সেই মনিকা লিউনস্কি এখন ‘যথেষ্ট পরিণত’

, ফিচার

জাভেদ পীরজাদা, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট | 2023-09-01 10:16:18

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও তাঁর কার্যালয়ে তৎকালীন শিক্ষানবিশ মনিকা লিউনস্কির মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে আজও আলোচনা হয়। গত সোমবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের টেলিভিশন চ্যানেল এ অ্যান্ড ই নেটওয়ার্কে মনিকা লিউনস্কি একটি ইন্টারভিউ দিয়ে ফের পুরনো আলোচনাকে উসকে দিলেন।

মনিকা বলেন, “আমার মনে হয় এই (কেলেঙ্কারির) আবরণে নিজেকে ঢেকে রাখার ক্ষেত্রে এত বছর বছর যথেষ্ট সময়। তবে ওই ঘটনার পর পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে ভুগতে হয়েছিল। এখন আমি সব কাটিয়ে উঠেছি। এখন আমি কোনটা শাকের রস আর কোনটা যৌনরস এর তফাত বুঝি। আগে বুঝতাম না। এখন আমি ব্যস্ত রয়েছি ভ্যানিটি ফেয়ার ম্যাগাজিনে বিভিন্ন বিষয়ে কলাম লিখে। অনেকেই হয়তো জানেন না ১৯৯৯ সালে স্টাইলিশ একটি হ্যান্ডব্যাগ চালু করেছিলাম বাজারে। ওইসময়ে নিজের সৃষ্টিশীলতা প্রকাশের জন্য একটা উপায় আমার দরকার ছিল। অনলাইন বিকিকিনি ওয়েবসাইট ই-বে’তে খোঁজ করলে এখনো হয়তো পাওয়া যাবে ওই ব্যাগের দুয়েকটা। যদিও ২০০৪ সালে বন্ধ হয়ে যায় ব্যাগের উৎপাদন। ভ্যানিটি ফেয়ারে আমার প্রায় সবগুলো কলামই সমাজের তর্জন-গর্জনকারী কুচক্রী লোকের বিরুদ্ধে একরকম যুদ্ধ ঘোষণার সামিল। তবে এই যুদ্ধ ঘোষণায় আমার অনুপ্রেরণা ছিল রুটগার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সমকামী ছাত্র, যে কিনা সহপাঠীদের আক্রমণের শিকার হয়ে লজ্জায় ঘৃণায় আত্মহত্যা করে। এরপর থেকেই আমি প্রকাশ্যে মানুষকে লজ্জা দেওয়া কিংবা কটু অশ্লীল কথা বলে আক্রমণকারীকে অপদস্থ করতে আনন্দ পাই। এছাড়া আমি বাই স্ট্যান্ডার রেভ্যুলুশান নামের একটি দলের রাষ্ট্রদূত। দলটি মূলত হয়রানি ও লোকলজ্জার শিকার মানুষদের পরামর্শ দিয়ে থাকে। ইতিবাচক বার্তা এবং উপদেশ দিয়ে আক্রান্ত মানুষকে সহায়তা করে। আমি বিভিন্নস্থানে বিভিন্ন বিষয়ে বক্তৃতা দিয়ে আয় করি। টুইটারেও ব্যস্ত থাকি। এখন আমার বয়স ৪৩। আমি যথেষ্ট পরিণত।’

‘স্টার রিপোর্ট’ নামে একটি বই বের করেছিলেন কেনেথ স্টার। বইটি প্রকাশ হয়েছিল ১৯৯৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। ওই বইতে লেখা আছে, “লিউনস্কি ক্লিনটনের যৌনরসকে মনে করেছিলেন স্পিনাকের (এক ধরনের শাক) রস। তাই সতর্ক থাকেননি। থাকলে ধরা পড়তেন না। তবে সেক্স ভালোভাবেই শিখে গিয়েছিলেন সেই অল্প বয়সেই। তার সেলফোনে তখন বেশ কিছু পর্নোগ্রাফির ভিডিও লিংক পাওয়া যায়। যেগুলোতে দেখা যায় পুরুষের বিশেষ অঙ্গ। বিভিন্ন সাইজের। মনিকা ভীষণ উচ্চাভিলাষী। সে তার চাকরি ধরে রাখার জন্যেই সেদিন ওভাল অফিসে গিয়েছিল ক্লিনটনকে খুশি করতে।”

মনিকা লিউনস্কি, ১৯৯৮


গতবছর বিশ্বজুড়ে শুরু হওয়া ‘হ্যাশট্যাগ মি টু’ আন্দোলনের সময় কথা বলেছেন মনিকা। যুক্তরাষ্ট্রের টেলিভিশন চ্যানেল এ অ্যান্ড ই নেটওয়ার্কের ডকুসিরিজ নির্মাণের জন্য ২০ ঘণ্টার সাক্ষাৎকারও এর আগে দিয়েছেন মনিকা। এ সাক্ষাৎকারে মনিকা বলেন, “আমরা দুজনই সতর্ক ছিলাম। তবে যতটা প্রয়োজন ছিল, ততটা সতর্ক ছিলাম না। আমাকে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হওয়া লাগতে পারে বলে ক্লিনটন সতর্ক করেছিলেন। পলা জোনস নামে এক নারী যৌন হয়রানির অভিযোগে মামলা করার পর ক্লিনটন ওই সতর্কবাণী দেন আমাকে। আমি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম। নিজের পরিবার নিয়ে এবং সম্পর্কের বিষয়টি প্রকাশ হয়ে পড়লে কী ঘটবে, তা নিয়ে ভয় পাচ্ছিলাম।”

আরো পড়ুন ➥ মাইকেল জ্যাকসনের ‘শ্বেতাঙ্গ’ হয়ে ওঠার নেপথ্যে

ক্লিনটন অবশ্য লিউনস্কিকে সাক্ষ্য দেওয়া এড়াতে হলফনামায় সই করতে বলেছিলেন। লিউনস্কি বলেন, “তিনি (ক্লিনটন) বলেননি—শোনো, তোমাকে মিথ্যা বলতে হবে। আবার তিনি এও বলেননি—শোনো সোনা, এটা একটা জঘন্য ব্যাপার হতে চলেছে। কাজেই আমরা সবাইকে সত্য বলব।”

লিউনস্কি পরে ক্লিনটনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের বিষয়টি অস্বীকার করে একটি নথিতে সই করেন। ক্লিনটনও শপথ করে সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেন। লিউনস্কির সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে মিথ্যা বলায় ক্লিনটন অবশ্য মার্কিন কংগ্রেসে অভিশংসনের খাঁড়ায় পড়েছিলেন। তবে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেট শেষ পর্যন্ত তাঁকে হোয়াইট হাউস থেকে বিতাড়িত না করার পক্ষেই অবস্থান নেয়। এ সাক্ষাৎকারের ডকুসিরিজটির নাম ‘দ্য ক্লিনটন অ্যাফেয়ার’। মনিকা লিউনস্কি চলতি বছরের মার্চে মার্কিন টেলিভিশন নেটওয়ার্ক এবিসির ‘গুড মর্নিং আমেরিকা’ অনুষ্ঠানে জানান, তিনি ইংল্যান্ডের বিখ্যাত লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস থেকে মাস্টার ডিগ্রি শেষ করেছেন। মনিকা জেন অংশের (জেন হচ্ছে বৌদ্ধ ধর্মের ধ্যানরত ও সহজাত অন্তদৃষ্টির ওপর মনঃস্থির করার একটি রূপ) সাথেও যোগাযোগ বাড়িয়েছেন। তিনি বেশি করে ধ্যান এবং মানসিক থেরাপি নেওয়া শুরু করেছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর