টনি জাইলস, একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকা স্বত্ত্বেও গত ২০ বছরে ১৩০টিরও বেশি দেশ ঘুরেছেন তিনি। ঘুরতে চান পুরো পৃথিবী। বাবার কাছ থেকে শোনা দূরদেশের গল্পগুলোই টনির মধ্যে ভ্রমণপিপাসা জাগিয়ে তোলে।
বিবিসি ট্র্যাভেল শো'কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা জানান ৪১ বছর বয়সী এই ইংলিশ ভ্রমণকারী।
নয় মাস বয়সে প্রথম চোখের সমস্যা ধরা পড়ে টনির। দশ বছর বয়সেই সম্পূর্ণভাবে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন তিনি। তার ওপর ১৫ বছর বয়সে হারান বাবাকে। ১৬ বছর বয়সে হারান তার সবচেয়ে কাছের বন্ধুকে, যে ছিলেন তারই মতো শারীরিক প্রতিবন্ধী। তাই তার কৈশোর সময় ছিল অনেকটাই বিমর্ষ।
ঘটনাগুলোর পর পরই ২৪ বছর বয়সে পুরোপুরি অ্যালকোহলিক হয়ে যান টনি। আর এ জীবন থেকে মুক্তি পেতে নতুন একটি জীবন গড়ার মাধ্যম হিসেবে বেছে নেন ভ্রমণকে।
২০০০ সালের মার্চে নিউ অরলিন্সে ভ্রমণের মাধ্যমে ব্যাকপ্যাকিং অ্যাডভেঞ্চার শুরু হয় টনি জাইলসের। তারপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সবকটি রাজ্য ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি।
জাইলস বলেন, ‘ভ্রমণ শুরু করার অন্যতম প্রধান কারণ ছিল নিজের আবেগ থেকে পালানো। নতুন নতুন জায়গায় ভ্রমণের ফলে আমার মধ্যে অনেক ইতিবাচক চিন্তারও তৈরি হয়েছে। মানুষের সঙ্গে মেশার পর আমি বুঝতে পারি, আমি অন্ধ বলে তারা আমার সঙ্গে মেশে না, মেশে আমার ব্যক্তিত্বের কারণে।’
বাবার পেনশনের টাকা থেকেই ভ্রমণ খরচ জোগাড় হয় বলে জানিয়েছেন টনি। আর প্লেনের টিকিট কাটার ক্ষেত্রে সাহায্য করেন তার মা।
নতুন কোনো দেশে জাওয়ার আগে যারা তাকে সাহায্য করেন, ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে আগেই যোগাযোগ করেন টনি।
তিনি বলেন, ‘আমি কোনো বই বা ট্র্যাভেল গাইড দেখে ঠিক করতে পারি না যে, একটি দেশের কোথায় কোথায় আমি যাব। ওই তথ্যগুলো ভ্রমণের আগেই জানতে হয় আমার। তাই আমি আগে থেকেই আমার সূচি ঠিক করে নেই। একবার নতুন কোনো দেশে পৌঁছানোর পর সেখানে ভ্রমণের বিষয়টিও রোমাঞ্চকর। মাঝেমধ্যে আমি জানি না যে, কার সঙ্গে আমার পরিচয় হবে বা কি হতে যাচ্ছে। আমার কাছে সেটিই অ্যাডভেঞ্চার। আবার একা একা জাওয়ার পর হারিয়ে জাওয়ারও অনেক ঘটনা ঘটেছে আমার সঙ্গে।’
শব্দ শুনে স্পর্শ করে যেকোন কিছু অনুভব করতে পারেন টনি। বলেন, ‘দৃষ্টিশক্তি না থাকলেও আমি মানুষের কথা শুনি, পাহাড়ে উঠি, সবকিছু আমি আমার স্পর্শ এবং পায়ের মাধ্যমে অনুভব করি। ওভাবেই আমি একটি দেশ দেখি।’
গত ২০ বছরে জাইলস অনেক দর্শনীয় জায়গায় ঘুরেছেন। অনেক ছবিও তুলেছেন। ছবিগুলো তিনি তার ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট ‘টনি জাইলস, ব্লাইন্ড অথর অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড ট্রাভেলার’ এ আপলোড করেন। যাতে করে মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা সম্পর্কে জানতে পারে।