ডিপফেক ভিডিওর ফাঁদ

, ফিচার

সাফাত জামিল, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট | 2023-08-24 04:56:23

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর কল্যাণে ফেক বা ভুয়া ভিডিওর সাথে মোটামুটি সবাই পরিচিত। তাহলে ডিপফেক ভিডিও জিনিসটা কী? মূলত আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সহায়তায় একটি সাধারণ ভিডিওর মধ্যকার কথাগুলোর সুনিপুণ বদলে সৃষ্টি হয় হুবহু কিন্তু ভুয়া ভিডিও ক্লিপ। একসময় হলিউডে সিআইএ বা অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রোপ্যাগান্ডা ছড়াবার দৃশ্যে ব্যবহৃত হওয়া এই প্রযুক্তি এখন সফটওয়্যার হিসেবে ডাউনলোড করে অবসরে ফেক ভিডিও বানাতে পারছেন যে কেউ।

শখের বশে সেলিব্রিটিদের চেহারা পর্নস্টারদের শরীরে বসানো আর রাজনীতিবিদদের দিয়ে মজার সব কথোপকথন সৃষ্টির মধ্যেই এতদিন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল এই ডিপফেক। তবে যে কোনো জরুরি আক্রমণের সতর্কবার্তা, কারো সংসার ভেঙে দিতে ভুয়া সঙ্গমদৃশ্য কিংবা আসন্ন কোনো জাতীয় নির্বাচন বানচাল করতে ভিডিও বা অডিও ডিপফেক করাটাও এখন বেশ সহজ ব্যাপার হবে।

ডিপফেক ভিডিওর ফাঁদে পড়ছেন অনেকেই

গভীর পর্যবেক্ষণ এবং ভুয়া বা ফেক-এর যুগলবন্দীতে এসেছে ‘ডিপফেক’ শব্দটি। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের এই প্রক্রিয়া বিভিন্ন অ্যালগোরিদমের ওপর ভিত্তি করে নিজে থেকেই নিতে পারে বিচক্ষণ সব সিদ্ধান্ত। এর সহায়তায় বানানো ভিডিও কোনো নকল বার্তা বা বিষয়কে সত্য হিসেবে প্রদর্শন করতে ব্যবহৃত হচ্ছে।

গভীর পর্যবেক্ষণের পদ্ধতি টার্গেটে থাকা মানুষটির ছবি, ভিডিও, কথা বলার ভঙ্গি এবং আচরণ বিভিন্ন কোণ থেকে পর্যালোচনা ও নকল করে সৃষ্টি করতে পারে প্ররোচনামূলক জাল কন্টেন্ট। এরপর জিএএন প্রযুক্তির সহায়তায় কন্টেন্টটি হয়ে ওঠে নির্ভুল এবং বাস্তবসদৃশ।

ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতার ডিপফেক

ঠিক কতখানি ভয়ঙ্কর এই ডিপফেক? বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ভালোই উদ্বেগ তৈরি হয়েছে এই ডিপফেক কেন্দ্র করে। ফ্লোরিডার রিপাবলিকান সিনেটর ও ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী মার্কো রুবিও এই ডিপফেককে মনে করছেন আধুনিক বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্রের দারুণ বিকল্প। “একটা সময় যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকির মুখে ফেলতে গোটা দশেক যুদ্ধবিমান, পারমাণবিক অস্ত্র আর দুরপাল্লার মিসাইলের প্রয়োজন হতো। আর আজ দরকার শুধু ইন্টারনেট সংযোগ এবং ভালোমানের ভুয়া ভিডিও বানাবার সামর্থ্য ও দক্ষতা, যা কিনা একটি নির্বাচন প্রক্রিয়া তছনছ করে দেওয়া থেকে শুরু করে পুরো দেশকে ঠেলে দিতে পারে সংকটের দিকে”—বলছিলেন রুবিও। এমআইটি টেকনোলোজি রিপোর্ট বলছে, ডিপফেক বানাতে সক্ষম কোনো যন্ত্র পুঁজিবাজার কিংবা নির্বাচনে অস্থিরতা সৃষ্টিতে গুজব রটনাকারীদের জন্য হবে এক দুর্দান্ত অস্ত্র।

প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতিতে সাধারণ ভিডিওগুলোয় ডিপফেকের উপস্থিতি ভিডিওটি ব্যঙ্গাত্মক নাকি আসল—তা নির্ধারণে বেশ সমস্যা সৃষ্টি করছে। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা যেভাবে সৃষ্টি হচ্ছে এই ডিপফেক, একইভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারাই তা শনাক্তকরণের ব্যবস্থা হচ্ছে। ফেসবুক এবং মাইক্রোসফটের মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যে ডিপফেইক ভিডিওচিত্র শনাক্ত এবং তৎক্ষণাৎ সরিয়ে ফেলতে জোরালো উদ্যোগ নিয়েছে। এই দুই টেক জায়ান্ট এ বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ে গবেষণার উদ্দেশ্যে ভুয়া ভিডিওর একটি বড় তথ্যভাণ্ডার তৈরির ঘোষণা দেয়।

ডিপফেক ভিডিওর ফাঁদে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট

সাইবার নিরাপত্তা তছনছ করতে সক্ষম এই ডিপফেক প্রতিহত করতে এরই মধ্যে আলোর মুখ দেখেছে ডিপফেক অ্যাকাউন্টিবিলিটি নামের একটি বিল। তাতে বলা হয়েছে, যে কোনো ডিপফেক কন্টেন্টে স্পষ্ট জলছাপ এবং লিখিত বিবরণী না থাকলে তা দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। তবে ভুয়া ভিডিওর বাতাসের বেগে ভাইরাল হওয়াটা কতখানি ঠেকাতে পারবে এরকম আইন, সে প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে।

তাই কোনো বার্তা বা সংবাদ জানার সাথে সাথেই বর্তমানে তা বিশ্বাস করার জো নেই। মাথায় রাখতে হবে সংবাদটির আসল উৎস এবং সরবরাহকারী ব্যক্তি সম্পর্কিত তথ্য। বার্তাটি অন্যান্য উৎসের সাথে মিলিয়ে যাচাই করে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিত হওয়ার পর ক্লিক করা যাবে ‘শেয়ার’-এ!

এ সম্পর্কিত আরও খবর