জ্যৈষ্ঠের পড়ন্ত দুপুরে বৈরি প্রকৃতির বুকে কালোমেঘের ডাকাডাকি। ঘন সবুজ পাতার আড়ালে চোখ জুড়ানো সুরভিমাখা কদমফুল। চিরচেনা কদম বৃক্ষের ডালে ঝুলে থাকা হলুদ-সাদা রঙের ফুলে ভাসছে আষাঢ়ের আগমনী বার্তা। দিনপঞ্জিকার পাতায় আষাঢ় আসতে বাকি আরও ২ দিন। এরই মাঝে প্রকৃতিতে কদমের ঘ্রাণ। বর্ষার সঙ্গে ভালোবাসার নিবিড় সম্পর্কের এই ফুলে ফলে ছেয়ে গেছে গাছ।
সম্প্রতি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) ক্যাম্পাসে হাজারো বৃক্ষরাজির ভিড়ে শুভ্ররাগে হৃদয় রাঙানো কদম ফুল চোখে পড়ে। যা কাছে টানছে ক্যাম্পাসে আসা দর্শনার্থীসহ বৃক্ষ প্রেমীদেরও। নাগরিক জীবনের ব্যস্ততার ফাঁকে একটু অবসরে কিংবা প্রিয়জনের সাথে বেরোবি ক্যাম্পাসে আসেন অনেকেই। খানিক সময়ের গালগল্পে উপভোগ করেন বৃষ্টির সঙ্গে কদমের নিবিড় ভালোবাসা।
গাছগাছালিতে ভরা বেরোবির প্রাঙ্গণ জুড়ে কদমের ঘ্রাণে মন জুড়িয়ে যাবে, এতে সন্দেহ নেই। কিন্তু অবাক লাগে, দালানকোঠায় ঘেরা আর লাখ লাখ মানুষের ভিড়ে, কদমের সেই শুভ্ররাগে হৃদয় রাঙিয়ে নেয়ার সুযোগ কজনই বা উপভোগ করতে পারেন। নাগরিক অবসর কিংবা ব্যস্ততায় সেই সুযোগ নেই বললেই চলে।
ঋতু বৈচিত্র্যের এদেশে সাধারণত আষাঢ়ের প্রথম বৃষ্টিতেই কদম ফোটে। আবার কখনও কখনও বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠেও ফুটতে দেখা যায়। কদম বর্ণে, গন্ধে, সৌন্দর্যে এদেশের রূপসী তরুর অন্যতম। গাছ দীর্ঘাকৃতির। কাণ্ড সরল, উন্নত, ধূসর থেকে প্রায় কালো এবং বহুফাটলে রুক্ষ, কর্কশ। পাতা বিরাট, ডিম্বাকৃতি, উজ্জ্বল সবুজ, তেল চকচকে এবং বিন্যাসে বিপ্রতীপ। শীতে সব পাতা ঝরে যায়। কিন্তু বসন্তে কচিপাতা আসে উচ্ছ্বাস নিয়ে।
কদম বর্ণে, গন্ধে, সৌন্দর্যে এ দেশের ফুল গাছগুলোর মধ্যে অন্যতম। গাছের উচ্চতা ৪০-৫০ ফুট। এর বৈজ্ঞানিক নাম- এন্থোসিফেলাস ইন্ডিকাস (Anthocephalus indicus)। আদি নিবাস ভারতের উষ্ণ অঞ্চল, চীন ও মালয়ে। কদমগাছের পাতা লম্বা, উজ্জ্বল সবুজ ও চকচকে। কদম ফুল গোলাকার। কদম ফুলের আরেক নাম হল নীপ। ফুলের সৌন্দর্যের মতো আরও কয়েকটি সুন্দর নাম রয়েছে- যেমন বৃত্তপুষ্প, সর্ষপ, ললনাপ্রিয়, সুরভি, মেঘাগমপ্রিয়, মঞ্জুকেশিনী, কর্ণপূরক, পুলকি, সিন্ধুপুষ্প ইত্যাদি।
পুরো ফুলটিকে একটি ফুল মনে হলেও এটি আসলে অসংখ্য ফুলের গুচ্ছ। এ ফুলের ভেতরে রয়েছে মাংসল পুষ্পাধার, যাতে হলুদ রঙের ফানেলের মতো পাপড়িগুলো আটকে থাকে। পাপড়ির মাথায় থাকে সাদা রঙের পরাগদন্ড। ফল মাংসল, টক। এগুলো বাদুড় ও কাঠবিড়ালির প্রিয় খাদ্য।
শুধু সৌন্দর্য নয়, ভেষজ গুণের পাশাপাশি কদমের রয়েছে অর্থনৈতিক গুরুত্বও। এই গাছের কাঠ দিয়ে কাগজ, দেয়াশলাই ছাড়াও তৈরি হয় বাক্সপেটরা। কদম গাছের বাকল জ্বরে উপকারী, ছাল ও পাতা ব্যথানাশক। মুখের ঘায়েও পাতার রস কার্যকরী।