নবজাতকের ১৮ ভাষা

, ফিচার

মরিয়ম সুলতানা, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট | 2023-09-01 09:21:38

সম্ভবত পৃথিবীর প্রায় সকল মা-বাবার জন্য সবচেয়ে হতাশাজনক অভিজ্ঞতা হলো নবজাতকের ভাষা বুঝতে না পারা। শিশু কথা বলতে না পারা পর্যন্ত তার মনোভাব বুঝে ওঠা আসলেই ভীষণ কঠিন এক কাজ। কখনো তো একে অসম্ভব বলেও মনে হতে পারে। কিন্তু শিশু কী বলতে চাইছে, তার ঠিক কী প্রয়োজন; এটা বোঝা নাকি আবার ততটা কঠিনও নয়, যতটা আমরা ভাবি। শিশুর হাসি, কান্না এবং আরো কয়েকটি লক্ষণ আছে যা তাদের বিকল্প ভাষা হিসেবে কাজ করে। অনেক মা-বাবারাই হয়তো তা বুঝতে পারেন না বা লক্ষ করেন না।

শিশুর কান্না, শব্দ, অঙ্গভঙ্গি ঠিক কী অর্থ বহন করছে; প্রিসিলা দান্সতানের বিখ্যাত “দান্সতান বেবি ল্যাঙ্গুয়েজ” তত্ত্ব আপনাকে তা মুহূর্তেই বুঝতে সহায়তা করবে এবং আপনার সাথে আপনার শিশুর যোগাযোগকে আরো সহজ করে দেবে। যদিও “দান্সতান বেবি ল্যাঙ্গুয়েজ” বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃতি পায়নি। তবে ২০০৬-এর নভেম্বরে ‘অপেরা উইনফ্রে শো’র হাত ধরে এই তত্ত্ব তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। বিজ্ঞানীরা সংশয় পোষণ করতেই পারেন কিন্তু প্রিসিলা দান্সতান বাজি ধরে বসে আছেন—অনেক মা বাবা তার এই তত্ত্বের সাথে একমত হবেন।

প্রিসিলা দান্সতান ◢

 

উপায় ১ | শিশুর কান্নার ধরন

ক্ষুধার কান্না : শুরুতে শিশু মৃদুভাবে কাঁদে। কিন্তু যখন তার কান্না কেউ শোনে না অথবা তাকে খাওয়ানোও হয় না, তখন সে গগনবিদারী কান্না জুড়ে দিতে পারে। আপনি যদি দেখেন আপনার শিশু তার মাথা ঘোরাচ্ছে, মুখ দিয়ে টিক টিক জাতীয় শব্দ করছে, নিশ্চিত থাকুন এটা ক্ষুধার কান্না।

ডাকার কান্না : যদি দেখেন আপনার শিশু থেমে থেমে ৫-৬ বার কাঁদছে এবং প্রতিবার কান্নার মাঝে ২০ সেকেন্ড করে অপেক্ষা করছে, এর অর্থ আপনার শিশু অপেক্ষা করছে যেন তাকে কোলে তুলে নেওয়া হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ না আসে, নির্দিষ্ট বিরতিতে তার এই কান্নাকাটি চলতেই থাকে।

ঘুমানোর কান্না : আমরা যখন অতিরিক্ত ক্লান্ত থাকি, আমরা কিছুটা ভেঙে পড়ি, একটু ঘুমাতে চাই। শিশুদের ক্ষেত্রেও তাই। যখন তারা ঘুমাতে চায় কিন্তু পারে না, তখন তারা তাদের দুই চোখ বন্ধ করে কাঁদতে থাকে, কখনো কানও ঘষতে পারে।

ব্যথার কান্না : এই কান্না অবিরাম চলতে পারে এবং অন্যান্য কান্নার চেয়ে অনেক বেশি জোরালো হতে পারে। শিশু যত বেশি ব্যথার মধ্যদিয়ে যাবে, কান্নার আওয়াজও তত বেশি জোরালো হবে। কিন্তু শিশু যখন ক্লান্ত থাকে এবং কাঁদার শক্তি পায় না, তখন তাদের কান্না ক্লান্তিকর এবং নিস্তেজ মনে হতে পারে।

অস্বস্তির কান্না : যখন শিশুর কান্না একঘেয়ে মনে হয় এবং সে অবিরাম কাঁদতেই থাক; এর অর্থ, হয় তার অতিরিক্ত গরম লাগছে, না হয় ঠান্ডা লাগছে, অথবা তার ডাইপার পরিবর্তন করা দরকার। এসময় শিশু অস্বাচ্ছন্দ্যবোধ করার কারণে ধনুকের মতো করে শরীর বাঁকাতে পারে।

শরীরবৃত্তীয় কান্না : শারীরিক অস্বস্তির (পেটে ফাঁপা, মূত্র কিংবা মলত্যাগ) জন্য এই কান্না হয় ক্লান্তিকর এবং তারস্বরের।

পরিবেশগত কান্না : সবচেয়ে বিড়ম্বনাপূর্ণ কান্না হলো এটা। উপরের সবগুলোই কোনো না কোনো কিছু সম্বন্ধে ধারণা দেয়। কিন্তু এ বেলায় আপনার শিশু যদি একটু বিরক্ত কিংবা হতাশ বোধ করে, পরে সে তার সেই হতাশা কিংবা বিরক্তি প্রকাশের জন্য নিরলসভাবে কাঁদতেই থাকবে।

উপায় ২ | শিশুর নড়াচড়া

মুষ্টিবদ্ধ : আপনি লক্ষ্য করে দেখবেন, যখন শিশু ক্ষুধার্ত থাকে তখন তার হাত মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায় থাকে। যদি আপনি সময় মতো তার সেই মুষ্টিবদ্ধ অবস্থা লক্ষ করতে পারেন, তবে সে যাত্রায় আপনি তার সেই তুমুল কান্নার দমক এড়াতে পারবেন।

পিঠ বাঁকানো : এটা সাধারণত ২ মাসের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যখন শিশুর পেটে পীড়া হয় তখন সাধারণত সে এটা করে। কিন্তু এটা যদি সে খাওয়ার পরে করে, তবে বুঝতে হবে যে তার পেট ভরে গেছে। আর যদি খাওয়ানোর সময় করে, অর্থ হলো সে খেতে চাচ্ছে না। এক্ষেত্রে শিশুর বয়স যদি ২ মাসের বেশি হয়, তবে এটা কিছুটা তাদের খামখেয়ালিপনা কিংবা ক্লান্তি নির্দেশ করে।

মাথা ঘুরানো : অধিকাংশ শিশুদের জন্য এটা হলো একপ্রকার প্রশান্তিময় নড়াচড়া। এভাবে হয় তারা ঘুমিয়ে যায়, অথবা ধীরে ধীরে শান্ত হয়।

পা ছোঁড়া : এটা পেটের পীড়া নির্দেশ করে। পা ছুঁড়ে তারা তাদের ব্যথা কমানোর চেষ্টা করে।

হাত ঝাঁকানো : যখন শিশুরা বিকট কোনো শব্দ শুনে, উজ্বল আলো দেখে হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে যায়; তখন তারা তাদের বাহু ঝাঁকায়, এটা বোঝানোর জন্য যে তারা ভয় পেয়েছে।

কান ধরে রাখা : কান ধরা সাধারণত একটা শিশুসুলভ বৈশিষ্ট্য। কিন্তু যদি আপনি দেখেন যে আপনার শিশু লাগাতরভাবে তার কান আঁকড়ে ধরে রাখছে, তবে আপনি শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হন।

উপায় ৩ | শিশুর তৈরিকৃত শব্দ

নেহ—জিহ্বা তালুর উপরিভাগে ঠেলে তারা একজাতীয় শব্দ তৈরি করে, এরমাধ্যমেও তারা এটা প্রকাশ করার চেষ্টা করে যে তারা ক্ষুধার্ত।

আও—যদি শিশু ঠোঁট ভাঁজ করে এ জাতীয় শব্দ করে তবে বুঝতে হবে সে ক্লান্ত এবং ঘুমে কাতর।

এহ—যদি শিশু ঢেঁকুর তোলে, তবে বুঝতে হবে তার অন্ননালীতে আর কোনো অতিরিক্ত গ্যাস নেই।

ইরররহ—যখন শিশু অস্বস্তির মাঝে থাকে, যেমন ব্যথা কিংবা পেটে ফাঁপা; এই শব্দ তৈরি করে সে তখন তার বিরক্তি দূর করার চেষ্টা করে।

হেহ—যখন শিশু স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না, অসন্তুষ্ট থাকে, তখন সে এই শব্দ তৈরি করবে। অস্বাভাবিকভাবে নড়াচড়া করবে এবং হাত পা ছুঁড়বে।

এগুলি হয়তো সবসময় সব পরিস্থিতিতে মনে রাখাও সম্ভব নয়। তবে ভাষা রপ্ত করার আগে নবজাতকের সাথে যোগাযোগ রক্ষায় বিকল্প ভাষা হিসেবে এসবের কার্যকারিতা রয়েছে বলে অনেক মা বাবা অন্তত একমত।

এ সম্পর্কিত আরও খবর