানের অন্তঃপুরে আরও এক অদেখা সৌন্দর্য নেপথ্যেই রয়ে গেছে। বলাই বাহুল্য, দূর থেকে আসা নানাপ্রান্তের পর্যটকরা এই সৌন্দর্যের পরশ এখনো পাননি। তবে এই সৌন্দর্য সহজলভ্য নয়। অনুমতি ছাড়া চা বাগানের ভেতরে প্রবেশ না করলে সেই সৌন্দর্যকে প্রত্যক্ষ করা যায় না।
আর তা হলো জলময় হ্রদ। প্রায় প্রতিটি চা বাগানেই থাকে হ্রদ বা লেক। বৃহদাকার পাহাড়ি গাছগাছালিতে পূর্ণ টিলাময় শোভা এই লেক-কে সৌন্দর্যের সর্বোচ্চ সীমায় নিয়ে গেছে। এখানেই নানা প্রজাতির পাখিদের বাস। পাখিরা এখানে তাদের দিবসরজনী অবস্থান করে প্রাকৃতিক মুগ্ধতা ছড়ায়।
চা বাগানের সেইসব লেকেই জলের শোভা। জলের সখা হয়ে ছোট-পানকৌড়ি সেখানে বসতি গেড়েছে। ওরা পরিবারভুক্ত হয়ে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস অবস্থান করছে। পানিতেই জীবন। সেই জীবনের ধারায় টিকে থাকার নিরন্তর প্রচেষ্টায় কালো দেহের অধিকারী পানকৌড়িদের নিত্য সংগ্রাম।
ছোট-পানকৌড়িদের বিশেষ দিক হলো- যেখানে উড়ে এসে বসে সেখানেই দুই দিকের ডানা মেলে ধরে কিছুক্ষণের জন্য। তাতেই যেনো ক্লান্তি কাটানোর প্রয়াস। এভাবে ডানা মেলে ধারার দৃশ্য দূরে থেকে অপূর্ব লাগে। যা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। তবে এই দৃশ্য যে সব থাকে তা নয়। ইচ্ছে হলে সে এমনটা করবে। নয়তো করবে না। অন্যান্য পাখিদের মতোই চুপচাপ ডালে গিয়ে বসবে।
ছোট-পানকৌড়ির ইংরেজি নাম Little Cormorant এবং বৈজ্ঞানিক নাম Microcarbo niger. এরা আকারে হাঁসের মতো, মাত্র ৫১ সেন্টিমিটারের। সারাদেহ কালো হলেও তাদের থুতনি সাদাটে। বুক ও পেট কালচে বাদামি।
পানকৌড়িই চা বাগানের জলাধার বা লেকের ভালোবাসার জলসখা। খাদ্যের জোগানই শুধু নয়, তার একাকীত্বের বিরহগাঁথা গানগুলোও শুনে থাকে সেই লেক। এভাবেই জলের সঙ্গে তার দীর্ঘকালের বন্ধুত্ব। একে অপরের সঙ্গে যেন আষ্টেপৃষ্ঠে বাধা। কেউ কাউকেই ছেড়ে যাবার নয়।
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংঘ (আইইউসিএন), বাংলাদেশ এর তালিকায় এই পাখিটি ‘ন্যূনতম বিপদগ্রস্থ’ পাখি হিসেবে চিহ্নিত।