আকাশে পরিচয়, অতঃপর গাঁটছড়া…

, ফিচার

মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-31 02:47:43

একজন যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন শহরের উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক। আরেকজন ইতালির বিমা কোম্পানিতে চাকরি করেন। ৩০ হাজার ফুট উঁচুতে ‍আকাশে উড়ন্ত প্লেনে তাদের পরিচয়।

গল্পের শুরু ২০১৫ সালের গ্রীষ্মে। তখন স্কুল শিক্ষক সান কাভানার বয়স ২৯। তিনি গ্রীষ্মে মধ্যপ্রাচ্যে ভ্রমণের উদ্দেশে বের হয়েছিলেন। তবে পর্তুগালের আজোরেস দ্বীপপুঞ্জের ষাঁড়ের দৌড় উৎসব দেখার মাঝ পথে বিরতি দেন।

আজোরেস দ্বীপপুঞ্জের পাহাড়, সাগরের স্বচ্ছ পানি দেখে প্রেমে পড়ে যান কাভানা। সেখানকার সংস্কৃতি ও খাদ্যাভাস তাকে আকৃষ্ট করে।

অন্যদিকে ২৭ বছর বয়সী আন্না জর্জা, ঘোড়ায় উঠতে আজোরেস দ্বীপপুঞ্জে বেড়াতে যান।

কাভানা বলেন, ‘আমি ষাঁড়ের দৌড় উৎসব দেখতে গিয়েছিলাম। আর আন্না জর্জা ঘোড়ায় চড়তে পর্তুগালে গিয়েছিলেন। আমরা দুজনে পূর্ব পরিচত ছিলাম না। তবে আজোরেস দ্বীপপুঞ্জ থেকে এক ফ্লাইটে লিসবনে যান।’

‘যখন আমি চিন্তা করি আমাদের পরিচয়ের কথা ভাবতে অবাক লাগে। এটা কাকতালীয় এবং আশ্চর্য ঘটনা’- কথাগুলো কাভানার।

লিসবনের ঐ ফ্লাইটে আন্না জর্জা বোর্ডিং শেষ করে জানালার পাশের সিটে বসেছেন। যখন কাভানা সিটে বসেন, তারা দুজনে কথা বলেননি। কেবল দু‘জনে দু’জনকে লক্ষ্য করেন। প্লেন টেক অফের পর প্রথম কথা বলেন আন্না জর্জা। এরপর কাভানা নিজেকে জর্জার পাশের আসনে আবিষ্কার করেন।

প্রথম দেখাতেই মোহবিষ্ট হন কাভানা। কাভানা বলেন, ‘অল্প সময় পরেই তার হাসি আমাকে আকৃষ্ট করে। তার উচ্ছ্বলতা ও মিষ্টি চেহারা ভেতরে আলোড়ন তোলে।’

‘প্লেনের সিটে দুইজন অপরিচিত মানুষ কথা বলা শুরু করি। নিজেদের কাজ, পরিবার আকাঙ্ক্ষা, ইচ্ছার কথা একে অন্যকে শেয়ার করি। যখন প্লেন লিসবনে অবতরণ করে, এই কথোপকথন বিমানবন্দরের কফি হাউস পর্যন্ত যায়। দুইজনের কথা যেনো শেষ হচ্ছিল না।’

এদিকে বিদায় জানানোর সময় হয়ে আসছিল। কাভানা পরবর্তী কানেকটিং ফ্লাইটে ইসরাইল যাবেন। ইতালিয়ান আন্না জর্জা সুইজারল্যান্ডের জুরিখে যাবেন, তখন সেখানে থাকতেন।

গল্প ও সময় কাটানোর মধ্য দিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়। বিদায়ের ক্ষণে আন্না ভাবতে পারছিলেন না এই বাস্তবাদী ও অমায়িক মানুষটাকে সে আর দেখতে পাবেন না। যে ভিন্ন একটি মহাদেশে বাস করেন।

তবে ঐ সময়টাতে প্রেমে পড়ার কোনো ইচ্ছা ছিল না তার। কারণ অন্য একজনের সঙ্গে তখন তার ডেটিং চলছিল।

জুরিখের প্লেন ধরার আগে আন্না জর্জা বিদায় নেওয়ার সময় হাস্যরসে কাভানাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, জুরিখের পাশ দিয়ে গেলেও যেনো তাকে জানানো হয়। তাহলে অন্তত এক কাপ কফি এক সঙ্গে খাওয়া যাবে।

মনে মনে সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন কাভানা। গ্রীষ্ম শেষ হওয়ার আগে জুরিখে আন্নার কাছে গিয়েছিলেন কাভানা।

জুরিখে দেখা হওয়ার পর তারা বুঝতে পেরেছিলেন একে অন্যকে দেখতে ব্যাকুল ছিলেন। বহুদিনের পরিচয় যেন তাদের। জুরিখে বসেই পরিকল্পনা করল, এক সঙ্গে স্পেনের ভ্যালেন্সিয়াতে ছুটি কাটাতে যাবেন। কিন্তু পরিকল্পনা সাজাতে পারছিলেন না। কারণ আন্না তার পরিবারকে কী বলবে? বন্ধু মহলে প্লেনে পরিচয়, বন্ধুত্ব- এটা শুনে হাসাহাসি করবে। সেবার আর স্পেনে যাওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়নি।

সেপ্টেম্বরে আবার দুইজনের দেখা। আন্না জর্জার বস অফিসের কাজে তাকে এক মাসের জন্য জন্য ফ্লোরিডার মিয়ামিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। প্রস্তাবের সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যান আন্না। কারণ এ সুযোগ শুধু তার কাছে অ্যাডভাঞ্চার ছিল না, সেই সঙ্গে কাভানার সঙ্গে দেখা, এক সঙ্গে এক দেশে থাকার সুযোগ। সপ্তাহন্তে ছুটি কাটানো সুযোগ ছিল।

ঐ সময়টাতে মেক্সিকোতে ঘোরাঘুরি, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পরিচয়, ভবিষ্যৎ নিয়ে পরিকল্পনা-কত কিছু। তবে আবার অনিশ্চিয়তা দেখা দেয় যখন আন্না জুরিখে ফিরে আসেন।

কাভানা খুব বাস্তববাদী ছিলেন। সব সময় ভাবতেন, আমাদের তাদের দেখা হবে। প্রায় ছয় মাস পর জর্জার কোম্পানি থেকে যুক্তরাষ্ট্রে কাজের সুযোগ আসে। তাও আবার বোস্টন শহরে। এখন প্রায় এক বছর তারা এক শহরে।

তারা এখনো নিজেদের প্রেমে পড়ার গল্প মনে করে হাসেন। যা সত্যিই অবিশ্বাস্য; তবে সময় ও সুযোগ তাদের এক করে দিয়েছে।

কাভানা ও আন্না জর্জা ২০১৮ সালের বসন্তে গাঁটছড়া বাঁধেন। তবে ২০১৯ সালের জুলাইয়ে পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের নিয়ে পর্তুগালের আজোরেস দ্বীপপুঞ্জে আনুষ্ঠানিকভাবে বিবাহ উদযাপন করেন। কারণ এই অঞ্চলে দুই মহাদেশের হৃদয় এক হয়েছিল। তাই এই জায়গা তাদের হৃদয়ে বিশেষ স্থান নিয়েছে।

২০১৮ সালের আগস্টে এইচএসবিসি একটি জরিপে দাবি করা হয়, প্লেন ভ্রমণে ৫০টি পরিচয়ের ঘটনায় একটি ঘটনা অন্তত ভবিষ্যৎ সঙ্গী বেছে নেয়।

সূত্র: সিএনএন

এ সম্পর্কিত আরও খবর