রিয়েল ‘ডন’, অভিনয়ে তারেক রানা ও তানভীর জয়

, ফিচার

জাভেদ পীরজাদা, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট | 2023-09-01 21:41:02

বলিউডের ‘ডন’ মুভি অনেকেই দেখেছেন। বিগবি অমিতাভ বচ্চন বা কিং খান শাহরুখ খানের। কিন্তু সে তো মুভি। বাস্তবে এমন ‘ডন’ আছে কি? কেউ বলেন দাউদ ইব্রাহিমের নাম। কিন্তু তিনি তো এক চেহারার একজনই। ‘ডন’-এর মতন এক চেহারার দুইজন না যে পুলিশ, ইন্টারপোলকে ভিমড়ি খেতে হয় কে আসল ডন? আর এই একই চেহারার দুজনকে মিলাতে গিয়ে বারবার পালায় ‘ডন’। এরকম এক চরিত্রের নাম তারনভীরুল ইসলাম জয়। জন্ম বাংলাদেশে। মোস্ট ওয়ান্টেড শীর্ষ সন্ত্রাসী। সারা দেশে রেড এলার্ট। মাথার দাম ৫০ হাজার টাকা তাকে ধরে দিলে। কিন্তু তাকে পাওয়া যায় না কোথাও।

ওদিকে ভারতে জন্ম তারেক রানা নামের এক যুবকের। ভারতীয় পুলিশ তাকে ধরে। বাংলাদেশ সরকার তাকে তানভীরুল ইসলাম জয় বলেই তাদের হাতে তুলে দিতে বলে। কিন্তু এর আগেই তারেক রানা জামিন পেয়ে যান। কারণ প্রমাণিত হয় তিনি ভারতীয় সিটিজেন। বাংলাদেশের কেউ না। একদিন তারেক রানা কানাডা গিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। সফল ব্যবসায়ী। ওখানকার পুলিশের খাতায়ও মোস্ট ওয়ান্টেড। পুলিশ ধরতে যায়। দেখে তার অফিসে তালা। তারেক রানা পালিয়েছে। চলুন তাকে নিয়ে কলকাতার আনন্দবাজার কী রিপোর্ট করেছে দেখি। রিপোর্টে তাকে বলা হয়েছে বাংলাদেশের ‘দাউদ ইব্রাহিম’।

তানভীর জয়কে ধরিয়ে দিতে পুলিশের বিজ্ঞপ্তি

তারেক রানা আরেকটি নামেও পরিচিত। সেটি হলো তানভীর ইসলাম ওরফে জয়। অবশ্য তারেক রানার দাবি, তিনি কিছুতেই খোন্দকার তানভীর ইসলাম ওরফে জয় নন! তারেক রানা প্রথমে বাংলাদেশ থেকে ভারতে যান। কলকাতা থেকে ২০১৪ সালে কানাডায় যাওয়া তারেক রানা বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। রিপোর্টে বলা হয় বাংলাদেশ-ভারত-কানাডার গোয়েন্দারা ছাড়াও খোদ ইন্টারপোলও নিশ্চিত তাদের জারি করা ‘রেড নোটিশ’ যার বিরুদ্ধে সেই তানভীর ইসলাম জয় এবং কানাডার উদ্যোক্তা তারেক রানা আদতে একই ব্যক্তি।

তানভীর ইসলাম জয় কয়েক ডজন খুন, চাঁদাবাজি, অপহরণ মামলায় অভিযুক্ত। ২০০৫ সালে বাংলাদেশের অনুরোধে ইন্টারপোল ‘রেড নোটিশ’ জারি করে তার বিরুদ্ধে। বাংলাদেশ পুলিশের বরাত দিয়ে আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ পুলিশ জয়ের মাথার দাম রেখেছিল ৫০ হাজার টাকা। বাংলাদেশের কুখ্যাত সেভেন স্টার গ্যাংয়ের একজন সন্ত্রাসী তিনি। বাংলাদেশ পুলিশের বরাত দিয়ে আনন্দবাজারের রিপোর্টে দাবি করা হয়, ২০০৬ সালের ১৪ মে বিদেশে কাজের জন্য বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়ে যাওয়া সংস্থা ‘তুর্কি অ্যাসোসিয়েট’-এর মালিককে ৮ লাখ মার্কিন ডলার চেয়ে ফোন করেন জয়। টাকা না দেওয়ায় ওই সংস্থার অফিসে ঢুকে ছয়জনকে গুলি করে খুন করে তার দলবল। জয় তখন সিঙ্গাপুর থেকে ফোন করে টাকা চেয়েছিলেন।

গত ২০০৭ সালে কলকাতার বাগুইআটির চিনার পার্কের একটি বাসা থেকে জয়কে গ্রেফতার করে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সিআইডি। নিজের নাম পাল্টে তারেক রানা নামে তিনি গা ঢাকা দিয়েছিলেন তখন। ভুয়া নথির মাধ্যমে তারেক রানা নামে তিনি ভারতীয় পাসপোর্ট থেকে শুরু করে ড্রাইভিং লাইসেন্স—সবই জোগাড় করে ফেলেন। ভারতে তার পরিচয় তখন ‘জি ফ্যাশন’ নামে একটি পোশাক সংস্থার মালিক! জয় গ্রেফতার হওয়ার পর জয়কে ফেরত পেতে ভারতকে চিঠি দেয় বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু তাকে বাংলাদেশের কাছে ফেরত দেওয়ার আগে জামিন পেয়ে যান জয়। এর পর জয়ের আর কোনো ‘খোঁজ’ পাওয়া যায়নি। কানাডার অভিবাসন দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে পর্যটক ভিসা নিয়ে সে দেশে তারেক রানা নামে এক ব্যক্তি যান। সেই তারেক রানাকেই ২০১৪ সালে কানাডার অভিবাসন দপ্তর ১০ বছরের ভিসা দেয়। তখন থেকেই তিনি সেখানে আছে। কানাডার টরোন্টোর শহরতলি আয়াক্সে সফল ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।

কানাডায় এসজে ৭১-এর অফিসে তারেক রানা বা তানভীর জয়

তারেকের দাবি, তার জন্ম থেকে বড় হওয়া—সবটাই কলকাতায়। আয়াক্সের অভিজাত এলাকায় তার ‘এসজে ৭১’ সংস্থার বিশাল অফিস রয়েছে। সম্প্রতি ‘এসজে ৭১’-এর ডিরেক্টর তারেক রানার সঙ্গে বাংলাদেশের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড ডন’ তানভীরের সঙ্গে সবরকম মিল খুঁজে পেয়েছে কানাডা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। তানভীর ইসলাম জয় ও তারেক রানার চেহারার হুবহু মিল। তানভীরের বাবার নাম এবং তারেক রানার বাবার নাম একই খোন্দকার নজরুল ইসলাম। তানভীর এবং তারেক রানার জন্মসাল একই। দুজনেরই ১৯৬৭ সালে জন্ম। দুজনেরই দুই পায়ে অস্ত্রোপচার হয়েছে। তবে তারেক রানা আনন্দবাজারকে বলেছে, ‘জীবনে কখনো কোনো অপরাধের সঙ্গে আমার যোগ ছিল না। তানভীর ইসলাম জয়কেও চিনি না।’ কানাডার অভিবাসন দপ্তর একাধিকবার তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এর পর হঠাৎ করেই অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে তারেক রানা ‘পলাতক’ রয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর