পাখির জন্য ‘ভাল বাসা, ভালোবাসা’

, ফিচার

মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-09-01 20:15:50

খোর্দ্দ বাউসা, বাঘা, রাজশাহী থেকে: রাজশাহী জেলা শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার ও বাঘা উপজেলা থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নিভৃত একটি গ্রাম খোর্দ্দ বাউসা। এ গ্রামের একটি আমবাগানে বাসা বেঁধেছে কয়েক হাজার শামুকখোল পাখি। গ্রামের মানুষ পরম মমতায় আগলে রেখেছে পাখিগুলোকে। পাঁচ বছর আগে থেকেই বাগানটিতে পাখি বাসা বাঁধলেও এবারই আলোচনায় উঠে এসেছে গ্রামটি।

শামুকখোল সাধারণত বড় বড় গাছের উঁচু ডালে বাসা বাঁধে। কিন্তু পাখিদের আশ্রয়স্থল হিসাবে পরিচিত বট, পাকুড় আর অশ্বত্থ গাছের সংখ্যা আশংকাজনকভাবে কমে যাওয়ায় পাখিগুলো বিকল্প হিসাবে উঁচু উঁচু আমগাছ বেছে নিয়েছে।

হাজার হাজার পাখি বাগানে বিচরণের সময় মল ত্যাগ করে বাগানের পরিবেশ নষ্ট করে। এলাকা দুর্গন্ধময় করে তোলে। পরিচর্যার অভাবে আমের ফলনও কমে যাচ্ছে। সব কিছুই মেনে নিয়েছেন এলাকাবাসী। পাখিগুলোর জন্য যে তাদের রয়েছে অগাধ ভালোবাসা। পাখির জন্য শুধু ভালোবাসা দিয়ে সন্তুষ্ট নয় এলাকাবাসী, তারা পাখির প্রজননের জন্য ভালো বাসাও নিশ্চিত করতে চান।

সরেজমিন খোর্দ্দ বাউসা গ্রামে গিয়ে দেখা যায় বাগানের গাছগুলোতে হাজার হাজার পাখির বসবাস। তাদের কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত পুরো গ্রাম। দূর থেকেই তাদের কিচিরমিচির শব্দ কানে আসে। পাখি সংরক্ষণে গ্রামবাসীর আন্তরিকতার কোন অভাব নেই। তারা পরম মমতায় পাখিগুলোকে আগলে রেখেছেন। গ্রামবাসী আন্তরিকভাবেই চান পাখিগুলো বছরের পর বছর এখানেই থাকুক।

এ বিষয়ে খোর্দ্দ বাউসা উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী সেকেন্দার আলী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, পাখি আমাদের গাছের ক্ষতি করে, এলাকায় গন্ধ ছড়াচ্ছে। তবু আমরা গ্রামবাসী পাখিগুলোকে ভালোবাসি। তাদের কোন ক্ষতি হোক আমরা চায় না। তারা যতদিন চায় আমাদের গ্রামে নিরাপদে থাকতে পারবে। কিন্তু পাখির সংখ্যা অধিক হওয়ায় আমাদের ক্ষতির পরিমাণও কম নয়।

আরেক গ্রামবাসী আজাহার আলী বলেন, এখন পাখিদের রক্ষায় সরকার, হাইকোর্ট, প্রশাসন এগিয়ে এসেছে। এটি একটি ভাল দিক। কিন্তু এর আগে গত ৫ বছর ধরে পাখিরা এখানে বাস করছে। এতে অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমাদের যাতে ক্ষতি না হয় সে বিষয়টিও প্রশাসনকে নজর রাখতে হবে।

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, জুন জুলাই মাসে ডিম দেওয়ার জন্য বাসা বাঁধে শামুকখোল। এরপর নভেম্বরের শেষ দিকে বাচ্চাগুলো উড়তে শিখলে তারা বাসা ছেড়ে হাওরের দিকে চলে যায়। বছরের বাকি সময় তারা সেখানেই কাটায়। আবার প্রজননের শুরুতে তারা তাদের আগের বাসায় ফিরতে শুরু করে।

তিনি আরও বলেন, অন্যান্য পাখি প্রজাতি বিপন্ন হলেও শামুকখোল কিন্তু বিপন্ন প্রজাতি নয়। মানুষ জীব বৈচিত্র্য রক্ষায় আগের চেয়ে অনেক বেশী সচেতন। মানুষের ভালবাসায় গত ১০ বছরে শামুকখোল প্রজাতির পাখির সংখ্যা অনেক বেড়েছে। নিরাপদ আবাস পেলে এ সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে।

এছাড়া জীব বৈচিত্র্য রক্ষা নিয়ে ড. হাসান বলেন, শুধু শামুকখোলের জন্য নয়। জীব বৈচিত্র্য রক্ষায় দেশের সব পাখি ও বন্যপ্রাণীদের জন্যও নিরাপদ আবাসস্থল জরুরী। এ বিষয়ে মানুষের আরও সচেতন হওয়া দরকার।

এ সম্পর্কিত আরও খবর