পুরান ঢাকায় শিংটোলায় অবস্থিত বিউটি বোডিংয়ে এখনো আড্ডা জমে কবিদের। কবিদের স্মৃতি বিজরিত এই বোর্ডিংয়ে সময় কাটাতে এখনো ছুটে আসেন বর্তমান সময়ের দেশ বরেণ্য কবি সাহিত্যিক ও শিল্পীরা।
জানা গেছে, বিউটি বোডিং একসময় ছিল জমিদার বাড়ি। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হয়ে গেলে জমিদাররা ভারতে চলে যান। ফলে শূন্য এ বাড়িটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে ছাপাখানা। পরবর্তীতে এখান থেকে প্রকাশিত হয় সোনার বাংলা পত্রিকা। কালজয়ী কবি শামসুর রহমানের প্রথম লেখা ওই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এছাড়া পত্রিকা ঘিরে কবিদের আনাগোনা বাড়তে থাকে। ফলে কবিদের আড্ডা দেওয়ার জন্য দরকার হয় একটা স্থান। প্রহ্লাদ সাহাসহ আরো কয়েকজন মিলে এই স্থানে একটি ঘর তৈরি করেন। কালক্রমে চাহিদা অনুযায়ী এখনে গড়ে উঠে হোটেল ও পরবর্তীতে তৈরি করা হয় থাকার ঘর।
কথিত আছে, তৎকালীন অনেক কবি এই বোডিংয়ে বসেই সাহিত্য চর্চা করতেন। হারিয়ে যেতেন সুরের মূর্ছনায়।
বিউটি বোর্ডিংয়ে যারা নিয়মিত আড্ডা দিতেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন- কবি আল মাহমুদ, নির্মলেন্দু গুন, মুনতাসির মামুন, রফিক আজাদ, মহাদেব সাহা, আব্দুল মান্নান সৈয়দ, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, শিল্পি মোর্তাজা বশির, জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ, চিত্র নায়ক প্রবির মিত্র এবং ইংলিশ চ্যানেল বিজয়ী ব্রজেন দাস। এছাড়াও সেখানে গেছেন জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান।
সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, দোতলা এ বাড়িটির অনেকাংশে রং ফিকে হয়ে গেছে এবং ছাদের কোনো কোনো অংশের আস্তরণ খসে পড়েছে। গেইটের সামনে ভেতরে কিছু অংশ সংস্কার করা হলেও অনেক অংশের সংস্কার জরুরি। বর্তমানে বিউটি বোর্ডিংয়ের হোটেলটিতে মানুষের আনাগোনা বেশি। বিশেষ করে বাংলা বাজারের ব্যবসায়ী ও শ্রমজীবী মানুষ দুপুরের খাবার খান এখানে। এছাড়া বর্তমান কবিদের অনেকেই মায়ার টানে ছুটে আসেন এখানে।
বাড়িটি দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা বিজয় পোদ্দার বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘বর্তমানে এ বাড়িটি দখল করার জন্য নানা মহল ষড়যন্ত্র করছে। বাড়িটি ঘিরে দেশ বরেণ্য অনেক কবি সাহিত্যিকদের স্মৃতি জড়িয়ে আছে। তাই বাড়িটি রক্ষার জন্য সরকারের একান্ত সহযোগিতা কামনা করছি।’
ব্যবসা কেমন চলে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চায়ের আড্ডা আর ভাতের আড্ডা কখনোই সমান হওয়ার নয়। তাই আগের মতো জমজমাট আশা করা যায় না। তবে এখানে ভ্রমণ পিপাসুরা আসেন। এছাড়াও এখানে বাংলাবাজারের অনেকেই আহার করতে আসেন। তাই মোটামুটি চলে যায়।’