মাইকেল জ্যাকসনের ‘শ্বেতাঙ্গ’ হয়ে ওঠার নেপথ্যে

, ফিচার

জাভেদ পীরজাদা, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট | 2023-09-01 21:15:57

মাইকেল জ্যাকসনের আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা। নাচ ও গানের অসাধারণ শৈলি তাকে বিশ্বের শীর্ষ তারকায় পরিণত করে। জো জ্যাকসন ও ক্যাথেরিন জ্যাকসন দম্পতির সপ্তম সন্তান মাইকেল ১৯৫৮ সালের ২৯ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা রাজ্যের গ্যারি নামে এক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার ছিল আফ্রো-আমেরিকান। শৈশব থেকে তিনি কালো রঙের ছিলেন বলে বুঝতে পেরেছিলেন তিনি অবহেলিত। তার দিকে ‘সাদা’রা তাকিয়ে থাকত।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা জ্যাকসনের মৃত্যুর পর শোক ভাষণে বলেছিলেন, “এটি আমার কাছে এখনো রহস্য আমাদের সময়ের হিরো মাইকেল জ্যাকসন কেন ‘কালো’ থেকে ‘সাদা’ হয়ে উঠতে চাইতেন! তবে তার মধ্যে ‘কালো’ হয়ে নির্যাতিত থাকার ব্যথা থাকতে পারে।”

পরিবারের অসচ্ছলতার কারণে মাইকেল জ্যাকসনকে কপিকল অপারেটর হিসেবে কারখানায় কাজ করতে হয়েছে। মাইকেল জ্যাকসন মাত্র পাঁচ বছর বয়সে তার ভাইদের সঙ্গে ‘জ্যাকসন-৫’ মিউজিক্যাল গ্রুপে যোগ দেন। সেখান থেকে প্রথম মিউজিক অ্যালবাম ‘ডায়ানা রোজ’ ১৯৬৯ সালে প্রকাশ হয়। এ অ্যালবামের প্রথম একক গান ‘আই ওয়ান্ট ইউ ব্যাক’ ১৯৭০ সালের জানুয়ারিতে বিলবোর্ডের হট তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করে নেয়। মাত্র ১৩ বছর বয়সে এককভাবে মাইকেল জ্যাকসনের ক্যারিয়ারের যাত্রা শুরু হয়।

◤ মাত্র পাঁচ বছর বয়সে ‘জ্যাকসন-৫’ মিউজিক্যাল গ্রুপে মাইকেল জ্যাকসন ◢


১৯৭২ সালে তার প্রথম একক অ্যালবাম ‘বেন’ প্রকাশিত হয়। এরপর ১৯৭৯ সালে তার পরবর্তী অ্যালবাম বের হয়। এ অ্যালবামের নাম ছিল ‘অফ দ্য ওয়াল’। এর ‘ডোন্ট স্টপ টিল ইউ গেট অ্যানাফ’ ও ‘রকিং উইথ ইউ’ গান দুটির মাধ্যমে তুমুল জনপ্রিয়তা পান তিনি। মাইকেলের সবচেয়ে বিক্রিত অ্যালবামের মধ্যে রয়েছে ‘অফ দ্য ওয়াল’, ‘থ্রিলার’, ‘ব্যাড’, ‘ডেঞ্জারাস’ এবং ‘হিস্ট্রি’। এর মধ্যে ‘থ্রিলার’ সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া অ্যালবাম। মাইকেল জ্যাকসনের গানের ভিডিওগুলো বিশ্ববাসীকে মন্ত্রমুগ্ধ করে।

১৯৯৪ সালের আগস্টে এলভিস প্রিসলির কন্যা লিসা মেরি প্রিসলিকে বিয়ে করেন মাইকেল জ্যাকসন। মাত্র দুবছরের সংসার। কিন্তু লিসা প্রিসলিকে বিয়ের আগেই মাইকেল জ্যাকসনের ভেতরে একধরনের মানসিক পরিবর্তন দেখা দেয়। তিনি প্লাস্টিক সার্জারি করে নিজের শরীরের রঙ পরিবর্তন করেন ১৯৯৬ সালেই তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার পরপর।

◤ লিসা মেরি প্রিসলি ও মাইকেল জ্যাকসন ◢


এরপর মাইকেল জ্যাকসন ডিবোরাহ নামে এক নার্সকে বিয়ে করেন। কৃত্রিম উপায়ে তাদের দুটি সন্তান হয়। এর মধ্যে ১৯৯৭ সালে ছেলে প্রিন্স মাইকেল জ্যাকসন এবং ১৯৯৮ সালে মেয়ে প্যারিস মাইকেল জ্যাকসনের জন্ম হয়। ১৯৯৯ সালে ডিবোরাহর সঙ্গেও মাইকেল জ্যাকসনের ডিভোর্স হয়ে যায়। প্যারিস, প্রিন্স ও জ্যাকসন জুনিয়র, মাইকেলের তিন সন্তান। মাত্র ৫০ বছর বয়সে ওষুধের বিষক্রিয়ায় তিনি পাড়ি জমান না ফেরার দেশে। তার মারা যাওয়ার পেছনে ডাক্তাররা বড় দুটো কারণ দায়ী করেন। এক, বারবার রঙ পরিবর্তন করার জন্য প্লাস্টিক সার্জারি করা। এরজন্য তিনি চর্মরোগে ভুগতেন। দ্বিতীয়ত চিকিৎসাবিজ্ঞানের নাগাল পাওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। নিজের ক্লোন তৈরি করে অমর হতে চেয়েছিলেন মাইকেল জ্যাকসন। মৃত্যুর আগে এর জন্য তিনি লাখ লাখ ডলার ব্যয়ও করেছেন। তার জীবনী লেখক মাইকেল সি লাকম্যান এক সাক্ষাৎকারে সাড়া জাগানো এ তথ্য দেন।

জ্যাকসন তার ক্লোন নিয়ে গবেষণার জন্য ইউরোপীয় বিজ্ঞানীদের লাখ লাখ ডলার দিয়েছিলেন। তার ইচ্ছা ছিল এ ক্লোন থেকে একটি ক্ষুদে জ্যাকসন দলের সৃষ্টি হবে এবং তারাও একদিন তার মতো দুনিয়া মাতাবে। পানামাভিত্তিক একটি আয়ুষ্কাল কেন্দ্রে মাইকেল জ্যাকসন একটি ‘গোপন শুক্রাণু প্রকল্প’ গড়ে তুলেছিলেন বলে দাবি করা হয়। একবার তিনি দাবি করেছিলেন, অক্সিজেন চেম্বারে ঘুমানোর জন্য অন্তত ১৫০ বছর বাঁচবেন তিনি।

সঙ্গী হিসেবে সুন্দরী আর ফর্সা মেয়েদেরই প্রাধান্য দিতেন জ্যাকসন। কৃষ্ণাঙ্গ বলে সমাজে নিচু চোখে দেখছে সবাই—এই মনস্তাত্ত্বিক টানাপড়েনে প্লাস্টিক সার্জারি করে নিজেকে ফর্সা করে তোলেন। নিজের চেহারার কৃষ্ণাঙ্গ থেকে শ্বেতাঙ্গে রঙবদল নিয়ে অনেক সমালোচনা সহ্য করতে হয় তাকে। ১৯৭৯ সালে মাইকেল জ্যাকসন তার প্রথম কসমেটিক অপারেশনটি করান। এবং তার পরপরই একটি অ্যাক্সিডেন্টে তার নাক ভেঙে যায়। যদিও তিনি দাবি করেন, আসলে চর্মরোগের কারণে তিনি প্লাস্টিক সার্জারি করাতে বাধ্য হয়েছিলেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর