বিজ্ঞানী ম্যারি কুরি ছিলেন সর্বপ্রথম নারী, যিনি নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছিলেন দুইটি শাখায়— ফিজিক্সে এবং কেমিস্ট্রিতে। ১৮৬৭ সালের নভেম্বর মাসে পোল্যান্ডের ওয়ারশে নামক একটি শহরে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
ফ্রেঞ্চ কোনো ইউনিভার্সিটি থেকে পিএচডি অর্জন করা প্রথম নারীও ছিলেন এই ম্যারি কুরি। প্রথম নারী হিসেবে পিএচডি ডিগ্রি অর্জনের পাশাপাশি তার এই একাডেমিক সাফল্যের আরো একটি দিক আছে যা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, ফ্রান্সের মতো জায়গাতেও তৎকালে একটি পুরুষশাসিত সমাজব্যবস্থার সঙ্গে লড়াই করেই তাকে এই একাডেমিক সাফল্য অর্জন করতে হয়েছে। পুরুষশাসিত সমাজের চোখের আড়ালে খুব গোপনে তিনি তার পিএচডি ডিগ্রি সম্পন্ন করেছিলেন। ওইসময়ের পুরো একাডেমিক পরিমণ্ডলটাই কেবল পুরষকে মুখ্য করে গড়ে উঠেছিল।
১৯৮৩ সালে পদার্থবিজ্ঞানে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করার পর ‘দ্য সোসাইটি ফর দ্য এনকারেজমেন্ট অফ ন্যাশনাল ইন্ডাস্ট্রি’-এর সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে তার বৈজ্ঞানিক জীবনের সূচনা। এখানে তিনি মূলত নানাবিধ পদার্থের চৌম্বক ধর্ম পরীক্ষা-নীরিক্ষা করছিলেন। এসময়েই তার সঙ্গে বিখ্যাত ফরাসি পদার্থবিদ প্যারি কুরির পরিচয় হয়। পরবর্তীতে এই প্যারি কুরির সঙ্গেই ম্যারি কুরি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন।
ম্যারি কুরির বিখ্যাত কিছু উক্তি এখানে পেশ করা হলো। উক্তিগুলো মূলত প্রেরণাদায়ক, এবং একই সঙ্গে দার্শনিক—
১. জীবনের কিছুই নেই যাকে ভয় পেতে হবে। জীবনের যা কিছু আছে সবই অনুধাবনের। এখনই মোক্ষম সময় আরো গভীরভাবে অনুধাবন করবার। তাতে আমরা আরো নির্ভয় হতে পারব।
২. পারফেকশনের ভয় পেয়ে লাভ নেই। পারফেকশন পর্যন্ত আপনি কখনোই পৌঁছুতে পারবেন না।
৩. মানুষের ব্যাপারে কম কম কৌতূহলী হোন। বরং কোতূহলী হন আইডিয়া বা কনসেপ্টের প্রতি।
৪. আমাদের থাকতে হবে কেবল অধ্যাবসায় আর নিজেদের সত্তার ব্যাপারে চূড়ান্ত আত্মবিশ্বাস। আমাদেরকে বিশ্বাস করতে হবে যে, কিছু একটা করবার পক্ষে আমাদের সামর্থ্য রয়েছে এবং ‘কিছু একটা’ সাধিত হবেই।
৫. আপনি আপনার আপন সত্তার বিকাশ না ঘটিয়ে আরো উন্নত কোনো পৃথিবীর স্বপ্ন দেখতে পারেন না। উন্নত পৃথিবীর জন্য আমাদেরকে সর্বাগ্রে নিজেদের সত্তার উন্নয়ন ঘটাতে হবে।
৬. কেউ হয়তো লক্ষই করে না কী ঘটে গেছে। আবার কেউ শুধু চেয়েই থাকে পরিশেষে কী ঘটবার আছে, তার দিকে।
৭. কিছু স্যাডিস্টিক বিজ্ঞানী আছেন যারা সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করবার পরিবর্তে ত্রুটি খুঁজতেই অধিক তৎপর থাকেন।
৮. আপনার কাছে যে উপাত্তটুকু রয়েছে আপনি কেবল সেটারই বিশ্লেষণ করতে পারবেন। কৌশলী হন, কী উপাত্ত আপনি গ্রহণ করবেন আর কিভাবে তা সংরক্ষণ করবেন।
৯. প্রথম নীতিটা হলো, কোনো মানুষের মাধ্যমে অথবা কোনো ঘটনার দ্বারা কারো সত্তাকেই আঘাত করা যাবে না।
১০. বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে আমাদেরকে আগ্রহী হতে হবে বিষয়ের প্রতি, লোকের প্রতি নয়।
১১. আমি তাদেরই একজন, যারা মনে করেন বিজ্ঞানের রয়েছে এক মহত্তম সৌন্দর্য।
১২. যখন রেডিয়াম আবিষ্কৃত হলো তখন কেউই প্রমাণ করে দিতে পারেনি এই বস্তু হাসাপাতালে ব্যবহৃত হবে। অর্থাৎ এটা ছিল নিখাদ এক বিজ্ঞানের আগ্রগতি। এর দ্বারা একথাই প্রমাণিত হয় যে, বিজ্ঞানের অগ্রগতিকে কোনো বস্তুর ব্যবহারিকতা দিয়ে বিবেচিত হতে হবে না। বরং বিজ্ঞানের নিজের জন্যই বিজ্ঞানের অগ্রগতি।
১৩. ইট’স অলওয়েজ গুড টু ম্যারি ইওর বেস্ট ফ্রেন্ড।