ফাগুনের সূচনায় বসন্ত বাতাসে দোলায়িত শাশ্বত মানব হৃদয়। এক সখি খুলে বলছে মনের কথা আরেক সখিকে। জানাচ্ছে, ‘বসন্ত বাতাসে বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ, আমার বাড়ি আসে।’ বন্ধুর বাড়ির পূর্ব পাশের বাগান, পুকুর সব কিছু বসন্তের আবাহনে পুষ্পিত অবয়বে জাগ্রত হয়েছে।
ফাগুনের হাত ধরে বসন্ত নিয়ে এসেছে প্রেম আর ভালোবাসার আকুতি। জলজোছনার দেশ নদীমগ্ন হাওরের অতলান্ত প্রকৃতি থেকে এসব কথাই বলেছিলেন বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম। বসন্ত বাতাসে মানব মনের নান্দনিক পরিবর্তনের কান্তিময় ছবি এঁকেছেন তিনি তার গানে। তার গান প্রেম, মিলন ও বিচ্ছেদের ধ্বনিপুঞ্জ ছড়িয়ে দিয়েছে সারা বাংলাদেশে, সমগ্র জগতে।
ভালোবাস প্রতীক হয়ে চিরযৌবনা ফাগুনে এসেছে যে পুষ্প, তা বসন্তের অপার সৌন্দর্য ধারণ করে। ফাগুনে আগুন লাগে বনে বনে। গাছে গাছে। বাগানে বাগানে।
বাংলাদেশের উর্বর ভূমিতট ছেয়ে যায় দেশি-বিদেশি ফুলে। চারদিক আমোদিত হয় সৌরভে। রঙের আলো ছড়ায় আদিঅন্তহীন চরাচরে।
বার্তা২৪.কমের জন্য পাহাড় ও অরণ্যের জনপদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিস্তৃর্ণ ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে থাকা নানা জাতের, নানা গন্ধের, নানা রঙের ফুলের আলোকচিত্র ধারণ করেছেন উদীয়মান তরুণ ক্যামেরাশিল্পী নাদিম মাহমুদ হিমু। তার লেন্সের চোখে ধরা পড়েছে প্রকাশ্যে ও লুকিয়ে থাকার অসংখ্য ফুলের বিভা ও বৈভব।
হিমু জানান, ‘কিছু ফুল পাওয়া গেছে সাজানো ও পরিকল্পিত বাগানে। কতক খুঁজে বের করতে হয়েছে আবছা অরণ্য ও বন্য গুল্মলতার আড়াল থেকে। অনেকগুলোর নামই আমাদের জানা। কিছু ফুল আছে, যেগুলো সাধারণ মানুষের অচেনা।’
‘ক্যাম্পাসে আমরা অধীরে অপেক্ষা করি ফাগুনের জন্য, বসন্তের জন্য। রঙ আর বৈচিত্র্যের বন্যা শুরু হয় তখন প্রকৃতিতে। ঘুমন্ত প্রকৃতি জেগে উঠে অনন্য রূপের সম্ভারে’, জানান হিমু।
ঘুমন্ত প্রকৃতি শীত শেষে জেগে উঠলে শুধু হিমুর মতো অনুসন্ধিৎসু আলোকচিত্র শিল্পীই নন, প্রতিটি তরুণ-তরুণী নবপ্রাণে উদ্বেলিত হয়। বসন্ত বাতাসের এলোমেলো ছোঁয়ায় মন তখন ডাকে সখিকে, সখাকে।
প্রতিটি মানুষের নিজের বুকের গভীরে ঢেকে রাখা অন্তর্গত বাগানে টের পাওয়া যায় পুষ্পের বাহার, প্রেমের দ্যোতনা। তখন, প্রকৃতির মহান মাহেন্দ্রক্ষণে, জনেজনে কানেকানে প্রেমার্ত আত্মা যেন বলে, ‘বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে গো, বসন্ত বাতাসে।’