শীতের জীর্ণতা সরিয়ে জেগে উঠেছে প্রকৃতি। পাতা ঝরার গানে এসেছে নতুন প্রাণ! প্রকৃতির বাতাবরণে লেগেছে রঙের সাজ। দখিনা বাতাস, ঝরা পাতার নুপুরের নিক্কন, কোকিলের কলগীতি, শিমুল পলাশ, অশোকের ডালে রঙের আবির জানিয়ে দিচ্ছে ‘বসন্ত এসে গেছে…’।
বসন্ত মানে নতুন প্রাণের কলরব। মৃদু বাতাসে গাছের শাখায় সুবজ কচি পাতা জানিয়ে দিচ্ছে প্রকৃতিতে নতুন কিছুর আগমন। এই আগমন বার্তা আনন্দ আর উচ্ছ্বাস মুখরতায় মানুষের মন-প্রাণকেও ভরিয়ে তোলে।
ঋতুরাজ বসন্তকে বলা হয় তারুণ্যের ঋতুর। প্রকৃতির এ মিলন মেলায় অকারণে সুখের শিহরণ জাগায় মনে! প্রকৃতির সাজ সাজ রবে মন রাঙিয়ে গেয়ে উঠে ‘তোমার অশোকে কিংশুকে/ অলক্ষ্য রঙ লাগলো আমার অকারণের সুখে…।
কচি পাতায় আলোর নাচনের মতোই বাঙালির মনেও লাগে বসন্তের দোলা। তাই বসন্তের প্রথম দিনটি উদযাপন করতে বাসন্তী সাজে নগরে-গ্রামে সবখানে তারুণ্যের চঞ্চল মন কবি গুরুর ভাষায় বসন্তকে অভ্যর্থনা জানাবে ‘আজি বসন্ত জাগ্রতদ্বারে/তব অবগুণ্ঠিত কুণ্ঠিত জীবনে/করো না বিড়ম্বিত তারে।’
বাংলা বর্ষপঞ্জির সংশোধনে আজ শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) একই দিনে পহেলা ফাগুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। একে তো ছুটির দিন, অন্যদিকে দুটি বিশেষ উপলক্ষ। উৎসবপ্রিয় বাঙালির ঘর ছেড়ে বের হতে আর কী লাগে? নিসর্গ বিবর্জিত মানুষের বসনে, ভূষণে আজ লাগবে বসন্তের ছোঁয়া। ভালোবাসার পরশে ঢেউ উঠবে হৃদয় সমুদ্রেও।
সুরেলা এ দিনেই রমণীরা খোপায়ফুল গুঁজে-বাসন্তী রাঙা শাড়ি পরে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত সুশোভিত করে বসন্তের পূর্ণতা এনে দেবে। রঙিন মন একে অপরের হাত ধরে গেয়ে ওঠে ‘ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান/ আমার আপন হারা প্রাণ/আমার বাধন ছেঁড়া প্রাণ’।
রাজধানীতে ১৪০১ বঙ্গাব্দে প্রথম ‘বসন্ত উৎসব’ উদ্যাপনকরার রীতি চালু হয়। সেই থেকে প্রতিবছর জাতীয় বসন্ত উৎসব উদ্যাপন পরিষদ বসন্ত উৎসব আয়োজন করে আসছে।এ ছাড়া তরুণ-তরুণীরা বাংলা একাডেমি আয়োজিত একুশের বইমেলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, শাহবাগ, চারুকলা চত্বর, পাবলিক লাইব্রেরি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ধানমন্ডি লেক, বলধা গার্ডেন মাতিয়ে রাখবে সারা দিন।
বসন্তকে বরণ করে নিতে নাচ, গান ও কবিতা আবৃত্তিসহ নানা বর্ণাঢ্য আয়োজন করেছে জাতীয়বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ। সকাল ৭টায় চারুকলার বকুলতলায় শুরু হবে এই উৎসব।