ভারতীয় সরকারি পরিসংখ্যান সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে তৃতীয় লিঙ্গের মোট ভোটার ছিল ২৮ হাজার ৫২৭ জন, যা এবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ হাজার ৩২৫-এ। এই সংখ্যার নিরিখে শীর্ষ স্থানে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ। তার পরেই কর্ণাটক, তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশ।
প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যেও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারের সংখ্যা বেড়েছে। অন্যদিকে অরুণাচল প্রদেশ, গোয়া, হরিয়ানা, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, দাদরা ও নগর হাভেলি এবং লক্ষদ্বীপ থেকে এক জন ভোটারও নিজেকে তৃতীয় লিঙ্গ বলে চিহ্নিত করেননি।
ভারতীয় রাজনীতির ময়দানেও ইতোমধ্যেই পা রেখেছেন তৃতীয় লিঙ্গের রূপান্তরকামীরা। ২০১৮ সালে কংগ্রেসের মহিলা শাখার জাতীয় সম্পাদক হিসেবে রূপান্তরকামী অপ্সরা রেড্ডিকে নিয়োগ তারই উদাহরণ।
গত লোকসভা নির্বাচনে সারা দেশে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন ৯ জন রূপান্তরকামী। যাদের কেউ উত্তরপ্রদেশ, আবার কেউ তামিলনাড়ু বা কর্ণাটকের বাসিন্দা।
নিয়মানুযায়ী, তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার হিসেবে নথিভুক্ত হতে হলে প্রথমে চিকিৎসক এবং ম্যাজিস্ট্রেটের সার্টিফিকেট নিয়ে নাম পরিবর্তন করতে হবে কোনো হিজড়ে, রূপান্তরকামী বা রূপান্তরিতকে। তার পরেই মিলবে ভোটার তালিকায় তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি, যা যথেষ্ট সময় ও ব্যয়সাপেক্ষ।
তাই এত কাণ্ড করার চেয়ে ভোটার কার্ডে নিজেকে নারী বা পুরুষ হিসেবে দেখানো সহজ বলেই মনে করেন অনেকে। কেউ কেউ আবার লিঙ্গ পরিবর্তনের অস্ত্রোপচারের পরে নিজেকে তৃতীয় লিঙ্গ না বলে নারী বা পুরুষের পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। ফলে বাস্তব ও পরিসংখ্যানে ফারাক বাড়তে থাকে।
পশ্চিমবঙ্গেও তৃতীয় লিঙ্গ প্রসঙ্গে পরিসংখ্যানগত পরিবর্তন হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে, ২০১৪ সালে পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ছিলেন মাত্র ৪৯৯ জন। ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে সেই সংখ্যাটা ছিল ৭৫৭। এ বছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪২৬ জন।
ভোটার তালিকায় তৃতীয় লিঙ্গের উপস্থিতির এই পরিসংখ্যানে ভারতীয় জনসংখ্যার একটি বিশেষ দিক ফুটে উঠেছে। কারণ সেদেশে ট্রান্সজেন্ডার বিল নিয়ে লেখালিখি এবং ৩৭৭ ধারা বাতিল হওয়ায় অনেকেরই মানসিকতা বদলাচ্ছে। সমাজের কাছে তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি ও গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। এ কারণে নিজেদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে পরিচয় দেওয়ার সাহস পাচ্ছেন অনেকে।
২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, ভারতে রূপান্তরকামীদের সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ ৮৮ হাজার। আগের লোকসভা নির্বাচনেই প্রথম বার নিজেদের ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে ভোট দিতে পেরেছিলেন এ দেশের রূপান্তরকামীরা। পাঁচ বছরে তাদের ভোটের সংখ্যা বেড়েছে অনেকটাই। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে সারা দেশে তৃতীয় লিঙ্গভুক্ত ভোটারের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৩৪ শতাংশ।
মনে করা হচ্ছে, ভারতে তৃতীয় লিঙ্গের জনসংখ্যা এবং ভোটারের প্রকৃত হিসাবে আরও বেশি। কারণ অনেকেই হিসেবের তালিকায় আসতে পারছেন না নানা কারণে। বিশেষত সামাজিক ছুতমার্গ কাটাতে পারছেন না অনেকেই। পারিবারিক চাপও থাকে অনেক ক্ষেত্রে। এ ছাড়া, সরকারের পক্ষ থেকে ভোটারদের তথ্য সংগ্রহে যারা আসেন, তারা কতটা সংবেদনশীল, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে অনেকের মধ্যে।
তবে তথ্য-পরিসংখ্যান অনুযায়ী দাবি করা হচ্ছে যে, ভারতের সমাজে ও ভোটের রাজনীতিতে তৃতীয় লিঙ্গ একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করতে চলেছে। ক্রমেই তৃতীয় লিঙ্গের সংখ্যা ও উপস্থিতি ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণেই এমনটি মনে করা হচ্ছে।