বাবা রাস্তায় রাস্তায় ভ্যানে করে ডাব বিক্রি করেন আর মা অন্যের বাসায় রান্নার কাজ করেন। ছোটবেলা থেকে তার স্বপ্ন পুলিশ অফিসার হবে। বর্তমানে কড়াইল বস্তির আনন্দ স্কুল নামের একটি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়াশোনা করে নাঈম।
বৃহস্পতিবার (২৯ মার্চ) রাজধানীর বনানীর এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে যখন হাজার হাজার মানুষ দর্শকসারিতে দাঁড়িয়ে ফায়ার ফাইটারদের কাজে বিঘ্ন ঘটাচ্ছিলেন, তখন ১০ বছরের নাঈম নামের ছেলেটি ফেটে যাওয়া পানির পাইপ চেপে ধরে ছিলেন। এতে তার পুরো শরীর ভিজে গেলেও সে পাইপ ছাড়েনি। রাতারাতি সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।
ভবনটিতে এখনো আগুন আছে কিনা? বা কয়জন মারা গেছেন এ বিষয়ে কিছুই জানে না নাঈম। তাই শুক্রবার (২৯ মার্চ) দুপুরে কড়াইল বস্তি থেকে হাঁটতে হাঁটতে চলে আসেন বনানী এফআর টাওয়ারের সামনে।
ঘটনাস্থলে আসতেই গণমাধ্যমের চোখে পড়ে নাঈম। গণমাধ্যমকর্মীরা তাকে নিয়ে টানাহেঁচড়া শুরু করেন। আর সেই দর্শকসারির জনতা আজকেও চেয়েছে ভাইরাল হওয়া নাঈমের সঙ্গে সেলফি তুলতে। তবে নাঈম মনে করে, গতকাল শুধু সে না, তার মতো আরও অনেকেই ফায়ার সার্ভিসকে সহযোগিতা করেছেন।
এ সময় বার্তা২৪.কম-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে নাঈম তার মনের ইচ্ছা পোষণ করে বলেন, ‘আমি বড় হয়ে পুলিশ অফিসার হতে চাই। আর এই কারণেই যেখানে মানুষের সমস্যা সেখানে আমি ছুটে যাই। আমার মতো করে আমি সাহায্য করতে থাকি।’
পূর্বের ঘটনা মনে করে নাঈম বলে, ‘এর আগেও যখন কড়াইল বস্তি, গুলশানের বিভিন্ন জায়গায় আগুন লেগেছে। সেখানে গিয়েও বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছি। সেই সময় অবশ্য আমি একা ছিলাম না, আমার বন্ধুরা ছিল। তারা সবাই টাকা নিলেও আমি টাকা নিইনি।’
১০ বছরের নাঈম বলে, ‘এসব কাজের বিনিময়ে টাকা নেওয়া হচ্ছে ঘুষ। আমি যেহেতু পুলিশ অফিসার হতে চাই, সেক্ষেত্রে ঘুষ খাবো না।‘
মা বাবা আর এক বোনসহ চার জনের পরিবার নাঈমদের। জানতে চাইলে সে বলে, ‘আল্লাহ্ আমাকে ভালো রাখবেন এটাই আমি চাই।’
প্রতিবেদনটি লেখা পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত এফআর ভবনের সামনে তাকে নিয়ে জটলা করে আছে গণমাধ্যমসহ সাধারণ মানুষ। উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ‘তার মধ্যে সত্যিকারের পুলিশের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছেন তারা।’