বাইরে করোনা, ঘরে উদ্বেগ-অবসাদের বিরুদ্ধে লড়াই

, ফিচার

ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2023-12-28 18:04:30

কেউ একমাস, কেউ পনের দিন ঘরবন্দী। জরুরি প্রয়োজনীয় পেশার লোকজন ছাড়া বিশ্বের প্রায় সকল দেশের সিংহভাগ মানুষই চলে গেছেন সেলফ কোয়ারিন্টাইনে। মেনে চলছেন সঙ্গরোধ ও সামাজিক দূরত্ব। করোনাভাইরাস ঠেকাতে নেওয়া হয়েছে এমন পদক্ষেপ।  

পৃথিবীর সামাজিক মানুষের জীবনযাপন প্রণালীতে এমন অভূতপূর্ব স্বেচ্ছা-বিচ্ছিন্নতার অভিজ্ঞতা আগে কখনোই হয়নি। ঘোরতর যুদ্ধের সময়ও মানুষ দলবদ্ধ হয়ে লড়েছে, সামাজিক যোগাযোগ করেছে। এবার সেটাও সম্ভব হচ্ছেনা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ করোনা মহামারীতে মৃত্যুর পাশাপাশি মানুষের মধ্যে পেনিক, ট্রমা, চরম আতঙ্কের বিষয়গুলোকেও সামনে এনেছেন। বলছেন, করোনা স্বাস্থ্যগত ও অর্থনৈতিক প্রবল ক্ষতির পাশাপাশি মানুষের মধ্যে বিরাট বড় মনস্তাত্ত্বিক ক্ষত সৃষ্টি করেছে। ঘরবন্দী মানুষ অবসাদ, আতঙ্ক, উদ্বেগ, বিষন্নতায় আক্রান্ত হচ্ছে।

বার্তা২৪.কম'র জন্য কলকাতা থেকে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আজিজুল বিশ্বাস একটি ভিডিও সাক্ষাৎকারে ঘরবন্দী অবস্থায় আলস্য ও অবসাদ ঝেড়ে ফেলে জীবনমুখী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। বলেছেন, ইন্টারনেট ও সাইবার স্পেসকে শিক্ষা, গবেষণা ও সৃষ্টিশীল চর্চায় ব্যবহার করার জন্য।

অধ্যাপক আজিজুল বিশ্বাস নিজেও ঘর থেকেই নিয়মিত ইউটিউবে লেকচার দিচ্ছেন। গুগল স্কলার ও সাইবার ক্লাসরুমে তৎপর রয়েছেন। শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন। দিনের উল্লেখযোগ্য কর্মঘণ্টা তিনি ঘরে বসেও সচল ও সক্রিয় রয়েছেন।

এই তো গেলো শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কাজের প্রসঙ্গ। কিন্তু যারা শিক্ষার সঙ্গে জড়িত নন তাদের বেলায়? তারা তো অধিকাংশ ক্ষেত্রে দীর্ঘসময় বেকার বসে থাকছেন ঘরবন্দী হয়ে। নিঃসন্দেহে তারা বিরূপ পরিস্থিতির ফলে একটি মানসিক আঘাতে সম্মুখীন হচ্ছেন ঘরের নিরাপদ পরিবেশে বসে থেকেও।

 

যারা কাজের লোক ও বাইরের জীবনে নানা ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট, তারা চট করে ঘরে বসে গেলে একটা দুশ্চিন্তা,  হতাশা, অবসাদ আসবেই, যা থেকে মানসিক ভীতি ও বৈকল্য হওয়া স্বাভাবিক। বিশেষজ্ঞরা বাইরের করোনা আতঙ্কের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মধ্যে সঞ্চারিত এই ভীতিকর একাকীত্বের পরিস্থিতির মনস্তাত্ত্বিক কুফল  নিয়েও চিন্তিত।

হয়ত অনেকেই ঘরবন্দী অবস্থায় একাকীত্বের সময় টিভি, মুভি দেখে সময় কাটাচ্ছেন। এতে বিপদ আরও বাড়ছে। দীর্ঘ সময় একটানা টিভি বা কম্পিউটার নিয়ে থাকার ফলে শরীরবৃত্তীয় ক্ষতি হচ্ছে অনেক। বাড়ছে ডায়াবেটিস, রক্তচাপের সমস্যা। স্থবির লোকদের কমছে রোগ প্রতিরোধে ক্ষমতা।  উদ্বেগ আর শারীরিক স্থবিরতার মারাত্মক বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় ঘরবন্দী মানুষেরাও বাইরের করোনার মতোই গৃহাভ্যন্তরে বিপদের সম্মুখীন।          

ফলে বিশেষজ্ঞরা নানা রকম পরামর্শ দিচ্ছেন। ঘরবন্দী মানুষদের অচল হয়ে বসে না থেকে কিছু না কিছু কাজ করতে বলছেন। বিশেষত ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধের সক্ষমতা বাড়ানোর প্রতি সবিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এজন্য, উদ্বেগহীন থাকা জরুরি। জরুরি প্রয়োজনীয় ঘুমের।  

বিশেষজ্ঞরা বয়স্কদের ছাদে বা বারান্দায় কিছু সময় সকালের রোদে থাকতে বলেছেন। এর ফলে শরীরে ভিটামিন ডি বেড়ে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। আরও বলেছেন ভিটামিন সি বেশি খেতে। এতেও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। সম্ভব হলে খাবারের তালিকায় নিয়মিতভাবে চিনি ছাড়া দই রাখতেও বলেছেন, যা থেকে মিটবে প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়ামের চাহিদা।

যেহেতু ঘরে থাকায় মানুষের মুভমেন্ট কমে গেছে, তাতে শরীরে চর্বি জমবে বেশি। তাই হাল্কা শরীরচর্চা করতেই হবে আর শরীর ভারী করে যেসব কার্বোহাইড্রেট খাবার, সেগুলো কমিয়ে বাড়াতে হবে প্রোটিন ইনটেক। প্রোটিনের ক্ষেত্রে প্রাণিজের বদলে উদ্ভিদজাত বিভিন্ন ধরনের ডাল খাওয়া বাড়ানো যেতে পারে, যদি কিডনি বা ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা না থাকে।

করোনাভাইরাসের কারণে যে ঘরবন্দী সঙ্গরোধের পর্যায় চলছে, তা কতদিন প্রলম্বিত হয়, বলা মুশকিল। তাই, ঘরে থাকার পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যকর ও বিপদমুক্ত থাকার যাবতীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। ভয়ে, আতঙ্কে, উদ্বেগে কুঁকড়ে গেলে ঘরে থেকেও বিপদগ্রস্ত হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। তখন বাইরের করোনা বিপদ থেকে বাঁচলেও ঘরের মধ্যে তৈরি হওয়া বিপদের কারণে আক্রান্ত হতে হবে।

বাইরের করোনার ফলে বিশ্বব্যাপী ঘোরতর সঙ্কুল পরিস্থিতিতে ঘরবন্দী অবস্থাতে সক্রিয় ও শারীরিক-মানসিকভাবে  নিরোগ থাকা জরুরি।  বাইরের চলমান করেনা বিরোধী যুদ্ধের ধারাবাহিকতায় ঘরে ঘরে উদ্বেগ, ভীতি, আলস্য ও অবসাদের বিরুদ্ধে শারীরিক-মানসিক লড়াইও অব্যাহত রাখতে হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর