ঋতুভেদে তিস্তার নয়নাভিরাম দৃশ্য নজর কাড়ে যে কারো। গ্রীষ্মে দৃষ্টিসীমায় সবুজ আর সবুজ, শরতে কাশফুলে ছেয়ে যায় নদীর দুই পাড়, শীতে তিস্তার বুকে জেগে ওঠে ধু ধু বালুচর। আবার শীত শেষে চরবাসীর ঘামঝরা-শ্রমে সাদা বালুর চরে সবুজে প্রাণ ফিরে পায়। বর্ষায় উজানের ঢলে নদীতে বইতে থাকে অথৈ পানি। নীল আকাশে মেঘেরা খেলা করে, ছোটাছুটিতে মুখর থাকে অতিথিসহ দেশীয় পাখি। জাল টেনে মাছ ধরার উৎসবও চোখে পড়ার মতো। গোধূলিতে দেখা যায় অস্তমিত নজরকাড়া সূর্য। এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে নদীর বুকে নৌকায় ভেসে বেড়ান বিনোদনপ্রেমীরা৷
ঈদ, পূজা, পহেলা বৈশাখ ছাড়াও তিস্তার ভিন্ন এই রূপ উপভোগ করতে প্রতিনিয়ত ভিড় জমে। স্থানীয়রাসহ দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন দর্শনার্থীরা। রঙ-বেরঙের পোশাকে ফটোগ্রাফিতে প্রকৃতির মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলেন বিনোদনপ্রেমীরা। বিশেষ করে বিকেলে হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে ভরপুর থাকে এই তিস্তার বেলাভূমি। রংপুরের কাউনিয়া, মহিপুর তিস্তা সড়ক ও রেল সেতু এলাকা এখন মানুষের পছন্দের নাম হয়ে উঠেছে। ভ্রমণ পিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে রংপুরের এই তিস্তা নদী।
উত্তরের একতারা-দোতারা কিংবা বাঁশির চির চেনা সুর শোনা যায় এই তিস্তার পাড়ে। আবার শুষ্ক মৌসুমে নদীর বুকে থাকে হাঁটু জল। হেঁটে পার হয় তিস্তাপাড়ের মানুষ। বাহন হিসেবে ব্যবহৃত হয় ঘোড়া, মহিষ ও গরুর গাড়ি; এই দৃশ্যও বেশ উপভোগ করেন দর্শনার্থীরা।
তিস্তা নিয়ে পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ করলে অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে প্রাণ ফিরে পাবে এই নদী। নদীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা সড়ক সেতু আর রেলসেতুর সঙ্গে প্রকৃতির যেন এক মেলবন্ধন। এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসছেন সববয়সীরা।
তিস্তা সড়ক সেতুর রয়েছে অনেক পুরানো ইতিহাস। ২০১২ সালে পুরনোকে নতুন রূপে তিস্তা সেতু হিসেবে উদ্বোধন করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর তখন থেকেই দর্শনার্থীদের আকর্ষণের যেন কমতি নেই। কিন্তু দীর্ঘদিনেও গড়ে ওঠেনি বিনোদনের জন্য কোন পার্ক, ছাউনি, টয়লেটসহ দর্শনার্থীদের জন্য কোনো সুবিধা। ফলে এই সেতু দুটিকে ঘিরে পর্যটনের বিশাল সম্ভাবনা থমকে আছে।
সেতু দুটিকে ঘিরে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার বিভিন্ন সময় দাবি থাকলে নেওয়া হয়নি কোন উদ্যোগ। তবে অনেকেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে ব্যবসা করছেন স্পিড বোট ও নৌকা নিয়ে দর্শনার্থীদের নদী উপভোগ করাতে। নেই শিশুদের বিনোদনের জন্য কোনো রাইড, বৃষ্টি ও প্রচণ্ড রোদে আশ্রয় ও পার্কিং ব্যবস্থা। স্পিড বোট ও নৌকায় একবার ঘুরতে কোন মূল্য নির্ধারিত না থাকায় লোকবুঝে ৫০ থেকে ২০০ টাকা বাড়তি নিচ্ছেন।
পুরনো সেতুতে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীরা বলেন, এখানে এতো সুন্দর একটা বিনোদনের জায়গা, কিন্তু কোনো টয়লেট নেই। শিশুদের জন্য রাইড নেই। সরকারের এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
কাউনিয়া তিস্তা রেল ও সড়ক সেতু এলাকা রংপুর বিভাগের কাউনিয়া উপজেলায় অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এলাকাটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং নৌকাভ্রমণের জন্য পর্যটকদের আকর্ষণ করতে পারে। প্রশাসনের সহযোগিতায় এই এলাকা পর্যটকদের আকর্ষণ করার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করবে বলে জানিয়েছেন এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
এ বিষয়ে কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহিদুল হক জানান, তিস্তা নদীর ওপর দিয়ে গমনকারী রেল ও সড়ক সেতুটি, যা একদিকে ট্রেন এবং অন্যদিকে যানবাহনের চলাচলের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই সেতুর চারিদিকের প্রাকৃতিক দৃশ্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে। জায়গাগুলো যেহেতু পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সড়ক ও জনপথের, তাদের সাথে কথা বলে একটি উদ্যোগ গ্রহণ করবো আমরা।