পাখিগুলো দেখে মনটা শান্ত হয়ে যায়

, ফিচার

কান্ট্রি ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 19:02:25

ঠাকুরগাঁও: পাখিগুলো দেখে মনটা শান্ত হয়ে যায়। প্রতিদিন বিকেলে এখানে অনেকেই আসেন শুধুমাত্র এই বাবুই পাখিগুলো দেখতে। কেউ কেউ ছবিও তুলে নিয়ে যায়। আমরা গ্রামবাসী সকলেই এই পাখিগুলো দেখে রাখি। এ কারণে এখান থেকে কেউ পাখি শিকার করতে পারে না। পাখিগুলো আমাদের এলাকার সম্পদ। আমরা ওদের বুক দিয়ে আগলে রাখি।

শুক্রবার (৩ আগস্ট) সকালে বাবুই পাখির বাসার ছবি তোলার সময় কথাগুলো বলছিলেন ঠাকুরগাঁও হরিপুর উপজেলার কাঠালডাঙ্গী এলাকার রমজান আলী।

রমজান আলীর কথাগুলো শুনতে বেশ ভালোই লাগছিল। সংখ্যায় কম হলেও অনেক দিন পর এভাবে পাখিগুলো দেখে প্রাণ জুড়িয়ে গেল। আর কবি রজনীকান্ত সেনের সেই কবিতাটি মনে পড়ল।

“বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই, কুঁড়ে ঘরে থাকি কর শিল্পের বড়াই, আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পড়ে, তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে।”

“বাবুই হাসিয়া কহে, সন্দেহ কি তায়? কষ্ট পাই, তবু থাকি নিজের বাসায়। পাকা হোক, তবু ভাই, পরের ও বাসা, নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর খাসা।”

একটি সময় গ্রাম বাংলায় প্রচুর দেখা যেতো বাবুই পাখির বাসা। কালের বিবর্তন ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে আগের মতো এখন আর এ পাখির শৈল্পিক বাসা চোখে পড়ে না। হারিয়ে যাচ্ছে কারিগর এই পাখির শিল্পকর্ম। এর মাঝেও হঠাৎ চোখে পরে তাদের বাসাগুলো।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঠাকুরগাঁও জেলা থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে হরিপুর উপজেলা। এই উপজেলার কাঠালডাঙ্গী, ভাতুরিয়া ও রামপুর গ্রামে তাল-নারিকেল, বট-পাকুর গাছে দেখা মেলে মনোমুগ্ধকর এই বাবুই পাখির বাসা। পাখিগুলো দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে এসেছেন অনেক পাখিপ্রেমীরা।

বাবুই পাখি সাধারণত মানুষের কাছাকাছি বসবাস করে। মানুষের হাতের নাগালের মাত্র পাঁচ অথবা ছয় ফুট উপরে গাছে বাসা বাঁধে। তবে পৃথিবীর বুকে প্রকৃতির এক অপরূপ সুন্দর মনোরম দৃষ্টিনন্দন বাবুই পাখির বাসা আজ বিলুপ্তির পথে।

কথা হয় রংপুর থেকে পাখি দেখতে আসা জাহানা আকতারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঠাকুরগাঁও বেড়াতে এসেছি। পরে শুনলাম এই এলাকায় নাকি বাবুই পাখি আছে। তাই বাবা-মা ছোট ভাইকে নিয়ে চলে আসলাম হরিপুরে। দীর্ঘদিন পরে এভাবে পাখি দেখলাম। পাখিগুলো দেখে অনেক ভালো লাগছে। বিশেষ করে ভালো লাগলো তাদের বাসা গুলো।’

স্থানীয় বাসিন্দা আলতাফ হোসেন জানান, এই গ্রামগুলোতে নিরাপদ আশ্রয় পেয়ে এখানে বাবুই পাখি বাসা তৈরি করে। প্রকৃতির নৈসর্গিক এই দৃশ্য উপভোগের জন্য প্রতিদিন অনেকেই আসছে। তবে একটা সময় ছিল যখন অনেক পাখি দেখা যেত। বর্তমানে আর বেশি পাখি চোখে পড়ে না। কারণ অনেকেই এই পাখিগুলোকে শিকার করতে চায়।

ঠাকুরগাঁওয়ের পাখিপ্রেমী রেজাউল হাফিজ রাহী জানান, বর্তমানে বাবুই পাখি নেই বললেই চলে। এরপরেও মাঝে মধ্যে তাদের দেখা মেলে। এই পাখিগুলো খুব সুন্দর বাসা বাঁধে বলে এরা "তাঁতি পাখি" (Weaver Bird) নামেও পরিচিত। এদের বাসার গঠন বেশ জটিল আর আকৃতি খুব সুন্দর হয়ে থাকে। এই পাখিগুলো যাতে আমাদের এখানে নির্ভয়ে থাকতে পারে সে জন্য স্থানীয়দের সচেতন হতে হবে। কারণ এই পাখির আগমনেই ওই এলাকার যেমন সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় তেমনি এরা প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায়ও সহযোগিতা করে।

এ ব্যাপারে হরিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম.জে আরিফ বেগ জানান, সীমান্ত এলাকাগুলিতে প্রাচীন ও উঁচু গাছ বেশি থাকার কারণে এই অঞ্চলে পাখির সংখ্যা উল্লেখ করার মতো।

পাখি শিকারের ব্যাপারে তিনি জানান, পাখি শিকার করা দণ্ডনীয় অপরাধ। তাই সকলকে পাখি শিকার না করার আহ্বান জানান তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর