বিশালাকৃতির গাছটিতে জড়িয়ে আছে নানা লতাপাতা। গাছের কাণ্ডে ধরেছে গোলাকৃতির ফল। তার ফাঁকে ফাঁকে সাপের মতো ফণা তুলে উঁকি দিচ্ছে নাগলিঙ্গম। যেকোনো সময় ছোবল দিতে পারে! তবে এ ছোবলে বিষ নেই। আছে সুগন্ধি আর সৌন্দর্য। এটি কোনো বিষধর সাপ নয়, এ হচ্ছে ফুলের রানি নাগলিঙ্গম।
ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর থানা ভবনের পাশে সোমবার (১০ জুন) সকালে ফুলভর্তি নাগলিঙ্গম গাছটির দেখা মেলে।
নাগলিঙ্গম গাছের ইংরেজি নাম 'cannonball tree' এবং বৈজ্ঞানিক নাম Couroupita guianensis, যা Lecythidaceae পরিবারভুক্ত। এর আদি নিবাস মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার বনাঞ্চল। নাগলিঙ্গম গাছ ৪০ থেকে ৫০ ফুট পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। গুচ্ছ পাতাগুলো খুব লম্বা, সাধারণভাবে ৮-৩১ সেন্টিমিটার, কিন্তু ৫৭ সেন্টিমিটার পর্যন্ত উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে। নাগলিঙ্গমের ভেষজ গুণও অনন্য। ফুল, পাতা ও বাকলের নির্যাস থেকে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ তৈরি হয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বী ব্যক্তিরা শিবপূজায় নাগলিঙ্গম ফুল ব্যবহার করেন। ভারতে নাগলিঙ্গমকে ‘শিব কামান’ নামে ডাকা হয়।
নাগলিঙ্গম ফুলের পাপড়ির মধ্যে নাগ বা সাপের মতো ফণা। সম্ভবত এ কারণে এর নাম হয়েছে নাগলিঙ্গম। গাছের গুঁড়ি ফুঁড়ে বের হওয়া দড়ির মতো এক ধরনের মঞ্জুরিতে ফোটে। ফুলের আকার বেশ বড়। ফুলের পাপড়ি মোটা। লাল, গোলাপি ও হলুদের মিশ্রণ নাগলিঙ্গমকে করেছে আরো আকর্ষণীয়। মার্চ মাসে ফুল ফোটা শুরু হয়। জুলাইয়ের শেষ পর্যন্ত গাছে ফুল শোভা পায়।
গৌরীপুর থানা ভবনে যারা বিভিন্ন কাজে গিয়ে থাকেন, নাগলিঙ্গম গাছটি তারা দেখে থাকবেন। গৌরীপুর জমিদারদের স্মৃতি বিজড়িত জায়গায় শতাব্দী প্রাচীন এই গাছটি কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে স্বমহিমায়। গাছের গায়ে বয়সের ছাপ পড়লেও ফুল ও ফলের দিকে তাকালে মনে হবে নবযৌবনা কোনো ফলবতী গাছ। ফলগুলোর আকার বড় বেলের মতো। গাছের গোড়ায় ফলের পরিমাণ বেশি। ফলগুলোর ফাঁক গলে সাপের মতো ফণা তুলে ফুলের ডগাগুলো বেরিয়ে আছে।
গৌরীপুর থানার সহকারী উপপরিদর্শক শরীফ উদ্দিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, সুবিশাল ঐতিহ্যের বিরল প্রজাতির নাগলিঙ্গম গাছটি গৌরীপুর থানার শোভাবর্ধন করছে। কিন্তু গাছটির সঠিক ইতিহাস ও বয়স সম্পর্কে কোনো সুস্পষ্ট তথ্য আমার জানা নেই।