জল ছলছল ভূগোলে তার জন্ম। চারদিকে অথৈ জলের অতলান্ত হাওরের ছেলেটি যোগদান করলেন ফায়ার সার্ভিসে। মানবতার জন্য বীরের মতো জীবন দিয়ে পরিণত হলো অগ্নিনায়কে। ফায়ার ফাইটার সোহেল রানাকে পুরো দেশ এখন ডাকে ফায়ার হিরো।
কিশোরগঞ্জের পূর্বাঞ্চলীয় উপজেলা ইটনার চৌগাংগা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত কেরুয়ালা গ্রামের দরিদ্র কৃষক নূরুল ইসলামের ছেলে সোহেল রানা। চৌগাংগা নামটিই হয়েছে চারটি গাঙ বা নদীর মিলনের কারণে। তার বাড়ি ঘিরে নদীগুলো এসেছে উত্তরের নেত্রকোনা-ময়মনসিংহ এবং পূর্বের সুনামগঞ্জ-হবিগঞ্জ থেকে।
তারপর চলে গেছেন পশ্চিমে কিশোরগঞ্জ এবং দক্ষিণে নরসিংদী-ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমানায়। এমন নদীমাতৃক জলপুত্র সোহেল রানা অগ্নিনায়কে রূপান্তরিত হয়েছেন বীরের মতো সাহসিকতা প্রদর্শন করে এবং মানবতার জন্য জীবন দিয়ে।
গত ২৮ মার্চ বনানীর ফারুক রুপায়ন (এফআর) টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এদিন কুর্মিটোলা ফায়ার স্টেশনের ফায়ারম্যান সোহেল রানা ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের ল্যাডারে (উঁচু মই) উঠে আগুন নেভানো ও আটকে পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধার কাজ করছিলেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভবনে আটকে পড়া অনেককে উদ্ধার করেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিপন্ন হয় তার জীবন।
মারাত্মক আহত সোহেলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় সিঙ্গাপুরে। কিন্তু সব প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে সোমবার (৮ এপ্রিল) বাংলাদেশ সময় রাত ২টা ১৭ মিনিটে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান ফায়ার ফাইটার সোহেল রানা।
মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) তার মরদেহ কফিন বন্দি হয়ে ফিরে এসেছে প্রিয় স্বদেশে। চৌগাংগায় অনুষ্ঠিত হয়েছে জানাজা ও শেষ বিদায়ের ধর্মীয় আয়োজন। রাষ্ট্র, সরকার ও সমাজের সকলেই এই বীরকে জানিয়েছেন সশ্রদ্ধ সালাম। বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ইতিহাসে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে থাকবেন সোহেল রানা।
জল থেকে জন্ম নিয়ে জলপুত্র সোহেল রানা লেলিহান আগুনের বিরুদ্ধে লড়েছেন। অগ্নির বিভীষিকায় আক্রান্ত মানুষদের বাঁচাতে নিজের জীবনকে বাজি রেখে হয়েছেন অগ্নিনায়ক। জন্মভূমির জলের দেশে শেষযাত্রায় ফিরে এসে তিনি শায়িত হয়েছেন চিরনিদ্রায়। সোহেল রানা জলমগ্ন হাওরের বিস্তৃত বুকে লিপিবদ্ধ করেছেন গৌরব ও ত্যাগের ইতিবৃত্ত। জলের দেশের এই ফায়ার হিরোকে বাংলাদেশ ভুলবে না।