নিজ জন্মভূমিতেই অবহেলিত ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ

, ফিচার

কান্ট্রি ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 22:45:17

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: জেলায় নিজ জন্মভূমিতেই অবহেলিত রয়েছেন সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ। তার স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য নিজ জন্মভূমিতেই নেই কোনো উদ্যোগ। জেলার নবীনগরের শিবপুরের খাঁ বাড়িতে অবস্থিত আলাউদ্দিনের নিজ ভিটার অবস্থা বেহাল হলেও সংরক্ষণে নেই কোনো উদ্যোগ। বিভিন্ন সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে নবীনগরে একটি গবেষণা কেন্দ্র করার কথা থাকলেও বাস্তবায়নের দেখা মেলেনি আজো। তাই এলাকাবাসীর দাবি অচিরেই সুরের এই সম্রাটের বাড়িটি সংরক্ষণ ও এই এলাকায় একটি সঙ্গীত গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করার।

১৮৬২ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ। তার বাবার নাম সুদু খাঁ, মায়ের নাম সুন্দরী বেগম। বড় ভাই ফকির (তাপস) আফতাব উদ্দিন খাঁর কাছে সঙ্গীতের হাতে খড়ি তার। সুরের সন্ধানে কিশোর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে যাত্রাদলের সঙ্গে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়াতে শুরু করেন। এখান থেকেই জারি, সারি, বাউল, ভাটিয়ালি, কীর্তন প্রভৃতি গানের সঙ্গে পরিচিতি লাভ করেন। তারপর কোলকাতায় যান সঙ্গীতে দীক্ষা নেওয়ার জন্য। ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দের পর তিনি ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ব্রিটিশ সরকার তাকে ‘খাঁ সাহেব’ উপাধিতে ভূষিত করেন।

আলাউদ্দিন খাঁ ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের সঙ্গীত আকাদেমি পুরস্কার পান। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে আকাদেমির ফেলো নির্বাচিত হন। ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে ‘পদ্মভূষণ’ ও ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে ‘পদ্মবিভূষণ’ এবং ১৯৬১ সালে তিনি বিশ্বভারতী কর্তৃক দেশি ‘কোত্তম’ উপাধিতে ভূষিত হন। ভারতের দিল্লি ও বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে আজীবন সদস্যপদ দান করেন।

শান্তি নিকেতনে আমন্ত্রিত অধ্যাপক হিসাবে কিছুকাল অধ্যাপনা করেন। তিনি বাঁশি, পিকলু সেতার ম্যাডোলিন ব্যাঞ্জু, সানাই, নাকাড়া, তবলা ও সরোদসহ আরও বিভিন্ন যন্ত্র বাজানো শেখেন। সঙ্গীত জীবনে তিনি বড় ভাই ফকির আফতার উদ্দিন, ননো গোপাল, অমৃত লাল দত্ত, লবু সাহেব, অমর দাস, হাজারী ওস্তাদ, ওস্তাদ আহাম্মদ আলী খাঁ, তানসেন বংশীয় বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ ওয়াজির খাঁসহ আরও অনেকের কাছে তিনি দীর্ঘ ত্রিশ বছর সঙ্গীত কলাকৌশল শেখেন। ১৯৭২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ভারতের মাইহারের মদিনা ভবনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আশি দশকের গোড়ার দিকে কুমিল্লার তৎকালীন জেলা প্রশাসক শিবপুর এসে দেশি বিদেশি সঙ্গীত পিপাসুদের জন্য আলাউদ্দিন পল্লীতে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। যেখানে স্থান পাওয়ার কথা ছিল ফকির (তাপস) আফতাব উদ্দিনের মাজার, সুর সম্রাটের নামে মিউজিয়াম, সঙ্গীত একাডেমি, পাঠাগার, মিলনায়তন, মুক্তমঞ্চ, পিকনিক কর্ণার ও অতিথিশালা। তবে তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। ১৮৯৮ সালের ৭ মার্চ ওস্তাদজির নিজ হাতে নির্মিত শিবপুরের একমাত্র স্মৃতিবাহক ঐতিহ্যবাহী মসজিদটিও তেমনভাবে সংস্কার হচ্ছে না। শৈশবের আবাসস্থল কাচারি ঘরটি এখন নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে পুকুরে।

স্থানীয় বাসিন্দা লাখু খাঁ জানান, সরকারের প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য তিনি ২২ শতক জমি পরবর্তী সময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসকের নামে দলিল রেজিস্ট্রি করে দেন। কিন্তু প্রকল্পটি আর বাস্তবায়িত হয়নি। আর কখনো তা হবে কিনা তাও বলতে পারছেন না তিনি।

স্থানীয় শিক্ষক কামাল হায়দার মাশরেকী জানান, নিজ খরচে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর একটি ভাস্কর্য তৈরি করলেও সেটি এখন পর্যন্ত শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থাপন করা হয়নি। ফলে ভাস্কর্যটি বাড়িতে পড়ে থাকতে থাকতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে নবীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মাসুম বলেন,‘ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ শুধু নবীনগর কিংবা ব্রাহ্মণবাড়িয়ারই গর্ব নয় তিনি সারা বাংলাদেশের গর্ব। তাকে নিয়ে অবশ্যই কিছু করার পরিকল্পনা আছে। আমি নিজেই এসব বিষয় নিয়ে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবগত করব। তার বাড়ি, মসজিদ ও পৈত্রিক ভিটা সংরক্ষণের জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর