তাঁর মৃত্যুর এক বছর হলো। ১৪ মার্চ, ২০১৮ সালে পরলোকগত হয়েছিলেন বিখ্যাত কসমোলজিস্ট স্টিফেন হকিং। অচল শরীর নিয়ে সচল মেধায় তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন তিনি সারা বিশ্বকে। শারীরিক সীমাবদ্ধতার পরেও উপভোগ করেন জীবনকে। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত কাজে লাগান চিন্তা, গবেষণা ও চর্চায়।
ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম বইয়ের মাধ্যমে তিনি বিজ্ঞানী ও সাধারণ মানুষের কাছে এতো বিখ্যাত হয়েছেন যে, ইতিহাসে অন্য কোনো বিজ্ঞানীই তাদের বইয়ের মাধ্যমে তেমন বিখ্যাত হননি। বিজ্ঞানের জগতে এমন আলোড়ন অভাবনীয়।
স্টিফেন হকিংয়ের নাম নিলেই মানুষের মনে অবশ্যই তাঁর বইটির নাম চলে আসবে। মহাবিশ্বের প্রকৃতি অনুসন্ধানে বইটি তখনকার সময়ের জন্য এক বিপ্লব ছিল। যারা সাম্প্রতিক বিজ্ঞানের খোঁজ-খবর রাখেন তারা হয়তো ২০১০ সালে প্রকাশিত তাঁর আরেকটি বই দ্য গ্র্যান্ড ডিজাইন -এর কথাও উল্লেখ করবেন, যার কারণেও তিনি নতুন করে আলোচিত ও বিতর্কিত হন।
কোনো কোনো মানুষের জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকলেও তাঁর কোনো একটি কাজ ধ্রুপদীর মর্যাদা পায়। লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির বিখ্যাত চিত্রকর্ম 'মোনালিসা', আলবার্ট আইনস্টাইনের ‘আপেক্ষিকতা তত্ত্ব', আইজ্যাক নিউটনের 'মহাকর্ষ তত্ত্ব' হলো তেমনি ক্লাসিক কাজ, হকিংয়ের 'ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম' তেমনি।
অসার শরীর নিয়ে সজীব চিন্তার ক্ষমতা দেখিয়েছেন তিনি। নিজে হুইল চেয়ারে করেই কাটিয়েছেন জীবনের বেশির ভাগ সময়। অন্যের সাহায্য ছাড়া জীবন-ধারণ করাও সম্ভব ছিল না তার পক্ষে। তবু তিনি প্রাণের উৎস সন্ধান করেছেন। পৃথিবীর জন্ম ও ধ্বংসের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিতে চেষ্টা করেছেন।
হকিং শুধু তার বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কিত মতামতের জন্যেই বিখ্যাত নন, তিনি দৃষ্টান্তমূলক হয়ে আছেন শত প্রতিকূলতার মধ্যেও জীবনকে কাজে লাগানোর সাফল্য অর্জনের মাধ্যমে। যার বেঁচে থাকাই ছিল চরম কষ্ট ও বেদনার, তিনিই বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছেল কয়েকটি সচল আঙ্গুলে লেখা গ্রন্থের মাধ্যমে।
মৃত্যুর এক বছর পরেই নয়, তিনি আলোচিত হবেন আরও অনেক অনেক বছর। এমনকি, কখনও তাঁর তত্ত্ব ভুল প্রমাণিত হলেও তিনি স্মরণীয় থাকবেন জীবনজয়ী প্রচেষ্টার জন্য।