প্রবীণদের পরিচর্যায় রোবট

, ফিচার

সেন্ট্রাল ডেস্ক ৩ | 2023-08-31 14:21:14

ব্যস্ত এই যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে বাড়ির প্রবীণ ব্যক্তিটির দেখভাল করার ফুসরৎ মেলে না অনেকেরই। বিত্তবানরা হয়তো প্রবীণ ব্যক্তির দেখভালের জন্য রেখে দেন কাজের লোক।কারো বা ঠাঁই হয় প্রবীণাবাস বা বৃদ্ধাশ্রমে।কিন্তু সেই কাজের লোকটাই যদি মানু্ষ না হয়। জ্বি, ঠিকই শুনেছেন। প্রযুক্তির দিক থেকে এগিয়ে থাকা এশিয়ার দেশ জাপান এনেছে এমন রোবট যারা প্রবীণদের পরিচর্যা করবে। গা ধোয়া, হাঁটাচলা কিংবা আদর করা– সব কাজেই জাপানের প্রবীণাবাসে পরিচারকরা সাহায্য পান তাদের ইলেকট্রনিক সহকর্মীদের কাছ থেকে৷ রোবটরা দামে কম নয়, কিন্তু প্রবীণরা দৃশ্যত রোবট পছন্দ করেন৷ জাপানে প্রবীণদের সংখ্যা ও অনুপাত ক্রমেই বাড়ছে৷ হিসেব অনুযায়ী, ২০৩৫ সালে জাপানের জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের বয়স হবে ৬৫ বা তার বেশি৷ এই পরিস্থিতিতে প্রবীণদের পরিচর্যার জন্য রোবটদের কাজে লাগানো ফ্যাশন নয়, নিছক আবশ্যকতা৷ টোকিওর একটি প্রবীণাবাসে বাসিন্দাদের ব্যায়াম করানোর দায়িত্ব ‘পেপার’ বা ‘মরিচ’ নামের একটি রোবটের৷ ‘মরিচ’-এর গলাটা ইলেকট্রনিক যন্ত্রের মতো খ্যানখ্যানে হলেও, সে কিন্তু ভারী অমায়িক এবং অত্যন্ত ভদ্রভাবে ‘‘এবার ডান দিকে, এবার বাঁ দিকে, বাঃ, খুব ভালো হয়েছে’’ ইত্যাদি নির্দেশ দেয়৷ জাপানের মোট ৫০০ প্রবীণাবাসে ‘মরিচ’-এর দেখা পাওয়া যাবে৷ সে নাকি হালকা গোছের কিছু আলাপচারিও করতে পারে৷ শিন-তোমি প্রবীণাবাসে পোষ্য প্রাণী বলতেও রোবট, যেমন ‘আইবো’ কুকুর৷ এখানে নাকি এ ধরনের ২০টি বিভিন্ন মডেল আছে – বাসিন্দারা তাদের যাকে ইচ্ছে নিয়ে খেলতে পারেন৷ ওদিকে জাপান সরকারের আশা যে, বিদেশেও ‘আইবো’-র মতো রোবট কুকুরের চল হবে৷ ‘পারো’ নামের সিলমাছ রোবটের গায়ে হাত বোলালে সে ভারী মিষ্টি সব আওয়াজ করে৷ ‘পারো’-কে তৈরি করতে দশ বছরের গবেষণা লেগেছে৷ আজ নাকি সারা বিশ্বে পাঁচ হাজার যান্ত্রিক সিল আছে, তার মধ্যে তিন হাজারই জাপানে৷ ‘পারো’র দামও কম নয়: জাপানে ৩,৮০০ ডলার, ইউরোপে ৫,০০০ ইউরো৷ জাপানের বহু প্রবীণাবাসের জন্য এ ধরণের বহুমূল্য ‘খেলনা’ কেনা সম্ভব হতো না, যদি না সরকার ভর্তুকি দিতো৷ আর যে ‘খেলনা’ কথা বোঝে, আলো দেখতে পায়, মাথা নাড়ে, চোখ পিটপিট করে অথবা সত্যিকারের সিল মাছের মতো চেঁচায় – নিঃসঙ্গ প্রবীণ-প্রবীণাদের কাছে তার মূল্যও তো কিছু কম নয়৷ রোবট মানে তো শুধু খেলনা নয়৷ তথাকথিত ‘মাসল সুট’ -এর কল্যাণে প্রবীণাবাসের পরিচারকরা অনেক শক্ত কাজ অনায়াসে করতে পারেন, কেননা, ঐ ‘মাসল সুট’ তাদের পেশীশক্তি বাড়িয়ে দেয়৷ রোবট সাজ পরা থাকলে পরিচারকরা প্রবীণ-প্রবীণাদের অনেক সহজে নাড়াচাড়া করতে পারেন, তুলতে কিংবা সরাতে কিংবা হুইলচেয়ারে বসিয়ে ঠেলতে পারেন৷ এসব কাজের দরুণ পিঠের ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়৷ যন্ত্রের সাহায্য নিয়ে প্রবীণ-প্রবীণারা হাঁটতে শেখেন: কিভাবে ভারসাম্য রাখতে হবে, কোথায় পা ফেলতে হবে, সব কিছু দেখিয়ে দেয় ঐ রোবট৷ এসব সত্ত্বেও রোবট কোনোদিনই মানুষের জায়গা নিতে পারবে না বলে জাপান সরকারের বিশ্বাস৷ তবে রোবটরা প্রবীণ-প্রবীণাদের মনোরঞ্জন ও পরিচারকদের কর্মভার লঘু করার কাজে সাহায্য করতে পারবে৷

এ সম্পর্কিত আরও খবর