মাথার ভেতরে থাকা এলভিস প্রিসলি কে ছিলেন

, ফিচার

সানজিদা আমীর ইনিসী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট | 2023-09-01 22:18:36

‘মাথার ভেতরে ছিল এলভিস প্রিসলি, খাতার ভেতর তোমার নাম’—অঞ্জন দত্তের ম্যারি অ্যান গানের পঙক্তিটির মাধ্যমে অনেকের মাথায় এলভিস প্রিসলি ঢুকে বসে আছেন। কে এই এলভিস প্রিসলি?

রক অ্যান্ড রোল ঘরানার কিংবদন্তী ছিলেন এলভিস প্রিসলি। তার গান শুধু নয়, পোশাক, ব্যক্তিত্ব সবকিছু মিলয়েই তিনি অনন্য। বিংশ শতাব্দীর জনপ্রিয় গায়কদের মধ্যে অন্যতম রকস্টার এলভিস প্রিসলি। সবচেয়ে বহুল বিক্রিত অ্যালবামের সংগীত-শিল্পীদের মধ্যেও তিনি অন্যতম। তাকে ‘দ্য কিং’ নামেও অভিহিত করা হয়।

তিনি বাণিজ্যিকভাবে পপ, দেশীয়, ব্লুজ এবং গসপেলসহ অনেকগুলো ঘরানার সংগীতে বাণিজ্যিকভাবে সফল ছিলেন। তিনটি গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন, ৩৬ বছর বয়সে গ্র্যামি লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন। সংগীতে একাধিকবার ‘হল অব ফ্রেম’ খ্যাতি পেয়েছেন।

তাকে ‘দ্য কিং’ নামেও অভিহিত করা হয়

জন্ম মিসিসিপির টুপেলোতে। গরিব পরিবারের সন্তান ছিলেন। জীবিকার জন্য ট্রাকও চালিয়েছেন।

প্রিসলির ছিল সৃষ্টিকর্তার প্রতি অসীম বিশ্বাস। এই বিশ্বাস থেকে মাঝেমধ্যে পরিবারের সাথে চার্চে যেতেন। মা-বাবার সাথে চার্চেই গান গাওয়ার শুরু। এই কারণে গসপেল মিউজিকের প্রভাব পাওয়া যায় তার গানে।

তেরো বছর বয়সে মেম্ফিস শহরে চলে আসেন পরিবারের সাথে। সান রেকর্ডস নামে একটি সংগীত বিষয়ক প্রতিষ্ঠানে ১৯৫৪ সালে গান গাওয়ার মাধ্যমে তার সংগীতজীবন শুরু হয়। কান্ট্রি, রিদম অ্যান্ড ব্লুজ ধরনের গান দিয়ে যাকে বলে প্রিসলি সম্মোহিত করে ফেলেন স্টুডিওর মানুষদেরকে।

ব্ল্যাক মিউজিকের সাথে শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের পরিচয় করিয়ে দেন প্রিসলি। এলভিসের জন্ম এবং বেড়ে ওঠার সময়টাতে আমেরিকায় বর্ণবাদ ছিল চরম। এসব তার মনে দাগ কেটেছিল।

তরুণ শ্বেতাঙ্গদের কাছে প্রিসলি সহজে পৌঁছে যান তার গান নিয়ে। স্টেজে উন্মাতাল পারফরম্যান্স তাকে কিশোর থেকে তরুণদের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমেরিকার বর্ণবাদী সমাজ, চার্চ, মিডিয়া এলভিস প্রিসলিকে মেনে নিতে পারছিল না। তাতে অবশ্য তার কিছু মাথাব্যথা ছিল না।

তৎকালীন আমেরিকান বর্ণবাদ তার মনে দাগ কেটেছিল

১৯৫০, এরপর ৬০, প্রিসলির প্রভাব ছিল সর্বগ্রাসী। ৩১টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। স্টেজে নিজে যেমন নাচে গানে মেতে উঠতেন তেমনি দর্শকরাও পাগল হয়ে উঠত তার জন্য। ডাকটেইল হেয়ারকাট, ওপেন নেক শার্ট তাকে সেই সময়ের বাকিদের থেকে আলাদা করেছিল।

১৯৫৫-এর ১৩ মে। ফ্লোরিডার জ্যাকসনভিলের বেজবল পার্কে প্রিসলির একটি কনসার্ট ছিল। কনসার্ট শেষে এলভিস বলেন, “মেয়েরা তোমাদের সাথে ব্যাকস্টেজে দেখা হবে।” মেয়েরা তখন এলভিস প্রিসলি বলতে পাগল। তারা হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল তার সাথে দেখা করবার জন্য। কাছাকাছি যারা পৌঁছেছিল, তারা প্রিসলির জামাকাপড় টেনে ছিঁড়ে ফেলছিল। আর, দুর্ভাগা যারা তার কাছে পৌঁছাতে পারেনি, তারা প্রিসলির সাদা লিঙ্কন কন্টিনেন্টাল গাড়ির শরীরজুড়ে তাদের ফোন নাম্বার লিখে দিয়ে গিয়েছিল নিজেদের আকুলতা বোঝাতে।

তার নারীভক্তদের সামলাতে দিশেহারা পুলিশ বাহিনী

রক এন রোল, রিদম অ্যান্ড ব্লুজ আমেরিকান তরুণদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ১৯৫০-এর দিকে, এর মূল কারণ ছিলেন প্রিসলি। তিনি তার গানের মাধ্যমেই সামাজিক বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন। আমেরিকায়ও তখন নতুনের উত্থান চলছে। বর্ণবাদবিরোধী মনোভাবের তরুণেরা জেগে উঠছিল, অর্থনৈতিকভাবেও সাবলম্বী হয়ে উঠছিল। এলভিস তাদের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠলেন।

এলভিস নিজেই বলেছেন, “মানুষ নতুন কিছু খুঁজছিল, আর আমি ঠিক সেই সময়েই হাজির হই। আমি ভাগ্যবান ছিলাম।”

এ সম্পর্কিত আরও খবর