ঢাবিতে ঘাসের হাট: বছরজুড়ে চলে জমজমাট বেচা-বিক্রি!

, ফিচার

তপন কান্তি রায়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 20:43:50

ঢাকা: ভ্যানে সাজানো ঘাসের বস্তা। ভ্যান থেকে ঘাস নামাছে ঘাস আর আবার ভ্যানে তুলছে- কর্মচারীরা। রাস্তার ফুটপাতে দড়ি দিয়ে বাঁধা ৪০ থেকে ৫০টি ঘাসের আঁটি। নিত্যদিনকার এ চিত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের মূলক ফটকের উল্টো পাশের ফুটপাতের।

ঢাবি এলাকায় ঘাসের এ হাট গড়ে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধের দুই-এক বছর পরে। দীর্ঘ প্রায় ৪৭ বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে এই ঘাসের হাট চলছে। ঘাস বিক্রেতারা বলছে, মুক্তিযুদ্ধের পর কয়েকজন মিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এখানে ঘাস বিক্রি শুরু করেছিলেন।যারা প্রথম ঘাস বিক্রি করত, তাদের সকলের বাড়ি জামালপুর ও শেরপুরে। এখনও যারা ঘাস ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তাদেরও সকলের বাড়ি জামালপুর ও শেরপুরে।

এই হাটে বছরজুড়ে চলে ঘাস বেচা-বিক্রির জমজমাট ব্যবসা। গৃহপালিতপশু গরু, ছাগল, ভেড়া, ঘোড়া ও খরগোশের খাদ্য কিনতে দূর-দুরান্ত থেকে ক্রেতারা ছুটে আসেন এই হাটে। ঢাকা শহরে কিছু বাঁধা ক্রেতা আছে, প্রতিদিন ভ্যানে করে বাসায় পৌঁছে দেয় তারা। এখানে ১৫ থেকে ২০ জন ঘাস কাটার কর্মচারী আছে। কিছু মৌসুমী কর্মচারী আছে, কয়েক দিন ঘাসের ব্যবসা করে আবার এলাকায় গিয়ে কাজ করে থাকে।

প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার ঘাস বিক্রি হয়। ছোট ঘাসের বস্তা ১০০ টাকা আর বড় বস্তা ২০০ টাকা দরে। দড়ি দিয়ে বাঁধ প্রতি আঁটি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ বস্তা আর ৪০ থেকে ৫০টা আঁটি বিক্রি হয়।

এই ঘাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন মাঠসহ গাবতলী, উত্তরা, মুগদা, নন্দীপাড়া, মধুমতি চক, কমলাপুর, মতিঝিল, গোপীবাগ ও কোরানীগঞ্জ থেকে সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও ঢাকা শহরের বিভিন্ন বাগান, নদীর বাঁধ বিল থেকে ঘাস কেটে আনা হয়।

ঘাস কাটার নিয়োজিত এক কর্মচারী বলছেন, ঢাকা বিভিন্ন মাঠ থেকে ঘাস কেটে আনি। আর মালিক বিক্রি করে। ক্রেতাদের পৌঁছে দেয়। দিনে ৭০০টাকা মজুরি পান। এছাড়াও অনেকে নিজেরা ঘাস কেটে নিজেরাই বিক্রি করছে। এতে তাদের দৈনিক প্রায় ১৩০০ টাকার কম বেশি আয় হয়।

ঢাবির ঘাসের হাটের প্রতিষ্ঠাতারা অনেকেই মারা গেছেন। বেঁচে থাকা প্রতিষ্ঠাতাদের একজন আছেন আবু জাফর (৬৭)। বর্তমানে তিনি এই হাট পরিচালনা করেন।  দীর্ঘ ৪৭ বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঘাস বিক্রি করে আসছেন শেরপুরের শ্রীবরদীর এ ব্যবসায়ী।

২০ বছর বয়সে কাজ খুঁজতে এসে ঢাকা শহরে বিভিন্ন মাঠ থেকে ঘাস কেটে তা বিক্রি করে জীর্বিকা উপার্জনের পথ বেচে নেন আবু জাফর। এই ঘাস বিক্রির আয় দিয়ে আটজনের পরিবার চলছে তার। এখন তিনি আর মাঠে ঘাস কাটতে যান না। নিজে দিনমজুর রেখেছেন। এখন শুধু পুরোনো ক্রেতাদের কাছে ঘাস পৌঁছে দেন।

কবে থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঘাসের ব্যবসা করছে নির্দিষ্ট করে বলতে না পারলেও আবু জাফর বার্তা২৪কমকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের দুই-এক বছর পরে প্রায় ৪৭/৪৮বছর ধরে এখানে ঘাস বিক্রি করে আসছি।

কাজের খোঁজে ঢাকা এসে ঘাস কেটে বেচা বিক্রির শুরু করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ২০ বছর বয়সে কাজ খুঁজতে আসি। কিন্তু অন্য কাজের করেছিলাম। তখন ঢাকা শহরে ঘাসের চাহিদা ছিল। তখন ঢাকার মানুষ গরু গাভীর জন্য ঘাস কাটার জন্য লোক রাখত। এইসব কারণে ঢাকা শহরে ঘাস বিক্রি শুরু করি। শুরু থেকে আয় হয়েছে। এখনও চলার মতো টাকা আসে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর