লাখ টাকা দামে কেনা গরু জবাই করে মাংস ভাগাভাগি শেষে চামড়া বিক্রি করতে গিয়ে অপদস্ত হয়েছেন এক বিক্রেতা। ঈদের দিন বুধবার (৫ জুন) গফরগাঁওয়ের ডাকবাংলা বাজারে সন্ধ্যায় এমন পরিস্থিতি শিকার হন বিক্রেতা রাশু।
প্রতি বছরের মতো ঈদের দিনও টাংগাব ও ভরপুর গ্রামসহ আশপাশের এলাকার জবাইকৃত পশুর চামড়া বিক্রির জন্য বাজারের মসজিদ মাঠে নিয়ে আসা হয়। অর্ধশতাধিক পশুর চামড়া জমা হয় মসজিদ মাঠে। সন্ধ্যায় বিভিন্ন এলাকা থেকে চামড়া ব্যবসায়ীরাও চামড়া কিনতে আসেন।
বাজার সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা রাশেদুল ইসলাম রাশু লাখ টাকা মূল্যে কেনা ষাঁড়ের চামড়ার দাম চান ৫০০ টাকা। আর তখনই চামড়া কিনতে আসা জহরলাল, রতন ও মুন্সিসহ অন্য ক্রেতারা হাসাহাসি করে ওঠেন। তারা এমনভাবে উপহাস করেন যেন রাশু চামড়ার দাম ৫০০ টাকা চেয়ে অপরাধ করে ফেলেছেন। এ সময় মসজিদ মাঠে চামড়া নিয়ে আসা অন্য ক্রেতারাও হতাশ হন।
এরপর এলাকার ইমাম মাওলানা সিরাজুল ইসলাম ব্যবসায়ীদের বলেন, ‘কত দেবেন বলে নিয়ে যান’। চামড়া ক্রেতা জহরলাল দাম বলেন মাত্র ১০০ টাকা। ‘এক লাখ টাকার গরুর চামড়ার দাম একশো টাকা! মাগনাই লইয়া যানগা’ বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিক্রেতা রাশু। দামাদামির পর সেই চামড়া ১৫০ টাকায় বিক্রি করতে এক প্রকার বাধ্য হন রাশু।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত বার্তা২৪.কম’র এই প্রতিবেদককে রাশু বলেন, ঈদের দিনের জন্য লাখ টাকা দিয়া গরু কিনছিলাম, গরুর মাংস শরিকরা সমান কইরা ভাগ কইরা নিছি। আর চামড়াটা মসজিদের লাইগা রাখছি। কিন্তু চামড়া বেচতে আইসা মানসম্মান সব গেলো! মনে হইলো—বিক্রি না কইরা পানিতে ফ্যালায় দেই। আমার নিজের হইলে তাই করতাম। মসজিদের জিনিস তাই লাখ টাকার গরুর চামড়া ১৫০ টাকায় বিক্রি করলাম।
ক্ষোভ প্রকাশ করে টাংগাব পূর্বপাড়ার বাসিন্দা মতিউল্লাহ বার্তা২৪.কমকে বলেন, চামড়া হচ্ছে গরিবের হক। আমি তিনটা ছাগল আর একটা গরুর চামড়া আনছিলাম। গরুর চামড়া বেচছি ৫০ টাকায় আর তিন ছাগলের চামড়া বেচছি ৩০ টাকায়। রিকশায় করে আনার খরচও উঠলো না।
একই দিন বিকেলে ভরপুর গ্রামের মো. আনিস মিয়া ৭০ হাজার টাকা দিয়ে কেনা গরুর চামড়া রিকশায় করে চামড়া এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে নিয়ে যান। রতন নামে সেই ব্যবসায়ী চামড়া দেখে আনিসের হাতে ৩০ টাকা ধরিয়ে দিয়ে বলেন— ‘এর চেয়ে বেশি দিতে পারবো না চাচা। আপনি এলাকার মানুষ বাড়িতে আইছেন তাই দিলাম’।
আনিস মিয়া বাড়ি যাওয়ার পথে সাক্ষাৎ হয় টাংগাব গ্রামের বাগাবর মহল্লার বাদল মিয়ার সঙ্গে। বাদল দুটি খাসির চামড়া নিয়ে মুচির বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। আনিস তাকে জানান, দুই ছাগলের চামড়া দশ দশ করে ২০ টাকা দিতে পারে। এ কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে চামড়া দুটি খালে ফেলে দেন বাদল!
ভরপুর গ্রামের বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, গত কোরবানির ঈদের পর থেকে চামড়ার দর নেই। এক সময় ব্যবসায়ীরা চামড়া কেনার জন্য আমাদের পেছনে ঘুরতো। এখন তাদের তেল দিতে হয়। আগামী কোরবানি ঈদেও পানির দামে চামড়া বিক্রি করতে হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
চামড়া ব্যবসায়ী জহরলাল বার্তা২৪.কমকে বলেন, চামড়া সংরক্ষণের জন্য যে লবণ দরকার হয়, চামড়া বিক্রি করলে সেই লবণের দামও ওঠে না। তাই আমরাও চামড়া কিনি না। তারপরও এলাকার মানুষ চামড়া নিয়ে আসলে কিছু টাকা দেই, সেটাও সম্পর্কের খাতিরে।