আমরা সবাই কমবেশি এই উদ্ভিদটির সঙ্গে পরিচিত। উদ্ভিদটি দেখেছেন অথচ এর পাতা ছুঁয়ে একে লজ্জা প্রকাশ করতে দেখেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এজন্য অনেকে এ উদ্ভিদকে ডাকেন লাজুক লতা নামে। লাজুক স্বভাবের কোন মেয়েকে দেখে আমরা বলি যেন ‘লজ্জাবতী লতা’। এর পাতা স্পর্শ করলেই নববধূর মতো নুইয়ে পড়ে। আর এ জন্যই উদ্ভিদটির নাম লজ্জাবতী। কিন্তু লজ্জাবতী কিভাবে স্পর্শে সাড়া দেয়!
লজ্জাবতী Fabaceae গোত্রের Mimosoideae উপ-গোত্রের বর্ষজীবী, আগাছা ও ওষুধি উদ্ভিদ। এর অনেকগুলো প্রজাতি আছে। সচরাচর আমরা যে লজ্জাবতী উদ্ভিদটি দেখি এর বৈজ্ঞানিক নাম Mimosa pudica. স্থানভেদে এটিকে লজ্জাবতী, লাজুক লতা, লজ্জালু, অঞ্জলিকারিকা বলে। ইংরেজিতে একে Sensitive Plant, Sleepy Plant, Touch-me-not প্রভৃতি নামে ডাকা হয়। এর আদি নিবাস মধ্য আমেরিকার মেক্সিকোতে। তবে এটি বর্তমানে বিশ্বের সব দেশেই দেখতে পাওয়া যায়। একক কলোনি তৈরি করে। অন্য কোনো বীরুৎ উদ্ভিদকে এ কলোনিতে জায়গা দেয় না।
লজ্জাবতীর কাণ্ড কাঁটাযুক্ত, তুলনামূলক শক্ত। এটি বীরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ হলেও মাটিতে গড়িয়ে গড়িয়ে বাড়ে। এর গাঁট থেকে শেকড় বের হয়ে মাটি আঁকড়ে ধরে থাকে। এর পাতা দ্বিপক্ষল, সরু ও লম্বাটে। ৮ থেকে ১২ জোড়া পত্রক থাকে। অনেকটা তেঁতুল পাতার মতো দেখতে। পাতার বোঁটার গোড়ার অংশ বেশ মোটা।
এর ফুলগুলো বেগুনি ও গোলাপি রংয়ের হয়। দেখতে অনেকটা কদম ফুলের মতো গোল, নরম ও সুন্দর। এর পুষ্পদণ্ড ২-৩ ইঞ্চি লম্বা হয়। পত্র বৃন্ত ও লতার সংযোগস্থল থেকে পুষ্পদণ্ড বের হয়। কার্তিক অগ্রহায়ণ মাসে গাছে থোকায় থোকায় ফুল আসে।
লজ্জাবতী কীভাবে স্পর্শে সাড়া দেয় জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, লজ্জাবতী অনুভূতিপ্রবণ উদ্ভিদ, এটি সচেতনভাবেই স্পর্শে সাড়া দেয়। শুধু মানুষের স্পর্শেই নয়, যে কোন ধরনের স্পর্শেই এটি নিজেকে গুটিয়ে নেয়। এছাড়া তাপের প্রভাবে ও সন্ধ্যা বেলা পাতা গুটিয়ে নেয় গাছটি।
তিনি বলেন, লজ্জাবতী পাতার গোড়ার অংশ বেশ ফোলা ও মোটা। এই ফোলা অংশে প্রাচীরময় বড় বড় অনেক কোষ আছে। এই কোষগুলো স্বাভাবিকভাবে যখন পানি ভর্তি থাকে তখন এটি সতেজ ও পাতাগুলো ছড়ানো অবস্থায় থাকে। কিন্তু ছোঁয়া পেলে গাছের পুরো শরীরে মৃদু তড়িত প্রবাহ ছড়িয়ে পড়ে। এর প্রভাবে কোষের পাতলা প্রাচীর ভেদ করে পানি পেছনের দিকে চলে যায় ফলে পাতা পানিশূন্য হয়ে চুপসে যায় এবং বোঁটাটি নীচে নুয়ে পড়ে। নতুন কোন ছোঁয়া না পেলে কোষগুলো আবারও পানিপূর্ণ হয়ে যায়। এবং পাতা ও বোঁটা আগের অবস্থানে ফিরে আসে।
ড. জসীম আরও বলেন, এর অনেক ভেষজ গুণ আছে। তাছাড়া এটি জৈব সার হিসাবেও খুব ভাল। লজ্জাবতীর অপর একটি জাত থাই লজ্জাবতীতে আছে নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম। বিদেশে ভুট্টা ও বাজরার জমিতে এটি জৈব সার হিসাবে ব্যবহার হয়। এছাড়া এর শেকড়ের জন্মানো লালচে রঙের গুটি বা নডিউল বাতাস থেকে নাইট্রোজেন সঞ্চয় করে আমবাগানের মাটিতে সরবরাহ করে। ফলে মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি হয়।