জাপানের ভবিষ্যত প্রিন্স ১৩ বছর বয়সী হিসাহিতোর নাম ঘোষণা করা হচ্ছে

, ফিচার

জাভেদ পীরজাদা, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট | 2023-08-30 23:53:30

চলতি বছরের ১ মে জাপানের সম্রাটের দায়িত্ব নিয়েছেন প্রিন্স নারুহিতো। আগামীকাল ২২ অক্টোবর তিনি আন্তর্জাতিক মহলের কাছে সম্রাট হওয়ার কথা ঘোষণা দেবেন এবং সেইসাথে তার পরবর্তীসময়ে রাজবংশের কে সম্রাট হবে তার পরিচয়ও আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবেন। প্রিন্স নারুহিতোর পর যিনি সম্রাট হবেন তিনি হিসাহিতো। সম্পর্কে হিসাহিতো নারুহিতোর ভাইয়ের ছেলে। হিসাহিতোর বয়স এখন মাত্র ১৩ বছর। তাকে এখনই সম্রাট হওয়ার যোগ্য করে তুলছেন ৫৯ বছর বয়সী প্রিন্স নারুহিতো। হিসাহিতো ইতোমধ্যেই জাপানি ঐতিহ্য মেনে ‘হাকামা’ কিমানো পরা অভ্যাস করছে। শিখছে তির ছুড়ে লক্ষ্যভেদ করা। গত অগাস্টে তাকে নিয়ে ভুটান সফরে গিয়েছিলেন নারুহিতো। আন্তর্জাতিক মহলে পরিচিত করানোই ছিল উদ্দেশ্য। এ মাস থেকেই হিসাহিতোকে কুংফু শেখানো হচ্ছে রাজমহলে। প্রিন্স নারুহিতোর বাবা সম্রাট আকিহিতো সিংহাসন ত্যাগ করার পরে গত ১ মে তিনি সম্রাট হন। জাপানের প্রথা অনুযায়ী কেবল রাজপরিবারের পুরুষ সদস্যরাই সিংহাসনে বসার অধিকারী। সে দেশের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে চান না এই নিয়ম বদলে যাক। পুরানো প্রথা অনুযায়ী নারুহিতোর ভাই আকিশিনোর ছেলে হিসাহিতো জাপানের সিংহাসনের উত্তরাধিকারী। সেদেশের বিখ্যাত সংবাদপত্র ‘আসাহি’-র বরাত দিয়ে গত শুক্রবার হাফিংটনপোস্ট এসব তখ্য দিয়েছে।

◤ জাপানের বর্তমান সম্রাট প্রিন্স নারুহিতো ◢


১৯৬৫ সালের পর থেকে জাপানের রাজবংশে কোনো ছেলে জন্মায়নি। রক্ষণশীলরা রীতিমতো চিন্তায় পড়েছিলেন, কিভাবে দেশের প্রাচীন প্রথা রক্ষা করা যাবে। নারুহিতোর বিয়ে হওয়ার আট বছর পর তাঁর স্ত্রী কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। সে হলো প্রিন্সেস আইকো। অনেকেই ভাবছিলেন, রাজবংশের উত্তরাধিকার সংক্রান্ত আইন বদলানো হতে পারে। রাজকন্যারাও সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হবেন। কিন্তু পুরনো আইন বদল করা হয়নি। ২০০৬ সালে জন্ম হয় হিসাহিতোর। দক্ষিণপন্থীরা মনে করেন, ঈশ্বরের আশীর্বাদে তার জন্ম হয়েছে। জাপানের মিডিয়া প্রশ্ন তুলেছে, হিসাহিতোকে আগামী দিনের সম্রাট হিসাবে যথাযথ শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে তো? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে জাপানে যে সংবিধান রচিত হয়েছিল, তাতে বলা আছে, সম্রাট কোনো রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী নন। তিনি রাষ্ট্র ও জনগণের ঐক্যের প্রতীক। হিসাহিতো এখন ওখানোমিজু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এক জুনিয়ার হাইস্কুলে পড়াশোনা করে। রাজপরিবারের ছেলেমেয়েরা সাধারণত গাকুশুয়িন জুনিয়ার হাই প্রাইভেট স্কুলে ভর্তি হয়। হিসাহিতো প্রথম রাজকুমার যে পাবলিক স্কুলে পড়াশোনা করছে।

◤ নারুহিতোর কন্যা প্রিন্সেস আইকো ◢


আগামীকাল জাপানের সম্রাট হিসেবে আনুষ্ঠানিক অভিষেক হচ্ছে নারুহিতোর। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এবং অন্যান্য প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে স্মারক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সম্রাটের সিংহাসন আরোহণ পর্ব শেষ হবে। মূল অনুষ্ঠান হবে চার ধাপে। এর আগে জাপানের ২০০ বছরের ইতিহাসে প্রথম স্ব-ইচ্ছায় সিংহাসন ছাড়েন সম্রাট আকিহিতো গত ২৯ এপ্রিল। এর আগে অবশ্য ১৮১৭ সালে এক সম্রাট ছেড়েছিলেন। ৮৫ বছর বয়সী সম্রাট আকিহিতো ২০১৬ সালে ঘোষণা দিয়েছিলেন, বয়সের কারণে তার ভয় হচ্ছে যে, তিনি ঠিকভাবে তার দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। জনমত জরিপে দেখা যায, স্বাস্থ্যের কারণে সিংহাসন ছাড়তে জাপান সম্রাটের ইচ্ছাকে সমর্থন করেছেন বেশিরভাগ জাপানি। পরে দেশটির সংসদ একটি আইন পাস করে, যাতে তিনি সিংহাসন ত্যাগ করতে পারেন। তার স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন তার ৫৯ বছর বয়সী যুবরাজ নারুহিতো।

◤ ৮৫ বছর বয়সী সম্রাট আকিহিতো ◢


জাপানি ভাষায় ‘সোকুই নো রেই’ নামে পরিচিত এই অনুষ্ঠানটি জাপানে নতুন সম্রাটের আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব গ্রহণের সঙ্গে সম্পর্কিত। দূর অতীতকাল থেকেই জাঁকজমকের সঙ্গে এ অনুষ্ঠান হয়ে আসছে। এবার বিশ্বের ১৯০টির মতো দেশের প্রতিনিধিরা এ অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। বিদেশি অতিথিদের অনেকেই এরই মধ্যে টোকিও এসে পৌঁছেছেন। মূল অনুষ্ঠান টোকিওর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত সম্রাটের প্রাসাদে অনুষ্ঠিত হবে। সম্রাট নারুহিতো ও সম্রাজ্ঞী মাসাকো পূর্ণাঙ্গ রাজকীয় সাজপোশাক পরিধান করে সেখানে অপেক্ষমাণ অতিথিদের সামনে উপস্থিত হবেন। শুরুতে সম্রাট নিজেকে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী ঘোষণা করে একটি বিবৃতি পাঠ করে শোনাবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে একটি অভিনন্দন বার্তা পাঠ করবেন। অতিথিরা এরপর সমবেতভাবে ‘বানজাই’ ধ্বনি তুলে সম্রাটের সুস্বাস্থ্য ও সাফল্য কামনা করে জাপানি পানীয় ‘সাকে’ পান করবেন। এর ঠিক পরপর সম্রাট ও সম্রাজ্ঞী সেই কক্ষ ত্যাগ করবেন।

◤ বাবা মায়ের সাথে প্রিন্স হিসাহিতো ◢


বিদেশি অতিথিদের মধ্যে থাকছেন ব্রিটেনের যুবরাজ চার্লস, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হমিদ, চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াং চি-শান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী লি নাক-ইয়েওন। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে থাকছেন পরিবহন মন্ত্রী এলেইন চাও। সম্রাট নারুহিতোর সিংহাসন আরোহণের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য মোট খরচের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে আনুমানিক এক হাজার ছয় শ কোটি ইয়েন। অভিষেকের সঙ্গে সম্পর্কিত চারটি অনুষ্ঠানের মধ্যে আছে সম্রাটের প্রাসাদে আয়োজিত সিংহাসন আরোহণ সংক্রান্ত ঘোষণা, আনুষ্ঠানিক অভিষেকের পর মোটরগাড়ি শোভাযাত্রা, সম্রাটের প্রাসাদে দেওয়া ভোজসভা এবং প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ভোজসভা। তবে গত সপ্তাহে জাপানের ওপর আঘাত হানা সামুদ্রিক ঝড় হাগিবিসের কারণে হওয়া ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি বিবেচনায় রেখে মোটরগাড়ি শোভাযাত্রার অনুষ্ঠানটি নভেম্বর মাসের ১০ তারিখে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।

জাপানের ১২৬তম সম্রাট হতে যাচ্ছেন যুবরাজ নারুহিতো যিনি জাপানকে ‘রেইওয়া’ যুগে নিয়ে যাবেন। তিনি অক্সফোর্ডে পড়াশোনা করেছেন এবং ২৮ বছর বয়সে যুবরাজ হন। ১৯৮৬ সালে একটি চায়ের আসরে যুবরাজ্ঞী মাসাকো ওয়াডার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ১৯৯৩ সালে তারা বিয়ে করেন। এই দম্পতির একমাত্র সন্তান প্রিন্সেস আইকোর জন্ম হয় ২০০১ সালে। যদিও জাপানের বর্তমান আইন অনুযায়ী কোনো নারী সিংহাসনে বসতে পারেন না। যে কারণে প্রিন্সেস আইকো সিংহাসনের পরবর্তী উত্তরাধিকারী নন। যুবরাজ নারুহিতোর পর উত্তরাধিকারী তালিকায় রয়েছেন তার ভাই প্রিন্স ফুমিহিতোর ১৩ বছরের সন্তান হিসাহিতো। তাকে এ অভিষেক অনুষ্ঠানে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হবে এবং ভবিষ্যত সম্রাট হিসেবে নাম ঘোষণা করা হবে। এটি বিশ্বের সবচে পুরনো রাজ পরিবার। পৌরাণিক কাহিনীতে বলা হয়, যিশু খ্রিস্টের জন্মের ৬০০ বছর আগে থেকে এই রাজতন্ত্র চলছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর