আলবদরের জন্য লজ্জিত এক পাকিস্তানী গবেষক

, ফিচার

জাভেদ পীরজাদা, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট | 2023-09-01 02:20:43

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সহযোগী আলবদর-আলশামস নামের মিলিশিয়া বাহিনীর সদস্যরা ঢাকা এবং দেশের অন্যত্র বাঙালি অধ্যাপক, শিল্পী, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, ও সাংবাদিকদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে।

সেসময় এক হাজারেরও বেশি বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়।

অধ্যাপক জি সি দেব, মুনীর চৌধুরী, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, রাশীদুল হাসান, ড. আনোয়ার পাশা, সিরাজুদ্দীন হোসেন, শহীদুল্লা কায়সার, নিজামুদ্দীন আহমদ, গিয়াসউদ্দিন আহমদ, ডা. ফজলে রাব্বী, ডা. আলীম চৌধুরী, সেলিনা পারভীনসহ আরো অনেককে হত্যা করা হয়।

এদের হত্যা ও পরিকল্পনার ব্যাপারে সব তথ্য ফাঁস করেন একজন পাকিস্তানী গবেষক, যার নাম সেলিম মনসুর খালেদ।

দৈনিক ইত্তেফাকে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের খবর

মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ও ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির নেতা শাহরিয়ার কবির বলেন, “সেলিমের বই থেকে আদালত একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে যেসব আসামী অভিযুক্ত ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে সঠিক তথ্য উপাত্ত তুলে ধরেন। পাকিস্তানের লাহোর থেকে প্রকাশিত হয় এই বইটি ২০০৩ সালে। পাকিস্তানী  গবেষক ও লেখক সেলিম মনসুর খালেদ তার ‘আলবদর’ বইয়ে একাত্তরে আলবদর গঠনের বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন।”

ওই বই উদ্ধৃত করে মুজাহিদের আপিলের রায়ে সর্বোচ্চ আদালত বলেন—“একাত্তরে মেজর জেনারেল আবদুর রহীমের সঙ্গে ঢাকার ছাত্র সংঘের নেতারা দেখা করে আলবদরের বিষয়ে কথা বলেন। জেনারেল রাও ফরমান আলীর সঙ্গে কথা বলে আবদুর রহীম আলবদরের বিষয়টি চূড়ান্ত করেন, একই সঙ্গে লে. কর্নেল আহসান উল্লাহকে আলবদর গঠনের ব্যাপারে নির্দেশনা দেন। ঢাকায় আলবদরের দায়িত্ব দেওয়া হয় ব্রিগেডিয়ার বশীরকে। ২১ মে তিনি ছাত্র সংঘের সদস্যদের ‘আলবদর’ নামকরণ করেন।

আলবদর সদস্য যাদের কাজ ছিল লেখক-বুদ্ধিবীবী-সাংবাদিক হত্যা

আলবদরের কাজ ছিল লেখক-বুদ্ধিজীবী-সাংবাদিকদের হত্যা করা। বাঙালি জাতিকে মেধাহীন করাই ছিল লক্ষ্য। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শারীরিক শিক্ষা কলেজে (একাত্তরের ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট) স্থাপন করা হয়েছিল আলবদর বাহিনীর সদর দপ্তর। একাত্তরের ১৭ সেপ্টেম্বর রাজাকার বাহিনীর প্রধান ও শান্তি কমিটির লিয়াজোঁ কর্মকর্তাকে নিয়ে জামায়াতের তৎকালীন আমির গোলাম আযম মোহাম্মদপুরের শারীরিক শিক্ষা কলেজে রাজাকার ও আলবদর শিবির পরিদর্শন করেন।”

লেখক সেলিম মনসুর খালেদ এমন একজন মানুষ যিনি পাকিস্তানের ঘোর সমালোচনা করেছেন। এজন্য তাকে নওয়াজ শরীফ ও বেনজির ভুট্টোর আমলে দুবার কারাবরণ করতে হয়েছে। থাকেন লাহোরে। তার বাসায় গিয়েছিলেন মুনতাসীর মামুন। গিয়ে দেখেন ড্রয়িংরুমে বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা। নিচে উর্দুতে লেখা, “আলবদরের জন্য বাংলাদেশ আমি লজ্জিত।”

এ সম্পর্কিত আরও খবর