পলিথিনে মোড়ানো মাঝারি আকারের একটি জার। তার ভেতরে সারি সারি সাজানো নকশী পিঠা। একজন মাঝ বয়সী ব্যক্তি সেই পিঠা ভর্তি জার কাঁধে নিয়ে হেঁটে চলেছেন সড়কের পাশ ধরে। কেউ পিঠা খাওয়ার জন্য ডাক দিলে থামছেন। পিঠা বিক্রি করে ফের জার নিয়ে চলছেন সড়কের পাশ ধরে।
শুক্রবার (২৯ মার্চ) বিকালে গৌরীপুর পৌর শহরের নয়াপাড়া রেলগেইট এলাকায় এই দৃশ্য ধরা পড়ে।
পিঠা খাওয়ার সূত্র ধরেই বার্তা২৪.কমের এ প্রতিনিধির সাথে কথা হয় পিছা বিক্রেতা ঐ ব্যক্তির সাথে। তার নাম কোরবান আলী (৩২)। বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার আলীগ্রাম গ্রামে। বাবা-আব্দুল কাদির। জীবিকার তাগিদেই তিনি এই পিঠা বিক্রির পেশায় এসেছেন।
কথা বলতে বলতেই হঠাৎ শিশু ও আশেপাশের বাড়ির মহিলারা পিঠা খেতে ভিড় জমায় তার এখানে। মুহূর্তেই বিক্রি হয়ে যায় অর্ধশতাধিক পিঠা। বার্তা২৪.কম-কে কোরবান বলেন, ‘অভাবের কারণে স্কুলে পড়া হয়নি। জীবিকার তাগিদে ছোটবেলা থেকেই অন্যের জমিতে কৃষি কাজ করে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। কিন্তু সারাবছর আমাদের এখানে কাজ পাওয়া যায় না। তাছাড়া বিয়ের পর খরচ বেড়েছে। তাই বাড়তি লাভের আশায় পিঠা বিক্রির ব্যবসায় নেমেছি। এখন পিঠা বিক্রির টাকাতেই সংসারের চাকা ঘুরছে।’
ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে সিরাজগঞ্জের এক মহাজন নকশী পিঠা বিক্রির ব্যবসা শুরু করেছেন। পিঠাগুলো বাজারজাত করার জন্য সিরাজগঞ্জ থেকে সাত থেকে আট জন লোককে থাকা-খাওয়ার শর্তে শম্ভুগঞ্জে নিয়ে এসেছেন। কোরবান তাদেরই একজন।
প্রতিদিন মহাজনের কাছ থেকে তিন টাকা ৫০ পয়সায় প্রতি পিছ কিনে পাঁচ টাকায় বিক্রি করেন কোরবান। ময়মনসিংহ শহরের আশেপাশের বিভিন্ন উপজেলায় ঘুরে পিঠা বিক্রি করেন তিনি। দিন শেষে ২৫০ থেকে ৩০০ পিছ পিঠা বিক্রি করতে পারেন কোরবান। এতে তার লাভ হয় ৩৭৫ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা। লাভের এই টাকা দিয়েই চলে তার সংসার, ছেলের পড়াশোনা ও বৃদ্ধ মা-বাবার চিকিৎসার খরচ।
কোরবানের এক ছেলে সন্তান রয়েছে। বাবা-মা কোরবানের সাথেই থাকেন। নিজে পড়াশোনা না করতে পারলেও কোরবান তার একমাত্র ছেলেকে পড়াশোনা করিয়ে মানুষ করতে চান।
কোরবানের সাথে গল্প করতে করতে বিকেল সন্ধ্যায় গড়িয়েছে। লাল বর্ণ ধারণ করা সূর্য তখন অস্ত যাওয়ার অপেক্ষায়। এমন সময় পিঠা কিনতে আসলেন স্থানীয় এক যুবক। তিনি বলেন, ‘বেশি পিঠা কিনলে ফ্রি দিবেন কয়টা?’ কোরবানের জবাব- ‘আমরা ছোট ব্যবসায়ী, ফ্রি দেয়ার সুযোগ নেই। পাঁচ টাকায় পিঠা বিক্রি করে খুব বেশি লাভ হয় না।’
এমন সময় একটি ট্রেন হুইসেল বাঁজিয়ে রেলগেইট অতিক্রম করে ছুটে যায় ময়মনসিংহের দিকে। ট্রেনের দিকে ইশারা দিয়ে কোরবান বলেন, ‘শম্ভুগঞ্জ যাওয়ার ট্রেনটা ফেল করে ফেললাম।’ এ প্রতিনিধির দিকে তাকিয়ে কোরবান বলেন, ‘পিঠাগুলো বিক্রি করতে আরও কিছুক্ষণ হাঁটতে হবে। শম্ভুগঞ্জ যাওয়ার শেষ ট্রেনের সময়টা কখন বলতে পারেন?’