শহরের কোলাহল থেকে একটু দূরে, খোলা মাঠ, মাঠে বিচ্ছিন্নভাবে দুই-একটা গরু বাঁধা। বিস্তৃত মাঠের মাঝে মাঝে কয়েকটি ঘর। উঁচু-নিচু ও আঁকাবাঁকা মেঠোপথ। নদী, নদীর তীরে একটি ঝুপড়ি ঘর। কাছে কোথাও প্লেন ওঠা-নামার রানওয়ে। প্রায়ই ঘরের উপর দিয়ে সাঁই সাঁই করে উড়ে যায় প্লেন। এ দৃশ্য তারেক মাসুদের রানওয়ে সিনেমার।
রানওয়ে সিনেমার দৃশ্যের মতোই সুন্দর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তুরাগ থানাধীন ৫২নং ওয়ার্ডের একটি অংশ, নাম বৃন্দাবন। বৃন্দাবন এলাকাটি মিরপুর-১২ নম্বর সংলগ্ন। বর্তমানে জায়গাটি রাজউকের নিয়ন্ত্রণাধীন।
বৃন্দাবন জায়গাটি যান্ত্রিক ঢাকা শহরের মধ্যেও আরেকটি অচেনা ঢাকা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এখানে পাখির ডাকে সকালের ঘুম ভাঙে। সকালের সোনালী সূর্য উঁকি দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে কৃষকেরা কুয়াশা মাড়িয়ে বেড়িয়ে পরে কৃষিকাজে। হরেক রকম শীতকালীন সবজির ক্ষেতও রয়েছে। কেউ কেউ গরু বেঁধে দিচ্ছে ঘরের পাশে খালি জায়গায়। সকাল হওয়ার সাথে সাথে ঝুপড়ি ঘরের কোনায় ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা গ্রাম্য খেলায় মেতে ওঠে। অনেকে কাজের সন্ধানে ছুটে চলে। গৃহিণীরা প্রত্যাহিক সংসারি কাজে মনোনিবেশ করেন।
ঝিলের জলে সাদা বকের ঝাঁক দল বেঁধে উড়াউড়ি করে। পথের ধারে নাম না জানা ফুলেরা সময়ে অসময়ে ফোটে। কোথাও কোথাও একটা দু’টি ঝুপড়ি ঘর দাঁড়িয়ে আছে। কোথাও কোথাও এক সঙ্গে তিনচারটা ঘর। শহরের মধ্যেও এক চিলতে গ্রাম এই বৃন্দাবন।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিকটবর্তী হওয়া রানওয়ে সিনেমার মতো মাথার উপর দিয়ে সাঁই সাঁই করে প্লেন উড়ে যায়। দূর থেকে প্লেন ওঠানামা নামার দৃশ্য ভালোভাবে দেখা না গেলেও বোঝা যায়। বিন্দাবনের পাশ দিয়ে উত্তরা, মিরপুর হয়ে মতিঝিল রুটের মেট্রোরেল নির্মাণাধীন রয়েছে।
শহরের মধ্যে এমন দৃষ্টিনন্দন জায়গা হওয়াতে প্রতিদিনই বৃন্দাবনে ছুটে আসে অসংখ্য মানুষ। এখানে ঘুরতে আসা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী গ্লোরিয়া অমৃতা বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, শহরের যান্ত্রিক কোলাহল থেকে খোলামেলা ও মুক্ত পরিবেশের কারণেই এখানে ঘুরতে আসা। এই জায়গাটা মূলত গ্রামের মতো। এখানে আসলে গ্রামের অনুভূতি পাওয়া যায়। বৃন্দাবন জায়গাটাকে শহরের মধ্যে এক চিলতে গ্রামের মতো লাগে। এখানে বসবাস করা মানুষজনও বেশ সহজ সরল ও আন্তরিক।
বৃন্দাবনে চলাচলের জন্য রয়েছে রিকশা, ইঞ্জিনচালিত রিকশা, অটোরিকশা ও লেগুনা। বৃন্দাবনের পূর্ব পাশে বিমানবন্দর, উত্তর-পশ্চিম কোনে দিয়াবাড়ি, পশ্চিমে বিরুলিয়া এবং দক্ষিণে মিরপুর ১২ নম্বর।
এখানে ১০ বছর ধরে বসবাস করছেন আব্দুর রহমান। তিনি বার্তাটোয়েন্টফোর.কমকে বলেন, প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে মানুষ ঘুরতে আসেন। খোলামেলা জায়গা হওয়া ও নিরাপদ এলাকা হওয়ায় সাধারণত মানুষজন আসে। অনেকেই পরিবার ও বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ঘুরতে আসেন। বিন্দাবনে এখন যারা বসবাস করছে তাদের সবাই ভাসমান জনগোষ্ঠী। এদের স্থানীয় জায়গাজমি নেই। খালি জায়গা থাকায় অনেকেই এসে ঘর তুলেছেন। এবং কৃষিকাজ করছে। চলে যেতে বললে অন্য কোথাও চলে যান। নতুন করে ঘর বাঁধেন।