ড্রাগনের খোঁজে

, ফিচার

সায়েম উদ্দিন চৌধুরী | 2023-08-30 10:06:37

স্যাঁতস্যাঁতে পিচ্ছিল পথে কাঁটাযুক্ত বেতগাছের বাধা উপেক্ষা করে চলতে গিয়ে প্রায় গড়াগড়ি খেতে যাচ্ছিলাম। ক্যামেরা আর ট্রাইপডের ব্যাগ সামলাতে গিয়ে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। সঙ্গী দুজনের জন্য দাঁড়ালাম। তারা আরো ভারী জিনিসপত্র নিয়ে চলছিলো।তাদেরকে দেখতে ঠিকঠাক লাগলেও চোখে নিরাশার আভাস ছিলো। কারণ তারা সাদা রঙের তিতির পাখিকে ক্যামেরাবন্দি করার সুযোগ হারায়। মূলত আমরা অন্য একটি পাখি খুঁজছিলাম যার নাম মিনিভেট বা সহেলী। পাখি খোঁজার ক্ষেত্রে অবশ্য কোন নিশ্চয়তা দেয়া যায় না। আমরা খুব ছোট ছোট সুজোগ কেও কাজে লাগাতে চেয়েছিলাম।

ঘন সবুজ বনে হঠাতই পায়ের নিচে ছোট টিকটিকির মতো প্রাণিগুলোর সাথে দেখা হয়ে যেতে পারে কিংবা নিঃশব্দে রঙ্গিন প্রজাপতি আপনাকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে পারে। গাছের উপরে বানর সম্প্রদায়ের হাস্যকর আচরণ এবং পাখির গান সবসময়ই আমাকে সম্মোহিত করে। যদিও আজকে কোন কারণে জঙ্গলকে ভীষণ অপরিচিত লাগছে।

সময় বাড়ার সাথে সাথে গাছের পাতার ফাঁক গলে আসা মৃদু সূর্যের আলো প্রখর হয়ে ওঠে। একটু পর হাঁফিয়ে উঠলাম। সুন্দর একটু বিশ্রামের জায়গা খুঁজতে থাকি আমি। হঠাত বৃক্ষবাসী কোন কিছুর নড়াচড়া দেখলাম মনে হলো। ব্যস্ত হয়ে পড়লাম জিনিসটিকে খুঁজে বের করতে। সঙ্গীরা আমার চোখে এই ব্যস্ততা খেয়াল করে আমাকে কারণ জিজ্ঞেস করলো। আমি বললাম, "যদিও আমি সিওর নই, তারপরও মনে হচ্ছে, এটা একটা উরন্ত টিকটিকি।" সাথে সাথে তারা ঘটনাটিকে ক্যামেরাবন্দি করার জন্য রেডি হয়ে গেলো। আরেকটি লাফ দিয়ে সেটি ঘন গাছের শামিয়ানার মধ্যে দিয়ে একটা ডুমুর গাছের উপর পড়লো। আমরা পুরো রেডি হয়ে থাকা সত্ত্বেও অভিভূত হয়ে তাকিয়ে থাকলাম।

এশিয়ার দক্ষিন-পূর্ব বনাঞ্চলে ৪০টির বেশি উরন্ত টিকটিকি বাস করে। উড়তে দক্ষ এই টিকটিকি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে আছে ভারত থেকে পূর্ব ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত। বাংলাদেশের দুই জাতের উড়ন্ত টিকটিকির মধ্যে একটি আমরা দেখেছিলাম এবং তা সিলেট এবং চট্টগ্রামের বনাঞ্চলে আছে।

এখন প্রশ্ন হলো,"এই টিকটিকি কিভাবে ড্রাগনের মতো উড়ে?" এক গাছা থেকে আরেক গাছে লাফ দেয়ার সময় এর শরীরের দুপাশের চামড়া প্রশস্ত করে দেয় যা দেখতে পাখার মতো লাগে। মূলত সে উড়ে না। মোটামুটি ৩০ ফিট পর্যন্ত বাতাসে ভেসে থাকতে পারে। জঙ্গলের আলো ভেদ করে বাতাসে ভাসা দুটি টিকটিকি দেখা আমাদের তিনজনের কাছে একটা অসাধারণ অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে।

ছদ্মবেশের কারিশমা দেখিয়ে চোখের পলকে দুটি টিকটিকি নিরুদ্দেশ হয়ে গেলো। তাদের অবস্থান খেয়াল করার সুযোগ আমরা পেলাম না। তারা একটি আরেকটির দিকে তাকিয়ে ছিলো এবং পাখা গুটিয়ে হলুদাভ কমলা রঙের গলা ফুলিয়ে রেখেছিলো। এই বৃক্ষবাসী পিঁপড়েখেকো প্রাণি বেশিরভাগ সময়ে গাছের উঁচু শাখায় বসে থাকে। আগে অনেক দেখা গেলেও ইদানিং বনাঞ্চলের পরিবেশ নষ্ট হওয়ার কারণে এর সংখ্যা অনেকটাই কমে এসেছে। এখনো এরা উড়ে বেড়াচ্ছে কিন্ত আর কতোদিন পারবে?

এ সম্পর্কিত আরও খবর