‘ডার্ক মোডে’ মিলবে চোখের শান্তি?

, ফিচার

সাফাত জামিল, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট | 2023-08-26 11:29:39

আপনি নিশ্চয়ই অতিসম্প্রতি এমন কোনো নতুন স্মার্টফোন বা পিসি অ্যাপ ব্যবহার করেছেন, যেখানে শুরুতেই ছিল ‘ডার্ক মোড’-এ সুইচ করবার অপশন। তাৎক্ষণিকভাবে আপনি হয়তো সাদরে গ্রহণ করেছেন এই আহ্বান, সাথে আপনার চোখজোড়া অনুভব করেছে প্রশস্তি। কিংবা সুইচ না করে ভাবতে শুরু করেছেন এই গাঢ় আবহ আপনার চোখজোড়ায় আদৌ কোনোরূপ আরাম নিশ্চিত করে কিনা। এককথায় এর যথার্থ উত্তর কিন্তু এখনো অজানা।

উইন্ডোজ, অ্যান্ড্রয়েড, আইওএস—সব অপারেটিং সিস্টেমে বর্তমানে ভীষণ জনপ্রিয় এই ডার্ক মোড বা ডার্ক থিম ফিচার। শুধু এই অপারেটিং সিস্টেমগুলো দ্বারা পরিচালিত ডিভাইসগুলোই নয়, ডার্ক মোড পৌঁছে গেছে এ সংশ্লিষ্ট অ্যাপগুলোতেও। ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার, টুইটার, ইউটিউব, অপেরা, ফায়ারফক্সসহ নিত্যব্যবহার্য অ্যাপ, সাইট ও ব্রাউজারে যুক্ত হওয়া এই ডার্ক থিম ব্যবহারকারীর সংখ্যা নেহাত কম নয়। একসময়কার নগন্য এই ফিচার বর্তমান সময়ের প্রায় সকল মাধ্যমের এক বিল্ট-ইন অপশন, ভাবা যায়?

যান্ত্রিক পর্দার এই উজ্জ্বলতা ও অন্ধকারাচ্ছন্নতার মধ্যকার সম্পর্কের পেছনে অনুঘটক হিসেবে কাজ করে একাধিক বিষয়। এক্ষেত্রে লক্ষণীয় হচ্ছে দিনের বিভিন্ন ভাগে কাজের পরিমাণ ও ধরনের পরিবর্তন। ধরা যাক, খুব ভোরে কিংবা সূর্যোদয়েরও আগে আপনি ট্যাব, ল্যাপটপ অথবা স্মার্টফোনে পড়ছেন অনলাইন কোনো পত্রিকা। অর্থাৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ ও উজ্জ্বল ব্যাকগ্রাউন্ড। আবার দিনের কোনো সময় হয়তো কাজ করছেন উজ্জ্বল ব্যাকগ্রাউন্ডের ওয়ার্ড বা স্প্রেডশিটে। আর দিনশেষে আবারও অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ, যেখানে আপনার নেটফ্লিক্সের ব্যাকগ্রাউন্ডটাও বেশ আবছা।

ভিন্ন ভিন্ন এসব পরিস্থিতি নানাভাবে আপনার চোখে চাপ প্রয়োগ করে। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা দিনের মধ্যভাগের ওপর ভিত্তি করেই নানারূপ নিরীক্ষা করেছেন। আলোকিত পর্দা, গাঢ় লেখা আর উজ্জ্বল পরিবেশ—ডার্ক মোড প্রচলনের আগে কমবেশি এমনই ছিল সবার ব্যবহৃত ডিভাইসের পর্দা। এ বিষয়ক অল্প কিছু গবেষণার মধ্যে একটি বলছে, দিনের মধ্যভাগে আশপাশের উজ্জ্বলতার মাঝে স্মার্টফোনের টেক্সট বা অক্ষরগুলোয় গাঢ়ভাব থাকলে তাতে ব্যবহারকারীর জন্য লেখা পড়তে ও বুঝতে অধিক কার্যকরী হয়। এছাড়াও রঙের এই বৈপরীত্য পাঠযোগ্য যে কোনো কিছুর সকল খুঁটিনাটি স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে।

◤ টুইটারের ‘ডিম থিমে’ প্রাথমিকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে নীল রংয়ের অক্ষর ◢

 

তবে অন্ধকার ঘরের ক্ষেত্রে চিত্রটি একদমই উল্টো। সাদা পর্দার সাথে গাঢ়রঙা টেক্সটের কম্বিনেশন তখন নিশ্চিতভাবেই চোখের জন্য সৃষ্টি করে অতিরিক্ত চাপ। এক্ষেত্রে রাতের বেলায় গেমিং, ই-বুক কিংবা টুইটারে ব্যস্ত থাকা মানুষদের জন্য ডার্ক মোড যেন এক আশীর্বাদ—অন্য প্রায় সবার জন্য যা এখন হয়ে গেছে অপরিহার্য এক ফিচার।

বাংলাদেশে টুইটারের জনপ্রিয়তা তুলনামূলক কম হলেও অন্যান্য দেশগুলোয় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এর নতুন দুই ডিসপ্লে মোড—‘ডিম’ ও ‘লাইটস আউট’। গাঢ় নীলাভ ব্যাকগ্রাউন্ডের ডিম মোড পছন্দ না হলে চাইলেই সুইচ করতে পারবেন পুরোপুরি কালো ব্যাকগ্রাউন্ডের লাইটস আউটে। উভয় ফিচারেই রয়েছে টেক্সটের রঙ নির্ধারণে ছয়টি ভিন্ন ভিন্ন অপশন।

◤ বেশ সাড়া ফেলেছে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারের ডার্ক মোডও ◢

 

চলতি বছরের শুরুতে এই আলোচিত ফিচার ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার অ্যাপে আসার পর তা সাদরে গ্রহণ করেছে সবাই। বিশ্বব্যাপী এখন প্রায় নব্বই শতাংশ ম্যাসেঞ্জার ব্যবহারকারীর প্রথম পছন্দ এই ডার্ক মোড—যা অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস উভয় অপারেটিং সিস্টেমেই পাওয়া যাচ্ছে।

যদিও উজ্জল ব্যাকগ্রাউন্ডে গাঢ় অক্ষরের ব্যবহার এখন পর্যন্ত আদর্শ পদ্ধতি বলেই বিবেচিত, টেক জায়ান্ট গুগলের ভাষ্যমতে এই ডার্ক ফিচার স্বল্প দৃষ্টিশক্তির অধিকারী ও উজ্জ্বল আলোর প্রতি সংবেদনশীল ব্যবহারকারীদের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী হবে। যেমন, ‘ফটোফোবিয়া’ আক্রান্তদের ক্ষেত্রে পর্দার অতি উজ্জ্বল আলো মাইগ্রেনের ব্যথার উদ্রেক ঘটাতে পারে। ডার্ক মোড এমন সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে। তবে বেশিরভাগ ব্যবহারকারী এটি নিতান্তই এক নতুন স্টাইলিশ লুক হিসেবে বিবেচনা করছেন। প্রচলিত উজ্জ্বল আলোর পর্দার একঘেয়েমি থেকে নিস্তার পেতেই অনেকের পছন্দের শীর্ষে এই ডার্ক মোড।

◤ ডার্ক মোডের সুবিধাজনক দিকগুলোই প্রাধান্য দিচ্ছে গুগল ◢

 

এছাড়াও ব্যাটারি লাইফ সাশ্রয়ের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সবাইকে পেছনে ফেলেছে এই ডার্ক ফিচার। ওএলইডি ডিসপ্লেতে পরিচালিত ডিভাইসগুলোর ব্যাটারি ব্যাকআপ অক্ষুণ্ণ রাখতে এটি দারুণ কার্যকরী। এধরনের ডিসপ্লেতে সাদা টেক্সটযুক্ত কালো পর্দার প্রদর্শনে গাঢ় টেক্সটযুক্ত উজ্জ্বল পর্দার থেকে কম ব্যাটারিশক্তি খরচ হয়। পর্দার উজ্জ্বলতার তারতম্যভেদে ইউটিউবের ডার্ক মোড ১৫ হতে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যাটারি সাশ্রয় করতে সক্ষম—এমনটাই জানিয়েছে গুগল। যদিও গুগলের পিক্সেল ফোন, স্যামসাং-এর ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইসগুলো ছাড়া খুব কম স্মার্টফোনেই রয়েছে এমন ওএলইডি ডিসপ্লে।

◤ ইউটিউবের ডার্ক মোড ১৫%-৬০% ব্যাটারি সাশ্রয় করতে সক্ষম ◢

 

পরিশেষে বলা যায়, এই ফিচার ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে পুরোপুরি আপনার ওপর। হালের জনপ্রিয় এই ডার্ক মোড বা থিম যে চোখের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ এবং আরামদায়ক ফিচার—তার স্বপক্ষে এখনো মেলেনি শক্ত কোনো বৈজ্ঞানিক যুক্তি। বিশেষ করে উজ্জ্বল পরিবেশে এখনো উজ্জ্বল আলোকিত পর্দাই শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত। তাই আপনি যদি ডার্ক মোডের একান্তই অন্ধভক্ত হয়ে থাকেন, তাহলে সঠিক সমাধান হচ্ছে দিনে-রাতে অদলবদল করে সাধারণ মোড এবং ডার্ক মোড ব্যবহার করা। প্রায় সবকটি অপারেটিং সিস্টেমে এখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই ডার্ক থিম চালু করার সুবিধা রয়েছে, ব্যাটারি সেভারের পাশাপাশি যেখানে আপনার বেঁধে দেওয়া সময়ে স্মার্টফোন বা পিসির ডিসপ্লে চলে যাবে গাঢ় আঁধারের জাদুকরী রাজ্যে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর