অন্তর্দ্বন্দ্ব কবলিত দেশগুলোর মধ্যে আফ্রিকার দেশ সুদান অন্যতম। দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরে গৃহযুদ্ধ চলমান রয়েছে। দেশটির নিরাপত্তা ইস্যুতে কাজ করছে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশন। এ মিশনে রয়েছে বাংলাদেশের সদস্যরাও।
জাতিসংঘে শান্তিরক্ষী মিশনে বড় ভূমিকা পালন করছেন বাংলাদেশের সামরিক ও বেসামরিক বাহিনীর সদস্যরা। জাতিসংঘ মিশনে দক্ষতার সাথে কাজ করে ইতোমধ্যেই সুদানের স্থানীয় মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন শান্তিরক্ষী বাহিনী হিসেবে কাজ করা বাংলাদেশের পুলিশ সদস্যরা।
সুদানের বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় অনেকেই এখন যেমন বাংলা বুঝতে পারেন, ঠিক তেমনি অল্প অল্প বলতেও পারেন। বাংলাদেশের পুলিশ সদস্যদের দেখলেই সুদানের দারফুর, নিয়ালা, কালমার স্থানীয়রা 'বাংলা বন্ধু' বলে ডাকাডাকি শুরু করেন। ভয় নয়, সুদানের স্থানীয়দের ভালোবাসা জয় করেছেন এ পুলিশ সদস্যরা।
দারফুরের বাংলাদেশ কন্টিনজেন্টের ডিউটি অফিসার মোঃ শাহীনুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বাংলা আমাদের মায়ের ভাষা। দেশের বাইরে যখন পেশাগত দায়িত্ব পালন করি, তখন অন্য দেশের মানুষের মুখে বাংলা শুনে খুব আবেগাপ্লুত হয়ে যাই।’
‘সুদানের দারফুরসহ বিভিন্ন জায়গায় বাংলাদেশের পুলিশ সদস্যরা দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। এখানকার স্থানীয়রা বাংলাদেশের পুলিশকে ভালোবাসেন। তারা আমাদের দেখলেই ‘বাংলা বন্ধু’ নামে ডাকাডাকি শুরু করেন। এটা যে কতোটা ভালো লাগার তা ভাষায় বোঝাতে পারবো না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে দেশের সব উৎসব পালন করি। ২১ ফেব্রুয়ারিও পালন করেছি।’
গত ২১ ফেব্রুয়ারি সুদানের দারফুরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করেন বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা। ২১ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা ১ মিনিটে নিজেদের তৈরিকৃত শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তারা। ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকার চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
তাছাড়া ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন তারা। জাতিসংঘের দেওয়া তথ্যমতে, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্তমানে ১০টি পৃথক মিশনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনী কাজ করছে। মোট সাত হাজার ২৪৬ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী সদস্যের মধ্যে সেনা ও পুলিশ সদস্যও রয়েছেন।
জাতিসংঘ শান্তি মিশনের নীল পতাকা হাতে আর নীল হেলমেট পড়ে মিশনগুলোতে নানা কাজে নিয়োজিত আছেন এসব শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা। নিরাপত্তা প্রদান থেকে শুরু করে সড়ক নির্মাণসহ বিভিন্নভাবে দেশগুলোর সরকার ও জনগণকে সহযোগিতা করছেন।
তাদের এই নিরলস কাজের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনী সুনাম অর্জন করেছেন। ২০০৫ থেকে বাংলাদেশ পুলিশ কাজ করছে সুদানে। এ পর্যন্ত সুদানে এক হাজার ৫০০ স্বতন্ত্র পুলিশ ও পাঁচ হাজারের অধিক কন্টিনজেন্ট পুলিশ কাজ করছেন।