শুভ বড়দিন

, ফিচার

ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2023-12-11 17:12:26

'মঙ্গল দীপ জ্বেলে, অন্ধকারে দুচোখ আলোয় ভরো প্রভু। প্রভু যারা বিশ্বাস করেনা তুমি আছো, তাদের মার্জনা করো প্রভু।' একত্ববাদের বাণী ধারণ করে আলো হাতে ক্ষমার অমলিন ধ্বনি উচ্চারণ করেছিলেন খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিস্ট। অন্ধকারে বিপন্ন বিশ্বে ছড়িয়ে ছিলেন আলোকরশ্মি।

২৫ ডিসেম্বর যিশুর জন্মদিন। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে আনন্দময়, উৎসবমুখর দিন আজ। আজ বড়দিন বা ক্রিসমাস ডে।

যিশুর জন্মও ছিল অলৌকিক এবং আলোকিত ঘটনা। আলোক শিখার মতো দীপ্তিতে বেথেলহামে মা মেরির (মরিয়ম) কোলে এসেছিলেন যিশুখ্রিস্ট। তাকে নাজারাতের যিশুও বলা হয়। মুসলমান সম্প্রদায়ের কাছে তিনি নবী হযরত ঈসা আলাইহি ওয়াস সালাম নামে সম্মানিত, যিনি ইঞ্জিল বা বাইবেল নামক ঐশ্বরিক কিতাবের বাণী ও নির্দেশনা প্রচার করেছিলেন।

ত্যাগ, ক্ষমা, করুণার বাণী তিনি প্রচার করেছেন জীবনভর। বলেছেন, 'পাপীকে নয়, পাপকে ঘৃণা কর'। তাপিত, পীড়িত মানুষকে তিনি দেখিয়েছেন মুক্তির পথ।

খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিস্ট বা হযরত ঈসা (আ.) নবীর জন্মোৎসব উপলক্ষে পালিত বড়দিনের আবেদন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে অপরিসীম। কয়েকদিন আগে থেকেই শুরু হয় 'ক্রিসমাস ঈভ' বা বড়দিন আয়োজনের উদ্যোগ। উপহার বিতরণ, ক্রিসমাস ট্রি সাজানো, আলোকসজ্জা, গির্জায় প্রার্থনা, পারিবারিক ও সামাজিক পুনর্মিলন, পানাহার ইত্যাদিতে মুখরিত হয় খ্রিস্টান জনপদ ও জনজীবন।

বুড়ো সান্তাক্লজ আসেন ঝোলা ভর্তি চকলেট, কেক, খাবার নিয়ে। শিশুদের মধ্যে স্বর্গীয় ভালোবাসায় বিলানো হয় এসব সামগ্রী। অনাবিল আনন্দে উদ্ভাসিত হয় বড়দিনের প্রতি ক্ষণ।

ক্রিসমাসের উৎসবে প্রেম, ত্যাগ ও ক্ষমার প্রতিমূর্তি যিশুর অম্লান বাণীসমূহ পুনরুচ্চারিত হয় মানুষের নৈতিক জীবনকে আলোকিত করার প্রত্যয়ে। হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি, স্বার্থপরতার অন্ধকার থেকে আলোর দিকে আহ্বান করা হয় মানুষকে। অবক্ষয়ে আকীর্ণ মানবতার মুক্তির জন্য ধ্বনিত্ব প্রতিধ্বনিত্ব হয় সেই চিরায়ত উক্তি, 'লেট দেয়ার বি লাইট'।

ক্রিসমাসের এই মহৎ ধর্মতাত্ত্বিক দিকের শিক্ষায় আনন্দ-উৎসবমুখরতায় বড়দিন পালনের সময় আমরা ফিরে যাই হাজার বছর পেছনে। কারণ যিশুর জন্মের ভিত্তিতে গণনা শুরু হয়েছে ইংরেজি বর্ষ। ফিলিস্তিনে জন্ম নেওয়া যিশুর ধর্মমতের ভিত্তিতেই পরবর্তীকালে পুনর্গঠিত হয়েছে সমগ্র ইউরোপ। ইউরোপ-আমেরিকা তথা সমগ্র পশ্চিমা জগৎ গ্রহণ করেছে খ্রিস্টের মতাদর্শ।

যিশু নিজে কখনো ইউরোপে গমন করেন নি। কিন্তু শুধু ইউরোপ নয়, তার ধর্মমত সারা বিশ্বের অন্যতম প্রধান ধর্মে পরিণত হয়েছে। একটি কল্যাণকামী ও একেশ্বরবাদী ধর্মরূপে পরিগণিত হয়েছে খ্রিস্টবাদ।

খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান ধর্মীয় উৎসব বড়দিন বা ক্রিসমাস বিশ্বের সকল দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হয় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসবমুখরতায়। পুনরুচ্চারিত হয় ত্যাগ, ক্ষমা, প্রেম ও মানবিকতার বাণী। শপথ নেওয়া হয় শান্তি ও কল্যাণময় বিশ্ব গড়ার। সংঘাত ও হানাহানিতে আকীর্ণ বিশ্বের রক্তাক্ত প্রান্তরে শান্তি ও সৌহার্দ্যের অবাবিল পরিবেশ সৃষ্টিতে যিশুখ্রিস্টের মত ও পথকে ধারণের প্রতীতি ও প্রত্যয় ঘোষণা করেন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সদস্যরা।

বার্তা২৪.কম'র পক্ষ থেকে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রতি বড়দিনের শুভেচ্ছা। শুভ বড়দিন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর