বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে রচিত ছয়টি বিখ্যাত হরর

, ফিচার

তানিম কায়সার, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট | 2023-08-27 07:49:28

বিশ্বব্যাপী হরর উপন্যাসের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। ‘ড্রাকুলা’ কিংবা ‘দ্য শাইনিং’-এর মতো অনেক হরর উপন্যাস আছে যেগুলো আপনাকে সত্যিই লোমহর্ষক অনুভূতির মধ্য দিয়ে নিয়ে যাবে। হরর উপন্যাস পড়তে অনেকেই ভালোবাসি। অন্যদিকে, লেখক যখন কিছু লিখতে যান প্রথমেই তাঁর জন্য প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়ায় উপযুক্ত বিষয় ও প্রেক্ষাপট। যথাযথ প্লট ও প্রেক্ষাপট না পেলে কাহিনী বেশি দূর আগানো যায় না। আর এজন্যেই বিখ্যাত অনেক লেখক লেখার প্রয়োজনীয় সাবজেক্ট-এর খোঁজে দ্বারস্থ হন নিজেরই বাস্তব কোনো অভিজ্ঞতার। এমনি কয়েকটি হরর আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় যেগুলো লিখিত হয়েছিল লেখকের বাস্তব অভিজ্ঞতার ছাঁচে।

অ্যান রুল এর ‘দ্য স্ট্রেঞ্জার বিসাইডস মি’

সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত ক্রাইম হররের নাম নিতে গেলে অবধারিতভাবে একটি নাম আসবে—অ্যান রুল। তাঁর রচনা শৈলিরই অন্যতম এক বৈশিষ্ট্য তিনি যা-ই লিখেন তার বর্ণনা খুবই আকর্ষণীয় ও পরিচিত হয়। পাশাপাশি শেষ পর্যন্ত একটা মোহের মধ্যে আটকে রাখে পাঠককে। রহস্যের পর রহস্য ভেদ করে এগিয়ে যায় তার গল্পের প্রতিটি বাঁক। তাঁর বইগুলোর মধ্যে সবচেয়ে তীব্র রহস্য ধারণ করে আছে তাঁর প্রথম বই ‘দ্য স্ট্রেঞ্জার বিসাইড মি’। এই গল্পে উঠে এসেছে টেড বুন্ডির সাথে তার বন্ধুত্বের গল্প। কিভাবে তাদের মধ্যে এই সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং কিভাবে তারা দুজন মিলে কঠিন পথ একসাথে হেঁটে বেড়িয়েছেন। দুজনেই একটি ক্রাইসিস সেন্টারে কাজ করতেন যেখানে আত্মহত্যাপ্রবণ লোকদের চিকিৎসা দেওয়া হতো। কিন্তু ক্রাইসিস সেন্টারেরই একজন এসব আত্মহত্যাপ্রবণ লোকদের হত্যা করে যাচ্ছিল। এই গল্পে তিনি বর্ণনা করেছেন কিভাবে তিনি ধীরে ধীরে বুঝতে পেরেছিলেন, তার বন্ধুই ছিল সেই হত্যাকারী।

ট্রামম্যান ক্যাপোটের ‘ইন কোল্ড ব্লাড’

সত্যিকারের অপরাধ নিয়ে আরেকটি আইকনিক কাজ হলো ট্রামম্যান ক্যাপোটের ‘ইন কোল্ড ব্লাড’ উপন্যাসটি। ডিক হিকোক এবং পেরি স্মিথ ক্ষুদ্র কৃষক সম্প্রদায়ের চারজনের একটি পরিবারকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছিলেন। একটি সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে তিনি এ ব্যাপারে জেনেছিলেন। পাশাপাশি গোয়েন্দা কাজের মাধ্যমে তিনি আমেরিকার এই সহিংসতা ঘটনার পুনর্চিত্রায়ন করেছিলেন। এই উপন্যাসটি তিনি রচনা করেন ১৯৬৫ সালের দিকে। যখন আমেরিকায় নিজেদের বিনোদিত করার জন্য কিছু লোক এমন নৃশংস কাজে জড়িত হতো। এই গল্পের মাধ্যমে তিনি একজন তৃতীয় পক্ষ হিসেবে কিভাবে এই হত্যাকাণ্ড হত্যাকারীদের মনে আনন্দের জন্ম দিত এবং সেগুলো কী পরিমাণ ভয়ানক হতো আক্রান্ত ব্যক্তি বা পরিবারের জন্য, সেসব উল্লেখ করেছেন।

হ্যারল্ড শেটারের ‘হেল’স প্রিন্সেস’

হরর উপন্যাসের জগতে আরেকটি জনপ্রিয় নাম হলো হ্যারল্ড শ্যাচটারের ‘হেলস প্রিন্সেস’। অ্যালবার্ট ফিশ এবং এইচ. এইচ. হোমস-সহ ইতিহাসের কিছু কুখ্যাত ব্যক্তিত্বের জীবনী নিয়ে হ্যারল্ড শ্যাচটার বেশ কিছু জীবনী লিখেছেন। কিন্তু ‘হেল’স প্রিন্সেস’ এগুলো থেকে ব্যতিক্রম। বেল গুনেস একজন সহিংস মহিলা সিরিয়াল কিলারের বিরল উদাহরণ হয়েও মানুষের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে প্রবেশ করেনি। কিন্তু নৃশংসতা এবং ভয়াবহতায় তিনিও অন্যান্য সিরিয়াল কিলারের চেয়ে কম ভয়ানক ছিলেন না।

তার প্রধান শিকার ছিল তার সহকারীরা, যাদের তিনি তার ইন্ডিয়ানা ফার্মস্টেডের সকল সুযোগ সুবিধা দিয়ে আকৃষ্ট করেছিলেন। মোট খুন করেছিলেন ২৮টি। এছাড়াও আরো বিখ্যাত খুনিদের মতো গুনেস কখনো ধরা পড়েনি, আর ধরা পড়লেও পালিয়ে গেছেন। সেসব জানতে হলে আপনাকে তার পালানোর পরিকল্পনাগুলো পড়তে হবে।

রিচার্ড প্রেস্টন রচিত ‘দ্য হট জোন’

বেশ তো খুনাখুনি নিয়ে আলোচনা হলো। এবার খুনিদের থেকে এক মুহূর্তের জন্য বিরতি নেওয়া যাক। বাস্তব বিশ্বে খুনোখুনি ছাড়াও প্রচুর অন্যান্য হরর জেনার রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ রিচার্ড প্রেস্টনের ‘দ্য হট জোন’ উল্লেখযোগ্য। এখানে দেখানো হয়েছে কিভাবে একটি অচেনা অজানা ভাইরাস দিয়ে কী ভয়ানকভাবেই না মানুষকে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া যায়। যেমন ১৯৮৯ ইবোলা ভাইরাস। যেটা অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বেশ কিছু সম্প্রদায়কে প্রায় নিঃশেষ করে দিয়েছিল।

জেফ গুইন রচিত ‘দ্য রোড টু জোনস্টাউন’

নভেম্বর ১৯৭৮, জোনস্টাউন ইতিহাসের সর্বাধিক পরিচিত খুন বা আত্মহত্যার স্থান হয়ে ওঠে যেখানে স্বেচ্ছায় বা বলপূর্বক ৯০০ জনেরও বেশি লোক বিষ জাতীয় দ্রব্য পান করেছিলেন। তবে জিম জোনস পঞ্চম মেগালোমিনিয়াকাল কাল্ট লিডার হওয়ার আগে একজন খ্রিস্টান যাজক ছিলেন। যিনি মার্কসবাদী মতবাদ এবং বর্ণগত সাম্যের দর্শনে বিশ্বাসী ছিলেন। একটা জিনিস কখনোই বদলায়নি। তিনি কখনো লাইমলাইট থেকে দূরে ছিলেন না। জেফ গিনের ‘দ্য রোড টু জোনস্টাউন’ আপনাকে জোনসের ইন্ডিয়ানাপলিসের উত্স থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার পিপলস টেম্পল পর্যন্ত নিয়ে যায়, আর শেষমেশ আপনাকে পরিচয় করিয়ে দেয় গায়ানার জোনস্টাউনের ট্র্যাজেডিতে সেই ইতিহাস খ্যাত ট্রাজেডির সাথে, যেটা আপনাকে নির্মমতা এবং ভয়াবহতার শেষ মাত্রায় নিয়ে ছাড়বে।

ক্লাউডিয়া রোয়ের ‘দ্য স্পাইডার অ্যান্ড দ্য ফ্লাই’

অ্যান রুলের সর্বাধিক পরিচিত রচনা ‘দ্য স্ট্রেঞ্জার বিসাইডস মি’র মতো ক্লোদিয়া রোয়ের ‘দ্য স্পাইডার অ্যান্ড ফ্লাই: এ রিপোর্টার, সিরিয়াল কিলার, এবং মাইন্ডিং অফ মার্ডারার’-এও একজন খুনির সাথে লেখকের ব্যক্তিগত সম্পর্কের গল্প বর্ণনা করা হয়েছিল। তবে এখানে ব্যতিক্রম হলো রুলে নিজে আবিষ্কার করেছিলেন তার বন্ধু একজন খুনি। কিন্তু রুয়ে তার বন্ধু কেন্দাল ফ্রাঙ্কোয়েজের চিনতে পারেনি, যতক্ষণ না পুলিশ বাড়ির দেয়ালে লুকিয়ে থাকা তার শিকারের লাশগুলি খুঁজে পেয়েছিল। একটি হত্যা করতে ফ্রাঙ্কোয়েজের এক পলকেরও কম সময় লাগত। তবে এর নির্মমতা কী ভয়াবহ হতো তা লেখকের স্বীকারোক্তির মধ্যে দিয়ে ফুটে উঠেছে। উপন্যাসটি পড়ে পাঠকেরা একটি অন্ধকার আবেশের মধ্যে পড়ে যাবেন, যেখান থেকে বেরিয়ে আসতে তাদের অনেক দিন লেগে যেতে পারে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর