আজকের সূর্যোদয় ছুঁয়ে সূর্যাস্তের লালিমা লগ্নে বিদায় নিয়েছে ২০১৯ সাল। মহাকালের অতল গর্ভে চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেছে আস্ত বছরটি। আর কোনও দিন ফিরে আসবেনা চলে যাওয়া বছরের দিন ও রাত্রিগুলো ।
ফিরে না এলেও নানা ঘটনায় মনে থাকবে ২০১৯ সালকে। আনন্দ, বেদনার ঘটনাপ্রবাহে পৃথিবীর ইতিহাসে আলোচিত হবে ২০১৯ সালের কোনও কোনও প্রসঙ্গ, বার্তা২৪.কম ফিরে দেখেছে সেইসব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও বিষয়কে।
২০১৯ সালের বিদায় কেবল একটি বছরের অবসান নয়, একটি দশকেরও সমাপ্তি। ২০০০ সালে সূচিত দ্বিতীয় সহস্রাব্দের দ্বিতীয় দশকটিও বিদায় নিল ২০১৯ সালের সঙ্গে সঙ্গে। ২০২০ সালে শুরু হবে আরেকটি নতুন দশক।
মহাকালের যাত্রাপথে ২০১৯ সাল এমন কিছু বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ছাপ রেখেছে, যা সম্পূর্ণ আলাদা। এই আলাদা হওয়ায় ২০১৯ সাল ২০১৮ বা ২০১৭ সালের মতো নয়, হবে না ২০২০ সালের মতোও। মানুষের জীবনে যেমন একেকটি বছরের স্বতন্ত্র ও আলাদা তাৎপর্য ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে, পৃথিবীর ইতিহাসেও একেকটি বছর আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল।
২০১৯ সাল বহন করেছিল অতীত থেকে পাওয়া ভালো ও মন্দের উত্তরাধিকার। দাঙ্গা, হাঙ্গামা, সংঘাত, রক্তপাত, বাস্তুচ্যুতি যেমন পেয়েছিল, তেমনি পেয়েছে আশাবাদের ছোঁয়া। পেয়েছে মানুষের নানামুখী অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথ প্রকম্পিত করার প্রত্যয়।
ঘটনার সূত্রপাত গত শতাব্দীতেই ঘটেছিল। স্নায়ুযুদ্ধের পর অবসান হয়েছিল সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের। দ্বিমেরু পৃথিবী হয়েছিল একমেরুর ক্ষমতার ক্ষেত্র।
পৃথিবীর মানুষ আশা করেছিল নতুন এক গণতান্ত্রিক পরিবেশ আসবে শান্তির সুবাতাস ছড়িয়ে। আসেনি। জাতিগত, ধর্মগত লড়াই এসেছে। বিশ্বায়নের পাগলা হাওয়ায় বাণিজ্যিক দখলদারিত্ব ও সম্পদ লুটপাটের কালো অধ্যায় এসেছে। মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকায় রক্তপাতের নেপথ্যে তেল ও অন্যান্য সম্পদ লুণ্ঠিত হয়েছে। চলেছে বাণিজ্যযুদ্ধ আর পারমাণবিক উত্তেজনা।
বছরের পর বছর এ ধারা চলতে চলতে চলে এসেছে ২০১৯ সালেও। কখনও কমে বা কখনও বেড়ে সে ধারাই চলেছে। রক্ত, মৃত্যু, লুণ্ঠনের তাণ্ডবতার স্বাক্ষী হয়েছে পৃথিবী। পৃথিবী হাহাকার করেছে স্থিতি, শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য। এসব তো আসেইনি, বরং কোথাও কোথাও চরমপন্থা, রক্ষণশীলতা, উগ্র মতাদর্শ বৃদ্ধি পেয়েছে। খোদ আমেরিকায় দক্ষিণপন্থীদের দাপট দেখা গেছে। দেখা গেছে আরও অনেক দেশেই সংখ্যালঘু ধর্মীয় ও জাতিগোষ্ঠীর নিধনযজ্ঞ।
পরিবেশ বিপর্যয় হয়েছে মারাত্মকভাবে। এবছরে ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার হয়েছে 'ক্লাইমেট ইমার্জেন্সি', গত বছর (২০১৮) যা ছিল 'টক্সিক'। পৃথিবীর হৃৎপিণ্ড আমাজানের দাবদাহ এবং জলবায়ুর চরম ভারসাম্যহীনতা এ সত্যটি প্রমাণ করেছে যে, পৃথিবী আসলেই পরিবেশগত জরুরি অবস্থায় নিপতিত হয়েছে। অনেকগুলো শহর পানিশূন্যতা আর বায়ু দূষণের কবলেও পড়েছে।
২০১৯ সালে এমন হতাশার মধ্যেও আশাবাদের শিখা হয়ে জ্বলেছে মানুষের কণ্ঠস্বর। পরিবেশ, অধিকার, মন্যুষত্বের পক্ষে বিশ্বমানবতার জোরালো চিৎকার ২০১৯ সালের বিশেষ অর্জন। অনেক বিপর্যয়ের পরেও কিছু কিছু অর্জনের জন্য চলে যাওয়া ২০১৯ সালকে পৃথিবীর মানুষ মনে রাখবে।
বিদায় ২০১৯ সাল। তবু মনে থাকবে তোমাকে। বেদনার অশ্রুতে কিংবা আনন্দের ঝিলিকে তুমি (২০১৯ সাল) ফিরে আসবে স্মৃতি হয়ে মহাকালের ইতিহাসের দেয়ালে।