জীবনের এক অনির্বচনীয় সৌন্দর্যের দেখা পাওয়া যাচ্ছে এই ফাল্গুনে। ঋতুরাজ বসন্তের প্রকৃত গৌরব ও বিভায় প্রকৃতি, পরিবেশ, পুষ্প, বিহঙ্গ, পত্র, পল্লব জেগে উঠেছে নব রূপে, নব রঙে, নবতর আনন্দে।
শীতের ঝাপ্টায় ফাল্গুনের আগমনের মাধ্যমে এ বছর যে বসন্তের শুরু হয়েছে, তা শেষ হবে চৈত্রের দাবদাহে। মাঝখানের কিছু দিন হয়ে আছে মখমল কোমল চাদরের আলতো আদরের মতো। স্নিগ্ধ, অনাবিল বাসন্তী আমেজের উৎকৃষ্ট ইমেজ বিরাজ করছে এখন চারপাশে। বাংলাদেশের ঋতুবৈচিত্র্যের পরিপূর্ণ প্রকাশ ঘটায় আলো ও সৌরভে আমোদিত হয়েছে প্রকৃতি ও পরিবেশ।
প্রকৃতির এই পরিবর্তন ঢেউ জাগিয়েছে গাছে গাছে। বাগানে ও গুল্মলতার বনে বনে। পুষ্পমঞ্জুরীতে প্রজাপতি নৃত্যে প্রকাশিত হচ্ছে জীবনের উত্তাল ছন্দ। বইছে সৌরভের অবারিত ফল্গুধারা।
সবাই যেন জেগেছে অদৃশ্য জাদুর স্পর্শে। রঙের বহুবর্ণিল ছোঁয়া আর সুগন্ধি আমেজে ভরপুর উদ্ভিদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জেগেছে প্রাণিকুলও। পাখিদের কূজনে মুখরিত চরাচর। ভোর হচ্ছে বিচিত্র কলকাকলিতে। একটি দুইটি কোকিল কুহু তানে জানিয়ে দিচ্ছে বাসন্তিক আবাহন।
যেদিকে তাকাই, সেদিকেই মুগ্ধতা। আকাশ এখন অনেক নীল। সুনীল আকাশকে মহীয়ান করেছে ভাসমান মেঘের পবিত্র শুভ্রতা। সহনীয় বাতাস রেশমি পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে। রৌদ্র ছড়াচ্ছে আলোর বিন্যাস। মায়াময় সকাল, স্তব্ধ দ্বিপ্রহর শেষে আসছে আলো ও আনন্দের প্রলম্বিত বিকাল। সন্ধ্যার বর্ণচ্ছটায় অপরূপ পৃথিবী প্রদোষের হাত ধরে চলেছে নক্ষত্রখচিত রাত্রির আলিঙ্গনে।
সমুদ্র কিংবা পাহাড়ও সেজেছে দারুণ। প্রকৃতির প্রতিটি সদস্য যেন তার সর্বশ্রেষ্ঠ ভূষণে আবির্ভূত হয়েছে। সফেদ ফেনিল ঢেউ ভেঙে পড়ছে সৈকতে। এলোমেলো বাতাসে উড়ছে প্রেয়সীর মাতাল কেশ। মুগ্ধতার অতল চোখে প্রেমিক-প্রেমিকা দেখছে নিজেদের ও অনিন্দ্য পারিপার্শ্বিকতাকে।
এই ফাল্গুনে দেখা মিলেছে প্রিয়জনের, প্রিয়তমের। অন্তরঙ্গভাবে দেখা যাচ্ছে প্রকৃতিকে, পরিবেশকে, নিসর্গকে। মনে হচ্ছে বিশ্বকবির চিরায়ত ধ্বনিপুঞ্জ মঞ্জুরিত হচ্ছে হৃদয়ে হৃদয়ে; 'এতদিন যে বসেছিলেম পথ চেয়ে আর কাল গুনে/দেখা পেলেম ফাল্গুনে।'