পাকিস্তানের গোলরা শরীফ রেলওয়ে যাদুঘর। যা পাকিস্তানের রেলওয়ে হেরিটেজ যাদুঘর হিসেবে পরিচিত। ২০০৩ সালে যাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এটি পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের সেক্টর ই-১১ এর নিকটে অবস্থিত। বর্তমানে এটি রাওয়ালপিন্ডি বিভাগের একটি রেলওয়ে জংশন। ১৯১২ সালে এটি জংশন হিসেবে উন্নীত হয়।
ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৮২ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ বিল্ডিংটিতে রয়েছে দুর্দান্ত ভিক্টোরিয়ান আর্কিটেকচার। হলুদ পাথরের তৈরি পাঁচটি হলঘর। একসময় এটি পেশোয়ার, কোহাত, হাভেলিয়ান ও মুলতানের সাথে স্টেশনটি সংযুক্ত ছিল।
রেলওয়ে হেরিটেজ মিউজিয়ামে গেলে দেড়শ’ বছরের পাকিস্তান রেলওয়ের নিদর্শন। এখানে গেলেই দেখা মিলবে চা পানের উপকারিতা সম্বলিত হিন্দি, উর্দু, পাঞ্জাবি ও ইংরেজি ভাষার পাশাপশি বাংলায় লেখা সাইনবোর্ড; যা মিউজিয়ামটির অন্যতম জনপ্রিয় দর্শনীয় বস্তু।
দেশ বিভাগের আগে যখন অবিভক্ত ভারতে চরম জাতিগত সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে ঐ সময় শত শত হিন্দু, শিখ ধর্মালম্বিরা ভারতের দিকে পাড়ি জমাচ্ছেন। আর ভারত ছেড়ে মুসলিমরা যাচ্ছেন পাকিস্তানের দিকে।
এই গোলরা শরীফ স্টেশনেই তারা ট্রেন বদলে কেউ ভারতের দিকে, কেউ পাকিস্তানের দিকে পাড়ি জমাতেন। তখন এ স্টেশনটি ছিল খুবই জমজমাট। তখন ট্রেনে অন্যান্য জিনিসের ন্যায় বিক্রি হতো চা। ‘চা-এ গরমমমম, চা-এ গরমমমম’ ডাক শোনা যেত এ স্টেশনে থামা ট্রেনগুলোতে।
সেই সময় স্টেশনটির পাশেই একটি শতবর্ষী বটগাছের গুঁড়িতে দেওয়া হয়েছিল চা পানের উপকারিতা সম্বলিত একটি প্রকাণ্ড সাইনবোর্ড। যাতে হিন্দি, উর্দু, পাঞ্জাবি ও ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি লেখা হয়েছিল চা পানের উপকারিতা ও প্রতি পেয়ালা চায়ের দাম।
পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক কিংবা জনগণ কেউই বাংলা ভাষাকে ভালো চোখে দেখতেন না। বায়ান্ন’র ভাষা আন্দোলন কিংবা রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের পর বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক কিংবা জনগণের রক্তচক্ষু এড়িয়ে কেমন করে যেন টিকে গিয়েছিল গোলরা শরীফের বাংলায় লেখা সেই সাইনবোর্ডটি।
২০০৩ সালে এখানে পাকিস্তান রেলওয়ে হেরিটেজ যাদুঘর প্রতিষ্ঠা হলে যাদুঘরে ঠাঁই হয় সাইনবোর্ডটির। যেখানে এখনও জ্বল-জ্বল করছে বাংলা বর্ণ। যেন জানান দিচ্ছে একুশ, বাংলা আর বাঙালির বিজয়গাঁথাকে।